May 18, 2024
জাতীয়

প্রিয়া সাহার বক্তব্য বিভ্রান্তিমূলক ও নীতি গর্হিত : বারকাত

 

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক

বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের বিষয়ে নিজের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে প্রিয়া সাহা যার গবেষণা থেকে তথ্য পাওয়ার কথা বলেছেন, সেই অর্থনীতিবিদ আবুল বারকাতই তার বিরুদ্ধে ‘তথ্য বিকৃতির’ অভিযোগ করেছেন।

গতকাল সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তিনি বলেন, একজন সমাজ গবেষক হিসেবে আমি নিশ্চিত হতে চাই যে প্রিয়া সাহা আমার নাম উলে­খপূর্বক যেসব বিভ্রান্তিমূলক ও নীতি গর্হিত বক্তব্য দিয়েছেন তিনি অতি দ্রুত তা প্রত্যাহার করবেন।

দেশজুড়ে আলোচনার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত প্রিয়া সাহা ইউটিউবে প্রকাশিত এক ভিডিওতে নিজের ব্যাখ্যা হাজির করার পর বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি আবুল বারকাতের এই প্রতিক্রিয়া এলো।

দলিত স¤প্রদায় নিয়ে কাজ করা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা‘শারি’র পরিচালক প্রিয়া সাহা বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক। ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে ওয়াশিংটনে আয়োজিত এক সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে গত ১৭ জুলাই হোয়াইট হাউজে যান তিনি।

সেখানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে তিনি বলেন, বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা মৌলবাদীদের নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। প্রায় ৩ কোটি ৭০ লাখ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান নিখোঁজ (ডিজঅ্যাপিয়ার্ড) হয়েছেন। তারা যেন দেশে থাকতে পারেন, সেজন্য ট্রাম্প যেন সহায়তা করেন।

তার ওই বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় বিভিন্ন মহলে। সরকারের তরফ থেকে বলা হয়, বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ‘ক্ষুণ্নের উদ্দেশ্যেই’ প্রিয়া সাহা ওই ধরনের ‘বানোয়াট ও কল্পিত অভিযোগ’ করেছেন। দেশে ফিরলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলেও ঘোষণা দেন একজন মন্ত্রী।

এরপর একজন সাংবাদিককে প্রিয়ার সাক্ষাৎকার দেওয়ার একটি ভিডিও রোববার তার এনজিও শারির ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশ করা হয়; সেখানে তিনি নিজের বক্তব্যের একটি ব্যাখ্যা দেন।

প্রিয়া সাহা বলেন, সরকারের আদমশুমারি প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী দেশভাগের সময় বাংলাদেশের জনসংখ্যার ২৯.৭ শতাংশ ছিল ধর্মীয় সংখ্যালঘু স¤প্রদায়ের নাগরিক। ওই হার এখন নেমে এসেছে ৯.৭ শতাংশে। এখন দেশের মোট জনসংখ্যা প্রায় ১৮০ মিলিয়ন। সংখ্যালঘু জনসংখ্যা যদি একই হারে বৃদ্ধি পেত, তাহলে অবশ্যই যে জনসংখ্যা আছে, এবং যে জনসংখ্যার কথা আমি বলেছি ক্রমাগত হারিয়ে গেছে, সেই তথ্যটা মিলে যায়।

প্রিয়া সাহা বলেন, সরকারের ওই পরিসংখ্যানের ওপর ভিত্তি করেই অধ্যাপক আবুল বারকাত ২০১১ সালে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলেন, যেখানে বলা হয়েছিল, প্রতিদিন ৬৩২ জন হিন্দু দেশ ছাড়ছেন।

২০১১ সালে ওই গবেষণার সময় আবুল বারকাতের সঙ্গে সরাসরি কাজ করেছেন বলেও বলে দাবি করেন এই এনজিওকর্মী। কিন্তু বারকাত বলছেন, প্রিয়া সাহা কখনও তার সহ-গবেষক, গবেষণা সহযোগী অথবা গবেষণা সহকারী ছিলেন না। আর তার বক্তব্যের সঙ্গে গবেষণায় পাওয়া তথ্য-উপাত্তেরও কোনো মিল নেই।

আমার হিসেবে প্রায় পাঁচ দশকে (১৯৬৪ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত) আনুমানিক ১ কোটি ১৩ লক্ষ হিন্দুধর্মাবলম্বী মানুষ নিরুদ্দিষ্ট হয়েছেন (উৎস: আবুল বারকাত, ২০১৬, বাংলাদেশে কৃষি-ভূমি-জলা সংস্কারের রাজনৈতিক অর্থনীতি, পৃ:৭১)। অর্থাৎ আমি কোথাও ‘৩ কোটি ৭০ লাখ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান নিখোঁজ রয়েছেন’ এ কথা বলিনি। উপরন্তু তিনি কোথাও বললেন না যে আমার গবেষণা তথ্যটির সময়কাল ৫০ বছর – ১৯৬৪ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত।

বারকাত বলেছেন, ওই গবেষণা প্রতিবেদনে তিনি ২০১১ সালের সরকারি আদমশুমারির তথ্যের ভিত্তিতে ১৯০১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত মোট জনসংখ্যায় বিভিন্ন ধর্মগোষ্ঠির আনুপাতিক হারই কেবল উলে­খ করেছেন।

 

 

 

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *