May 19, 2024
জাতীয়

পোশাক কারখানা তদারকিতে গঠিত হচ্ছে আরএসসি

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক

তৈরি পোশাক কারখানা সংস্কার নিয়ে মালিকপক্ষ ও ইউরোপীয় ক্রেতাদের জোট অ্যাকর্ডের মধ্যে দীর্ঘদিনের বিরোধ ঘুচিয়ে স্থায়ী উদ্যোগ হিসাবে গঠিত হতে যাচ্ছে আরএমজি সাসটেইনেবল কাউন্সিল (আরএসসি)।

অ্যাকর্ডের সঙ্গে বিজিএমইএর একটি সমঝোতা চুক্তির অংশ হিসাবে নতুন এই তদারকি প্রতিষ্ঠান যাত্রা শুরু করবে বলে তৈরি পোশাক খাত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক বলেছেন, আরএসসি গঠন হলে অ্যাকর্ডের বাকি কাজগুলো বুঝে নিয়ে তারাই সংস্কার কাজ চূড়ান্ত করবে। এ মুহূর্তে বাংলাদেশের বাইরে অ্যাকর্ডের নির্বাহী পরিচালক রব ওয়েজের কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তাকে ইমেইল করা হলেও কোনো উত্তর মেলেনি।

বিজিএমইএর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ৩ সেপ্টেম্বর সোমবার ঢাকায় আরএসসি গঠন নিয়ে একটি পরামর্শ সভা হবে। সেখানে বিজিএমইএ প্রতিনিধি ছাড়াও ব্র্যান্ড, ক্রেতা ও অ্যাকর্ডের প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন। সেখানে নেওয়া সিদ্ধান্তের আলোকে গঠন করা হবে আরএসসি।

এই কাজে সংশ্লিষ্ট একজন বিজিএমইএ কর্মকর্তা বলেন, নতুন এই তদারকি কর্তৃপক্ষের মধ্যে পোশাক শিল্প মালিকদের প্রতিনিধিদের পাশাপাশি ব্র্যান্ড ও ক্রেতাদের প্রতিনিধি, দেশ-বিদেশি শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা থাকবেন।

২০১২ সালে তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ড এবং ২০১৩ সালে সাভারের রানা প্লাজা ধসের পর বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের কর্মপরিবেশ নিয়ে ক্রেতা দেশগুলোর মধ্যে উদ্বেগ দেখা দেয়।

তার পরিপ্রেক্ষিতে কারখানা পরিদর্শনে ইউরোপীয় ২২৮টি ক্রেতার সমন্বয়ে গঠিত হয় অ্যাকর্ড অন ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি ইন বাংলাদেশ, যা সংক্ষেপে অ্যাকর্ড নামে পরিচিতি পায়। ২০১৮ সালের মে মাসে অ্যাকর্ডের কার্যকারিতার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল।

একই সময়ে একই লক্ষ্যে গঠিত আমেরিকার ক্রেতাদের জোট অ্যালায়েন্স নির্দিষ্ট সময়ের পর ফিরে গেলেও কাজ শেষ হয়নি বলে আরও তিন বছর সময় বাড়ানোর উদ্যোগ নেয় অ্যাকর্ড, যাতে আপত্তি তোলে বাংলাদেশের কারখানাগুলো। মালিক ও শ্রমিকপক্ষের বিরোধিতার কারণে অ্যাকর্ডের মেয়াদ বৃদ্ধির ওই উদ্যোগ আদালতে গড়ায়।

পরে গত ৮ মে অ্যাকর্ড ও বিজিএমইএ যৌথভাবে আরও ২৮১ কর্মদিবস কাজ করতে একটি সমঝোতা চুক্তিতে সই করে। গত ১৯ মে এই সমঝোতা চুক্তির ভিত্তিতে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ উভয়পক্ষকে কাজ চালিয়ে যাওয়ার আদেশ দেয়।

এরপরও অ্যাকর্ড ও কারখানা মালিকদের মধ্যে বিরোধ দূর হয়নি। সংস্কারের নামে অ্যাকর্ড মালিকদের হয়রানি করছে এবং রপ্তানিতে বাধা সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ মালিকপক্ষের।

বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক বলেন, অবকাঠামো, বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা ও অগ্নিনিরাপত্তার বিষয়গুলো অ্যাকর্ড দেখভাল করে। অবকাঠামো ও বৈদ্যুতিক নিরাপত্তায় ছাড়পত্র দিলেও অগ্নিনিরাপত্তার বিষয়ে এসে নানারকম টালবাহানা দেখাচ্ছেন অ্যাকর্ডের পরিদর্শকরা।

তারা একবার পরিদর্শনে এসে সংস্কারের একটি মানদণ্ড ঠিক করে দিচ্ছেন। সেই অনুযায়ী কাজ সম্পন্ন করার পর দ্বিতীয়বার এসে সেই মানদণ্ড ঘুরিয়ে দিচ্ছেন। এভাবে একটি কারখানায় সংস্কার কাজ বার বার পেছাচ্ছে। এতে মালিকপক্ষের খরচ বাড়লেও চুড়ান্ত সনদ মিলছে না। উল্টো অনেক সময় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কারখানার রপ্তানি আদেশ।

বেশ কয়েকজন কারখানা মালিকের অভিযোগ, সংস্কারের নামে এখন অগ্নি নিরাপত্তা বিষয়ক ইউরোপীয় সরঞ্জাম বিক্রির বাজার বড় করছে অ্যাকর্ড। নইলে তারা বার বার নিজেদের দেওয়া সিদ্ধান্ত নিজেরা পরিবর্তন করবে কেন?

বিজিএমইএর তথ্য অনুযায়ী, ১৬০০ কারখানার মধ্যে গত ৬ বছরে মাত্র ২০০ কারখানা নিরাপত্তা সনদ পেয়েছে। বাকিদের কাজ ৮০ শতাংশ হলেও নতুন নতুন শর্তের কারণে তারা সনদ পাচ্ছে না। গত আগস্ট মাসে বিভিন্ন কারণে রপ্তানি আদেশ বন্ধ হয়েছে চারটি কারখানার।

 

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *