May 6, 2024
জাতীয়লেটেস্ট

নেতাকর্মীদের কাছে ত্যাগের রাজনীতি চাইলেন প্রধানমন্ত্রী

আওয়ামী লীগের দু’দিনব্যাপী ২১তম জাতীয় সম্মেলন শুরু

 

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক

নিজের স্বার্থের কথা না ভেবে দেশকে ভালোবেসে রাজনীতি করতে নেতা-কর্মীদের প্রতি আহŸান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতাসীন দলটির একুশতম সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনাদর্শ তুলে ধরে এই আহŸান জানান তিনি।

নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়া দলটি এই সম্মেলনের আগেই দলের মধ্যে ‘শুদ্ধি অভিযান’ শুরু করেছে। এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে দল থেকে অনুপ্রবেশকারী-অপকর্মকারীদের বাদ দেওয়ার যে আওয়াজ উঠেছে, তাতে আশা দেখছে আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতা-কর্মীরাও।

গতকাল শুক্রবার বিকালে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বেলুন উড়িয়ে সম্মেলন উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে জাতীয় সঙ্গীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা তোলেন তিনি, দলীয় পতাকা তোলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

আজ শনিবার কাউন্সিলে গঠিত হবে আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্ব। তিন যুগের বেশ সময় ধরে নেতৃত্ব দেওয়া বঙ্গবন্ধুকন্যার সভাপতি পদে থাকা নিশ্চিত হলেও অন্য পদে কী পরিবর্তন ঘটতে পারে, তা এখনও নিশ্চিত নয়। তবে সম্মেলনের উদ্বোধন করতে গিয়ে শেখ হাসিনা যে ভাষণ দিয়েছেন; তাতে তিনি দৃশ্যত স্পষ্ট করতে চেয়েছেন, ত্যাগ স্বীকারকারীদেরই মূল্যায়ন করবেন তিনি।

দলীয় নেতা-কর্মীদের রাজনীতির মাহাত্ম্য তুলে ধরতে গিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ থেকে উদ্ধৃত করে তিনি তিনি বলেন- ‘নীতিবিহীন নেতা নিয়ে অগ্রসর হলে সাময়িকভাবে কিছু ফল পাওয়া যায়। কিন্তু সংগ্রামের সময় তাদের খুঁজে পাওয়া যায় না’।

শেখ হাসিনা বলেন, এটাই হচ্ছে সব থেকে বড় বাস্তবতা। যে কোনো রাজনৈতিক নেতার জীবনে নীতি-আদর্শ সব থেকে বড় আর সেই আদর্শের জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে সদা প্রস্তুত থাকার কথা। যিনি প্রস্তুত থাকতে পারেন, ত্যাগ স্বীকার করতে পারেন, তিনি সফল হতে পারেন। দেশকে কিছু দিতে পারেন। জাতিকে কিছু দিতে পারেন।

আওয়ামী লীগের ৭০ বছরের পথচলার ঘটনাবলি তুলে শেখ হাসিনা বলেন, নেতা-কর্মীদের ত্যাগেই সফল হয়েছে এই দল। বারবার আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা আত্মত্যাগ করেছে এবং তারই ফসল বাংলাদেশের জনগণ আজ পেয়েছে। আজকের বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে উন্নত সমৃদ্ধির পথে। যে বাংলাদেশের স্বপ্ন জাতির পিতা দেখেছিলেন। সেটাই আমাদের লক্ষ্য। আমরা সেটাই করতে চাই।

সোনার বাংলার যে স্বপ্ন বঙ্গবন্ধু দেখতেন, তা বাস্তবায়নে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ত্যাগের মানসিকতা নিয়ে কাজ করার আহŸান জানান তিনি। আমরা বাঙালি জাতিকে বিশ্ব দরবারে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা আমাদের রাজনীতি করে যাচ্ছি। তাই আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতা-কর্মীকে আমি এই অনুরোধ করবো, আপনাদেরকেও সেই চিন্তা-চেতনা নিয়ে কাজ করতে হবে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে নানা প্রতিক‚লতা পেরিয়ে আসার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ যে শক্তি অর্জন করেছে, সে কথাও বলেন শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগকে সম্পূর্ণভাবে শেষ করে দেবার অনেক প্রচেষ্টা অনেকেই করেছে। সেই পাকিস্তান আমল থেকেই যদি দেখি ইয়াহিয়া খান, আইয়ুব খান। এরপর পঁচাত্তরের ১৫ই অগাস্ট জাতির পিতাকে যখন হত্যা করা হল, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করল জিয়াউর রহমান। এরপরে জেনারেল এরশাদ, খালেদা জিয়া। যে যখন এসেছে সবার আগে আঘাতটা কিন্তু আওয়ামী লীগের উপরই এসেছে।

কিন্তু আওয়ামী লীগ জাতির পিতার হাতে গড়া আদর্শের সংগঠন বলে কেউ এই সংগঠনকে নিঃশেষ করতে পারেনি। এই সংগঠন সাময়িক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে, কিন্তু একেবারে ধ্বংস করতে পারেনি।

নেতা-কর্মীদের অনুপ্রাণিত করতে নিজের পরিজন হারিয়ে নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে প্রতিক‚লতার মধ্যে আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নেওয়ার কথাও বলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।

দেশে মার্শাল ল, প্রতি রাতে কারফিউ। জাতির পিতাকে হত্যার পর মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করা হয়েছে। স্বাধীনতাবিরোধীদের ক্ষমতায় আনা হয়েছে। আমার বাবা, মা, ভাই, বোনদের যারা হত্যা করেছে, তাদের বিচারের পথ বন্ধ করে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করা হয়েছে। তাদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছে। রাজনীতি করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। দল করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী করা হয়েছে।

তারপরও আঘাত এসেছে। দলের মধ্যে ভাঙন হয়েছে। একবার, দুবার। সেই ভাঙন থেকে আবার আমি নতুনভাবে গড়ে তুলেছি। সারা বাংলাদেশে ঘুরেছি। এই সংগঠনকে ধীরে ধীরে গড়ে তুলে আজকে আওয়ামী লীগ এই বাংলাদেশে সব থেকে বড় সংগঠন এবং সব থেকে শক্তিশালী সংগঠন।

বাংলাদেশ শাসন করা অন্য দলগুলোর সঙ্গে তুলনা করে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ওই দলগুলোর মতো ক্ষমতায় গিয়ে তৈরি হয়নি, জনগণের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে জনগণের মধ্য থেকে তৈরি হয়েছে।

জাতির জনককে হত্যার জন্য জিয়াউর রহমানকে দায়ী করে তিনি বলেন, তারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পর দেশটাকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাইরে নিয়ে যায়। বিএনপি হচ্ছে ক্ষমতা দখল করার পর একটা মিলিটারি ডিক্টেটর ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে যে দলের সৃষ্টি করেছিল, সেই জাতীয় দল। তারা দেশের জন্য কোনো কল্যাণ করতে পারে না।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, তারা যে সময় ক্ষমতায় ছিল, দুর্নীতিতে বাংলাদেশ পাঁচবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ, মানি লন্ডারিং, অস্ত্র চোরাকারবারি, সন্ত্রাসী কর্মকাÐ, বোমা হামলা, গ্রেনেড হামলা, দুজন সংসদ সদস্য হত্যাকাÐ ছাড়াও বিভিন্ন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের উপর অত্যাচার, নির্বাচনের দিন থেকেই শুরু হল তাদের তাণ্ডব, তাদের অত্যাচার-নির্যাতন।

আমরা দেখেছি স্বাধীনতাবিরোধী আল বদর, রাজাকার ও আল শামসসহ যারা এদেশে মানুষকে হত্যা করেছে, গণহত্যা চালিয়েছে, যারা লুটপাট করেছে, অগ্নি সন্ত্রাস করেছে তাদেরকে নিয়ে বিএনপি এই দেশে যেভাবে সন্ত্রাস সৃষ্টি করেছিল.. তারা ক্ষমতায় থাকলেও সন্ত্রাস করে, বিরোধী থাকলেও সন্ত্রাস করে।

বিএনপির শাসনামল পেরিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর দেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। তিনি তার সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন। সরকারের সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে দলকে তৃণমূল থেকে আরও শক্তিশালী করার উপর জোর দেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে আমাদের সারা বাংলাদেশে প্রায় ২৯টি জেলার কাউন্সিল হয়ে গেছে। ডিসেম্বর মাস আমাদের অত্যন্ত ব্যস্ততার মাস দেখে আমরা আর করতে পারিনি।

এর পরপরই বাকি সমস্ত জেলার কাউন্সিলগুলো আমরা করব। একেবারে তৃণমূল থেকে প্রত্যেকটা ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলার কাউন্সিল হবে। সংগঠনকে তৃণমূল থেকে আরও শক্তিশালী করা, এটাই আমাদের লক্ষ্য। কাউন্সিলের মধ্য দিয়েই সংগঠন চাঙ্গা হয়, সংগঠন আরও শক্তিশালী হয়। কাজেই আমরা সেভাবেই সংগঠনকে করে দিতে চাচ্ছি।

আগামী বছর মুজিববর্ষ ঘটা করে পালন করবে বলে এবার আওয়ামী লীগের সম্মেলনে বড় আয়োজন না থাকলেও নেতা-কর্মীদের উচ্ছ¡াসের কমতি ছিল না। বর্ণিল সাজে সকাল থেকেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমবেত হতে থাকে নেতা-কর্মীরা; গানের সঙ্গে চলতে থাকে নেতাদের ভাষণ।

এরপর বেলা ৩টায় শেখ হাসিনা উপস্থিত হলে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা তাকে অভ্যর্থনা জানান। এসময় সম্মেলনের কাউন্সিলর ও প্রতিনিধিরা ¯েøাগানে ¯েøাগানে স্বাগত জানান তাকে।

শেখ হাসিনা মঞ্চে বসার পর শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এরপর দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ শোক প্রস্তাব পাঠ করে শোনাল। অভ্যর্থনা উপ পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে বক্তব্য রাখেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম। তারপর দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বক্তব্য রাখেন।

 

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *