May 3, 2024
লেটেস্টসম্পাদকীয়

পয়েন্ট অব নো রিটার্ন ও আমাদের ভবিষ্যৎ প্রসঙ্গে

আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশসমূহের রাজনৈতিক কালচারে সবসময় কয়েকটি কথা ঘুরে ফিরে আলোচিত হয়ে থাকে, যেমন: ‘পয়েন্ট অব নো রিটার্ন’ ‘উইনার টেকস অল’ ইত্যাদি। ইদানিং রাজনৈতিক ভাষ্যকারগণ যখন বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের টকশোতে আলোচনা করছেন, তখন তাদের মধ্যে এসব শব্দ আলোচিত হচ্ছে। বিশেষ করে যে শব্দটা এখনকার টকশোর ন্যারেটিভ পত্রিকার উপসম্পাদকীয় কলাম দখল করে আছে, সেটি ‘পয়েন্ট অব নো রিটার্ন’। রাজনীতি বিজ্ঞানের সংজ্ঞানুযায়ী এই শব্দগুচ্ছের অর্থ হলো, বিবাদমান রাজনৈতিক দলগুলির এমন একটি জায়গায় উপনিত হওয়া, যেখান থেকে তারা নিজেদের বিবাদকে শান্তিপূর্ণ উপায়ে আর সমাধান করতে পারবেন না।

সত্যি কথা বলতে কি, সাধারণ মানুষের মধ্যে এখন এই আশংকাটাই প্রবল হয়ে উঠেছে যে, রাজনীতি সম্ভবত: সংঘাতের দিকেই যাচ্ছে। দৈব কোনো ঘটনা না ঘটলে এই বিবাদ অবধারিতভাবে সংঘাতে রুপ নেবে। কোনো কোনো রাজনীতিবিদের শ্লোগানে, সংলাপে এমনটি শোনাও যাচ্ছে; যেমন: বাংলাদেশ যাবে কোন্ পথে ফয়সালা হবে রাজপথে।

কী আশ্চর্য কথা! একটি দেশের স্বাধীনতার বয়স পঞ্চাশ বছরের উর্দ্ধে, দেশে একটি পার্লামেন্ট সচল আছে, সেখানে রাজনৈতিক দলগুলির উপস্থিতি আছে। অথচ, রাজনীতিবিদেরা তাদের বিবাদকে শান্তিপূর্ণ উপায়ে মিমাংসা করতে পারছেন না। তারা আলাপআলোচনার মাধ্যমে নিজেদের মতপার্থক্য দূর করতে পারছেন না। জাতীর জন্য এর চেয়ে দূর্ভাগ্য আর কী হতে পারে!

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দুটি রাজনৈতিক দলের একটি হলো বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদি দল ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ। বিএনপি, আপাত:দৃষ্টিতে, এখন এক দফার আন্দোলনে আছে। তাদের কথা এই সরকারকে পদত্যাগ করতেই হবে এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। অন্যদিকে আওয়ামীলীগেরও সাফ কথা: সংবিধানে যেভাবে নির্বাচনের কথা বলা আছে, সেভাবেই নির্বাচন হবে। দলটির সাধারণ সম্পাদক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এই সেদিন এ কথা পরিস্কারভাবে জানিয়েও দিয়েছেন (শনিবার, ১২ আগস্ট, ২০২৩)। জাতীয় শোক দিবস ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি পরিস্কারভাবে বলেছেন, ‘বিএনপি নির্বাচনে আসলে আসুক, না হলে তাদের যা মন চায় তারা তা করুক’।

এটাই হলো সেই পরিস্থিতি, রাজনীতিবিজ্ঞান অনুসারে, আমরা যাকে বলছি ‘পয়েন্ট অব নো রিটার্ন’। এরকম পরিস্থিতিতে, আলাপ আলোচনার কোনো সুযোগ থাকে না। তাহলে, সাধারণ মানুষ যা অনুমান করছেন, সত্যি সত্যিই কি দুটি দল চিরচেনা সেই বৈরীতার পথেই যাচ্ছে? প্রশ্ন উঠেছে ‘রাজনৈতিক দলগুলি যদি ‘পয়েন্ট অব নো রিটার্নে’ সত্যিই চলে যায়, তাহলে কার লাভ? কাদের লাভ? দেশের বার্গেইন পাওয়ার তাতে বাড়ে না কমে? এই প্রতিযোগীতামূলক দুনিয়ায় রাজনৈতিক কলহের ফায়দা কারা নেয়?

প্রসঙ্গত:, সাম্প্রতিককালের একটি বহুলালোচিত চুক্তির কথা বলা যেতে পারে।  যার ভিত্তিতে, আমেরিকার এক্সো মবিল  বাংলাদেশে ৩০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে বঙ্গোপসাগরের তেল গ্যাস অনুসন্ধানে। অত:পর সে অনুসন্ধান হতে প্রাপ্ত তেলগ্যাসের ৫০ শতাংশ তারা পাবেন। অবশ্য শর্ত আছে যে, বাংলাদেশ চাইলে বাকি অর্ধাংশ কিনেও নিতে পারে। যদি বাংলাদেশ ক্রয় না করে তাহলে এক্সো মবিল সেটা বিক্রি করে দিতে পারবে। বিভিন্ন সূত্রে প্রকাশ, কোম্পানিটি সাগরের ১৫টি ব্লকে এই অনুসন্ধান চালাবে। তাহলে কী দাঁড়ালো?

দুই দশক আগে বলা হয়েছিল বাংলাদেশ প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপর ভাসছে। বাংলাদেশসহ মার্কিন পত্র পত্রিকায় এ নিয়ে তখন বিস্তর লেখালেখি হয়েছিল। তাঁদের দেশের কর্তাব্যাক্তিদের এ বিষয়ে বাংলাদেশে তৎপর হতেও বলা হয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশের অভ্যন্তরে তেলগ্যাস নিয়ে একটি দ্বিদলীয় স্পর্শকাতরতা বিরাজ করতো। আজকের বাংলাদেশে  রাজনৈতিক বাস্তবতা কি, সেটা সহজেই অনুমেয়। পাশাপাশি, দু’দশক পরে এসে আজ আমেরিকান কোম্পানী ডিল করতে পারছে অনেকটা তাঁদের মত করে। এই হলো রাজনৈতিক কনসেনশাস না থাকার নগদ পরিণাম।

আমরা মনে করি, আমাদের রাজনীতিবিদদের এসব রাজনীতিবিজ্ঞানের প্রপঞ্চ নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে হবে ও বিভিন্ন রাজনৈতিক মিথস্ক্রিয়া হতে ভবিষ্যতের জন্য শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে।

শেয়ার করুন: