April 20, 2024
আঞ্চলিকলেটেস্টশীর্ষ সংবাদ

দাদীর লাশ দেখতে খুলনায় আসার পথে বাবা-মা ও দুই বোনকে হারালো ‘মিম’

মোঃ মশিউর রহমান
দাদীর মৃত্যুর খবর শুনে বাবা-মা ও দুই বোনের সঙ্গে ঢাকা থেকে খুলনার উদ্দেশে রওনা হয়েছিল আট বছরের শিশু মিম। দাদীর লাশ দেখতে আসার আগেই পরিবারের সব সদস্যকে কেড়ে নিলো সর্বনাশা পদ্মা। সোমবার মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় পদ্মা নদীতে একটি বাল্কহেডের সঙ্গে স্পিডবোটের সংঘর্ষ হয়। এতে স্পিডবোটটি ডুবে যায়। ওই দুর্ঘনায় এখন পর্যন্ত ২৬ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। যাদের মধ্যে আছে শিশু মিমের বাবা-মা ও দুই বোনের লাশও। সে বাদে তার সঙ্গে থাকা সবাই দুর্ঘটনায় মারা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শিশু মিমের বাবা মনির হোসেন, মা হেনা বেগম, ছোট দুই বোন সুমি (৫) ও রুমি (৩) স্পিডবোট দুর্ঘটনায় মারা গেছে। তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। লাশ রাখা হয়েছে স্থানীয় একটি স্কুল মাঠে। খুলনার তেরখাদা উপজেলার পারোখালী গ্রামে এ পরিবারের বাড়ি। সেখানেই আসছিলেন তারা।
মিমকে উদ্ধারকারী নৌ পুলিশের কনস্টেবল মেহেদী বলেন, ‘শিশুটিকে নদীতে ব্যাগ ধরে ভাসতে দেখি। হাত ও চোখের কাছে আঘাতের চিহ্ন ছিল সামান্য। দ্রুত তাকে পাঁচ্চর রয়েল হাসপাতালে পাঠানো হয়। শিশুটির পরিবারের সকল সদস্যরাই মারা গেছে।’
শিশু মিম শুধু জানে তার মা, বাবা, বোনেরা কেউ বেঁচে নেই। মাঝে মাঝেই মা মা বলে কেঁদে উঠছে সে। কান্নারত অবস্থায় মিম বলে, ‘আমরা দাদু বাড়ি যাচ্ছিলাম। দাদী মারা গেছে। তাকে দেখতে। আমার আর কেউ নাই।’
এ বিষয়ে তেরখাদা উপজেলার সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ওহিদুজ্জামান দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিনকে জানান, ঢাকায় বসবাসকারী মনির শিকদারের মা রবিবার সন্ধ্যায় মারা যান। সংবাদ শুনে মাকে শেষবারের মতো দেখা ও লাশ দাফনে খুলনায় আসার জন্য খুব ভোরে ঢাকা থেকে খুলনার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। ভোর ৬টায় মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া থেকে একটি স্পীডবোটে ওঠে। ঘাটের কাছাকছি এলে নোঙর করা বালু বোঝাই একটি বাল্কহেডর সঙ্গে সংঘর্ষে স্পিড বোটটি উল্টে যায়।
চেয়ারম্যান ওহিদ আরও জানান, ওই ঘটনার পর পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা হতাহতদের উদ্ধার অভিযানে নামে। এ সময় ৮ বছরের শিশু মিম তার বাবা, মা ও দুই বোনের লাশ উদ্ধার করতে দেখে উদ্ধার কর্মীদের কাছে জানায়, উদ্ধারকৃতরা তার পরিবারের সদস্য। এরই সূত্র ধরে সেখানকার ইউএন মারফত তিনি জানতে পারেন মনির শিকদার খুলনার ছেলে। তারা খুব গরীব। লাশ বহন করার টাকাও তাদের নেই। তাই এলাকবাসীর উদ্যোগে তাদের লাশ খুলনায় আনা হচ্ছে।

দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিন/ জে এফ জয়

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *