May 3, 2024
জাতীয়

ধর্ষণের মামলা না নিয়ে পাবনা থানায় বিয়ে দেওয়ার অভিযোগ

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক

পাবনায় ধর্ষণের অভিযোগকারী এক গৃহবধূকে ‘ধর্ষণকারীর’ সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ উঠেছে, পুলিশ ওই ঘটনায় মামলা না নিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালীদের মধ্যস্থতায় থানায় ওই বিয়ের ব্যবস্থা করে।

অভিযোগকারী ওই নারী বলছেন, গত শুক্রবার রাত ১০টার দিকে পাবনা সদর থানায় জোর করে তার বিয়ে দেওয়া হয়। আর যার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেছেন, ‘রিমান্ডের ভয় দেখিয়ে’ পুলিশ তাদের বিয়ে দিয়েছে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর অনেকেই পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। আর পাবনা সদর থানার ওসি ওবায়দুল হক বলছেন, ওই বিয়ে থানায় হয়নি।

তিন সন্তানের জননী ওই নারীর বাড়ি পাবনা সদর উপজেলার দাপুনিয়া ইউনিয়নে। তার অভিযোগ, প্রতিবেশী রাসেল আহমেদ গত ২৯ অগাস্ট তাকে তার বাড়িতে নিয়ে এক সহযোগীসহ পালা করে ধর্ষণ করে। দুদিন পর তাকে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অফিসে নিয়ে তিন দিন আটকে রাখা হয় এবং সেখানে আরও ৪/৫ জন তাকে পালা করে ধর্ষণ করে।

ওই নারী বাড়ি ফিরে স্বজনদের বিষয়টি জানালে ৫ সেপ্টেম্বর তাকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে সেই গৃহবধূর নিজেই বাদী হয়ে পাবনা সদর থানায় লিখিত অভিযোগ করলে পুলিশ রাসেলকে আটক করে। কিন্তু মামলা নথিভুক্ত না করে পুলিশ ওই রাতেই রাসেলের সঙ্গে তার বিয়ের ব্যবস্থা করে বলে ওই নারীর অভিযোগ।

তার বাবা সাংবাদিকদের বলেন, আমার মেয়ে অপহৃত হওয়ার কয়েক দিন পর তাকে খুঁজে পেয়ে হাসপাতালে ভর্তি করেছিলাম। পরে তার কাছে ঘটনার বিস্তারিত শুনে থানায় অভিযোগ দিই। কিন্তু পুলিশ আমার মেয়েকে থানা হেফাজতে রেখে আমাদের বাড়ি পাঠিযে দেয়। পরে জানতে পারি থানায় রাসেলের সাথে ওর বিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমার মেয়ের তো স্বামী-সন্তান আছে। আমরা সামাজিকভাবে অপদস্থ হয়েছি। আমরা ধর্ষণের বিচার চাই।

দাপুনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য দৌলত আলী বলেন, সদর থানার উপ-পরিদর্শক একরামুল হক আমার উপস্থিতিতেই রাসেলকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। পরে শুনি থানায় তাদের বিয়ে দিয়েছে। এটা তো কোনো নিয়মেই পড়ে না।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই পুলিশের এ ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। অভিযোগকারী ওই গৃহবধূ বলেন, রাসেলকে আটক করে থানায় আনার পর ওসি স্যার নিজেই কাজী ডেকে এনে সেখানে আমাদের বিয়ে দিয়েছেন।

আর রাসেল বলেন, আমি ধর্ষণের সাথে জড়িত নই, আমাকে পুলিশ মিথ্য অভিযোগে গ্রেপ্তার করে মামলা ও রিমান্ডের ভয় দেখিয়ে জোর করে বিয়ে দিয়েছে, আমি ষড়যন্ত্রের স্বীকার। থানায় আমাদের বিয়ের সময় এসআই একরাম আমাদের ছবিও তুলেছে।

এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে এসআই একরাম সাংবাদিকদের বলেন, আমি এ নিয়ে কিছু বলব না। যা বলার ওসি স্যার বলবেন।

আর পাবনা সদর থানার ওসি বলেন, ওই গৃহবধূ প্রথমে ধর্ষণে অভিযোগ দিলেও পরে তা প্রত্যাহার করে নেন। ওই দিন রাতে তাদের বিয়ের কথা শুনেছি, তবে থানায় কোনো বিয়ের ঘটনা ঘটেনি। আমরা এর সাথে জড়িত থাকার প্রশ্নই ওঠে না।

এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে পাবনার মানবাধিকারকর্মী অ্যাডভোকেট কামরুন্নাহার জলি বলেন, ধর্ষণের বিচার না করে বিয়ে দেওয়া সামাজিক মীমাংসার নামে প্রহসন। থানায় এ ধরনের ঘটনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। যদি দুজনের সম্মতিতেও বিয়ে হয়ে থাকে, তাতে তো ধর্ষককে উৎসাহিত করা হল। যদি সত্যিই এমন ঘটনা ঘটে থাকে, তাহলে এর সাথে জড়িত সবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া প্রয়োজন।

 

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *