November 29, 2024
জাতীয়লেটেস্টশীর্ষ সংবাদ

পবিত্র আশুরা আজ: কারবালার স্মরণে তাজিয়া মিছিল

হিজরি সাল অনুসারে ১০ মহরম তথা আশুরা মুসলিম বিশ্বে ত্যাগ ও শোকের দিন। ঘটনাবহুল এ দিনে বর্তমান ইরাকের অন্তর্গত কারবালা প্রান্তরে মুয়াবিয়ার হাতে শহীদ হন হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর দৌহিত্র ইমাম হোসেন।

মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও যথাযোগ্য ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে আশুরা।

এদিন সকাল ১০টায় রাজধানীর হোসেনি দালান থেকে কারবালার মর্মান্তিক শোকের স্মরণে তাজিয়া মিছিল শুরু হয়েছে। করোনা মহামারির কারণে ২ বছর পর পূর্ণাঙ্গ পরিসরে তাজিয়া মিছিল অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মিছিল সমন্বয়ের মূল দায়িত্ব পালন করছে হোসেনি দালান ইমামবাড়া ম্যানেজমেন্ট কমিটি।

 

তাজিয়া মিছিল সাজানো হয়েছে কারবালার শোকের নানা প্রতিকৃতি দিয়ে। বিবি ফাতেমার স্মরণে মিছিলের শুরুতেই দু’টি কালো গম্বুজ বহন করা হচ্ছে। অংশগ্রহণকারীরা বহন করছেন বিভিন্ন নিশান।

মিছিলে দু’টি ঘোড়া রয়েছে যার মধ্যে একটিকে রঙ দিয়ে রক্তের রূপ দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে ইমাম হোসেন যখন কারবালায় যান তখন ঘোড়াটি এক রকম থাকে, আবার যুদ্ধের শেষে রক্তাক্ত ঘোড়ার অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে।

 

তাজিয়া তৈরি করা হয়েছে ইমাম হোসেনের সমাধির আদলে। একদল রয়েছেন যারা শোকের গান গাইতে গাইতে সামনের দিকে এগুচ্ছেন। এছাড়া অনেকেই বুক চাপড়ে ‘হায় হোসেন, হায় হোসেন’ বলে মাতম করছেন। গায়ে রঙ লাগিয়ে কারাবালার সেই রক্তপাতের দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে মিছিলে।

কারবালার রক্তাক্ত স্মৃতির স্মরণে মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা সাধারণত নিজের দেহে ছুরি দিয়ে আঘাত করে রক্ত ঝরিয়ে মাতম করেন। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশের অনুরোধে গত কয়েকবছর ধরেই ছুরি দিয়ে মাতম করা হচ্ছে না।

 

হোসেনি দালান ইমামবাড়ি থেকে তাজিয়া মিছিলটি শুরু হয়ে বকশীবাজার রোড, নিউমার্কেট হয়ে ধানমন্ডি লেকের ‘প্রতিকী কারবালা’ প্রাঙ্গণে গিয়ে শেষ হবে।

এর আগে সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে যোগ দিয়েছেন অনেকে। মূল তাজিয়া মিছিলে যোগ দিতে বিভিন্ন এলাকা থেকে কালো কাপড় পড়ে হোসেনি দালানে আসতে থাকেন মানুষ।

নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা

নিরাপত্তা বিবেচনায় মিছিলে অংশ নিতে ইচ্ছুক আগত প্রত্যেককে পুলিশের তল্লাশি চৌকির মধ্য দিয়ে যেতে দেখা গেছে।

হোসেনি দালানের চারপাশেই রয়েছে কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী। পোশকধারী র‌্যাব-পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে বিপুল সংখ্যক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন।

 

এদিকে, তাজিয়া মিছিল শুরুর পর থেকে মিছিলের সামনে ও পেছনে বিপুল সংখ্যক নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে। যে সড়ক দিয়ে মিছিল যাচ্ছে পুরো রাস্তা ঘিরে নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়েছে। রাস্তার পাশের ভবনগুলোর রুফটপ থেকে পুলিশ সদস্যদের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে দেখা গেছে। প্রস্তুত রয়েছে পুলিশের জলকামান ও সাজোয়া যান।

 

আশুরার তাজিয়া মিছিলে দা, ছুরি, কাঁচি, বর্শা, বল্লম, তরবারি, লাঠি বহন নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। একইসঙ্গে আতশবাজি ও পটকা ফোটানো নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

ডিএমপি জানায়, তাজিয়া মিছিলকে কেন্দ্র করে অনেক সময়েই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। যা নগরবাসীর মনে আতঙ্ক ও ভীতি সৃষ্টিসহ জননিরাপত্তার প্রতি হুমকি হয়ে ওঠে। এ কারণে বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

 

রাজধানীর পুরান ঢাকার ফরাশগঞ্জের বিবিকা রওজা, পুরান পল্টন, মগবাজার, মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্প ও মিরপুর-১১ নম্বরে বিহারি ক্যাম্পগুলোয় আশুরা পালিত হচ্ছে। এসব এলাকাগুলোতেও নিরাপত্তা জোরদার করেছে ডিএমপি।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *