May 3, 2024
লেটেস্টসম্পাদকীয়

প্যারেন্টিং: পারিবারিক শিক্ষার গুরুত্ব অনুধাবন করে কাজ করতে হবে

পরিবার হলো পৃথিবীর প্রাচিনতম প্রতিষ্ঠান। একজন মানুষ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এবং সাধারণত, সেখানেই তিনি বেড়ে ওঠেন এবং পরিশেষে, সাধারণত, সেখানেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। দেশ, কাল ও সমাজভেদে, পরিবারের আকার ও আকৃতি বিভিন্নরকম হতে পারে। কিন্তু পরিবারের গুরুত্ব সর্বত্র একইরকম। কোনো কোনো সমাজে পরিবারের ধারণা হুমকির মধ্যে পড়ে গেলেও, এর প্রয়োজনীয়তাকে কেউই পুরোপুরি অস্বীকার করেন না। এটাই পরিবারের সার্বজনিন গ্রহণযোগ্যতা। আমরা চলার পথে, কারো সামাজিক আচরণ অসৌজন্যমূলক দেখলে, সাথে সাথে তার পরিবারকে তার জন্য দোষারপ করি; বিরক্ত হয়ে বলি, নির্ঘাৎ তার ফ্যামিলি ভাল নয়, যে পরিবার থেকে সে উঠে এসেছে সেখানে সে ভাল শিক্ষা পায়নি। আবার যদি কাউকে খুব ভাল ব্যবহার করতে দেখি, খুব মানবিক ও উদার আচরণ করতে দেখি, তখন সেই লোকের সূত্রে, তার বাবামায়েরও প্রশংসা করি, পরিবারকে সাধুবাদ দেই। এ থেকে, একটা বিষয় খুব পরিস্কার। পরিবারের সদস্যদের সামাজিকভাবে বেড়ে ওঠার পেছনে বাবামায়ের একটা ভূমিকা আছে। নিষ্ঠার সাথে পালন করার মত কিছু কর্তব্য আছে।

সচেতনতার সাথে বাবামায়ের পক্ষ হতে, সন্তানকে তাই পরিকল্পিতভাবে সুশিক্ষা দিতে হবে। পরিতাপের বিষয় হলো, সবসময় বাবামা সেটা পারেন না, তাঁদের অগোচরে বা গোচরে সন্তান বখে যায়। ২০২১ সালের প্রথম দিকে ঢাকাস্থ কলাবাগানের একটি মেয়েকে ধর্ষণপূর্বক হত্যা করা হয়েছিল। ভিকটিমের পরিবারের পক্ষ হতে, তখন, দিহান নামের একটি ছেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের জন্য মামলা করা হয়। দূর্ভাগ্য আর কাকে বলে! কলাবাগান এলাকায় যে মেয়েটি এই নির্মম পাশবিক ঘটনার শিকার হয়েছিল, দিহান ছিল তার সহপাঠি। কতখানি কুশিক্ষার শিকার ও সামাজিকভাবে কতটা বিকলাঙ্গ হলে, এমন পাশবিক কান্ড কারো দ্বারা হতে পারে! বখে যাওয়া দিহানের পরিবার নিয়ে তখন লেখালেখি হয়। বলা হয়, দিহানের পারিবারিকভাবে বেড়ে ওঠার পরিবেশটা স্বাভাবিক ছিল না। ভাল ছিল না।

আমরা এটাই বলতে চেয়েছি, সন্তানকে পরিবারের মধ্যে ভাল পরিবেশ দিতে হবে। তাকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে হবে। পরিবারের কর্তা হিসেবে বাবাকে বা মাকে সারাক্ষণ সন্তানের উপর নজর রাখতে হবে। সে কি করছে, কোথায় যাচ্ছে, কার সাথে মিশছে, এটা দেখতে হবে। আজকাল স্কুল কলেজের শিক্ষার উপর পুরোটা ছেড়ে দিলে বাবা মা ভুল করবেন। সমাজের মূল্যবোধ যেখানে ধসে পড়ছে, সর্বত্র যেখানে বিশৃঙ্খলা, সেখানে স্কুল ও কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে শুধু সদাচার আশা করে ও তাদের উপর ভরসা করে বাবামা তার দায়িত্ব শেষ করতে পারেন না। যদি তারা সেটা করেন, তাহলে, বড় ধরণের সমস্যা তৈরি হয়ে যেতে পারে, সেটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে। পরিবারের মধ্যে রুটিনমাফিক সবাই মিলে বসা, আলাপ আলোচনা করা। কোথাও একসাথে বেড়াতে বের হওয়া। পরিকল্পিতভাবে, উঠতিবয়সী বাচ্চাকাচ্চাকে সদাচার ও নৈতিকতা শেখানো, ভাল একটি বই নিজে পড়া ও তাকে পড়তে দেয়া, এসব বাবামায়ের জন্য দরকারি কাজ। আজকাল, অনেক বিষয়ে জ্ঞান ও তথ্য নাগালে চলে এসেছে ইন্টারনেট ও গুগলের মত সার্চ ইঞ্জিনের কল্যাণে। সন্তান নিষিদ্ধের দিকে ধাবিত হওয়ার আগে, বাবামা নিজে সার্চ করে ভাল ভাল সাইট সম্পর্কে তাকে ধারণা দিতে পারেন। এ কাজটা বাবামাকেই উদ্যোগী হয়ে করতে হবে। তাহলে সন্তান বুঝবে, কোন সাইট তার জন্য ভাল, কোনটা নয়। এটা যদি না করা হয়, তাহলে দেখা যাবে, নিজ থেকেই একটা বাজে অভ্যাস সন্তান করে ফেলেছে আর সেটা সময়ের আবর্তে স্বভাবে দাড়িয়ে গেছে। তখন আপনি ইচ্ছে করলেও তাকে আর সহসা সরিয়ে আনতে পারবেন না। সুতরাং, এক্ষেত্রে আগে থেকে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। রাতের বেলা কোনোভাবেই মোবাইল নিয়ে সন্তানকে বিছানায় যেতে দেওয়া যাবে না। Parenting the Screenager: A Practical Guide for Parents of the Modern Child শিরোনামের একটি বইয়ে রিচার্ড হগান গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন আজকালকার পিতামাতাকে। বিস্তর পড়াশুনা ও দীর্ঘ অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি বইটি লিখেছেন। প্যারেন্টিং এর উপর এ জাতীয় বই সন্তানকে সাথে নিয়ে পড়া যেতে পারে। সবার জন্য সেখানে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা আছে। সবাই মিলে পরিবারের মধ্যে একটা ভাল পরিবেশ রচনা করতে হবে।

শেয়ার করুন: