November 24, 2024
আঞ্চলিকলেটেস্ট

ধর্ষণের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ায় এসআই জাহাঙ্গীরকে বরখাস্ত

 

 

দ. প্রতিবেদক

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার এসআই মো. জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে আবাসিক হোটেলে মেয়ের সামনে মাকে ধর্ষণের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে খুলনা থানা পুলিশ। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার এস আই জাহাঙ্গীরকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ধর্ষণের শিকার নারীর ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া আদালত তার প্রত্যক্ষদর্শী মেয়ের জবানবন্দি রেকর্ড করেছেন।

খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) হাসান আল মামুন জানান, বৃহস্পতিবার সকালে তারা হোটেল সুন্দরবন পরিদর্শন এবং হোটেলের মালিক ও কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলেন। এছাড়া ধর্ষণের শিকার নারীর সঙ্গেও কথা বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথাবার্তা বলে এস আই জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ধর্ষণের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে।

তিনি জানান, প্রত্যক্ষদর্শী ওই নারীর মেয়েকে (১১) বৃহস্পতিবার সকালে মহানগর হাকিম আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়। আদালত তার জবানবন্দি রেকর্ড করেছেন। এস আই জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ধর্ষণের ঘটনা তদন্তে খালিশপুর জোনের সহকারী কমিশনার হুমায়ুন কবীরকে প্রধান করে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ। বৃহস্পতিবার এস আই জাহাঙ্গীরকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।

তদন্ত কমিটির প্রধান ও সহকারী কমিশনার হুমায়ুন কবীর জানান, তিনি ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু করেছেন। ২/১ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন।

খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের (ওসিসি) সমন্বয়কারী ডা. অঞ্জন কুমার চক্রবর্তী জানান, সকালে ধর্ষণের শিকার নারীকে ওসিসিতে ভর্তির পর প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এরপর তাকে মানসিক কাউন্সিল দেওয়া হয়। তার শরীর ও পোষাক থেকে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহসহ ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয়েছে।

খুলনা থানার ওসি হাসান আল মামুন জানান, আদালতের অনুমতি নিয়ে এস আই জাহাঙ্গীরকে খুমেক হাসপাতালে নেওয়া হবে। সেখানে তার শরীরের বিভিন্ন আলামত ও ডিএনএ নেওয়া হবে।

হোটেল সুন্দরবনের কর্মচারী গোলাম মোস্তফা জানান, এসআই জাহাঙ্গীর মাঝেমধ্যে এই হোটেলে আসতেন। মঙ্গলবার রাতে তিনি তাকে সঙ্গে নিয়ে মা-মেয়ে যে কক্ষে ছিলেন ওই কক্ষের দরজায় গিয়ে নক করেন। তারা দরজা খুলে দেওয়ার পর তাকে (হোটেল কর্মচারীকে) মারধর করে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেয়। এরপর কক্ষের ভেতরে কী ঘটেছে তা তিনি দেখেননি। তবে ওই নারীর চিৎকারে হোটেলের লোকজন হোটেলের নিচতলার মেইন গেটে তালা লাগিয়ে দেয়।

হোটেলের আরেক কর্মচারী সাজ্জাদ হোসেন সজল জানান, তিনি রাতে বাসায় ছিলেন। রাত ২টার দিকে মোবাইলে ঘটনা শুনে হোটেলে আসেন। এসে দেখেন এস আই জাহাঙ্গীরকে হোটেলের রিসিভশনে বসিয়ে রাখা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, বাগেরহাট জেলার মোংলা উপজেলার বাজিকরেরখন্ড গ্রামের এক নারী তার ১১ বছরের অসুস্থ মেয়ে ও ২৬ বছর বয়সের ভাগ্নেকে সঙ্গে নিয়ে মেয়েকে ডাক্তার দেখানোর জন্য মঙ্গলবার বিকালে খুলনায় আসেন। রাতে তারা নগরীর শহীদ হাদিস পার্কের সামনে হোটেল সুন্দরবনে ওঠেন। রাত আড়াইটায় এস আই জাহাঙ্গীর মা-মেয়ের কক্ষে নিয়ে মেয়ের সামনে মাকে ধর্ষণ করেন। এরপর হোটেলের কর্মচারীরা তাকে আটক করে থানায় খবর দিলে পুলিশ গিয়ে তাকে থানায় নিয়ে যায়।

এ ঘটনায় মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৪টার দিকে ওই নারী বাদি হয়ে খুলনা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। এস আই জাহাঙ্গীর বর্তমানে খুলনা জেলা কারাগারে রয়েছে। জাহাঙ্গীর চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামের মো. আতিয়ার রহমানের ছেলে। ঘটনার সময় এস আই জাহাঙ্গীর মাদকাসক্ত ছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *