May 17, 2024
আন্তর্জাতিক

তেলের উৎপাদন কমাতে সৌদি আরবকে ট্রাম্পের হুমকি!

করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর বিশ্বজুড়ে তেলের দাম কমতে শুরু করে। এরইমধ্যে সৌদি আরব ও রাশিয়ার ‘মুল্যযুদ্ধ’ তেলের উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্তে আসার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। পরে অবশ্য রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তিতে আসতে সক্ষম হয় সৌদি নেতৃত্বাধীন তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর সংগঠন ওপেক। আর এ সিদ্ধান্তে আসতে সৌদি আরবকে আল্টিমেটাম দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।

রয়টার্স জানায়, ২ এপ্রিল সৌদি রাজপুত্র মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওপেক যদি তেলের দাম না কমায়, তাহলে সৌদি থেকে সব মার্কিন সেনা সরিয়ে নেওয়ার আইন পাস করা হবে বলে হুমকি দেন তিনি।

করোনা ভাইরাস মহামারিতে যখন তেলের দাম অভূতপূর্বভাবে কমতে শুরু করে, তখন সৌদি-রাশিয়া মূল্যযুদ্ধের অবসান এবং তেলের উৎপাদন কমানোর সম্মিলিত সিদ্ধান্ত যেন হোয়াইট হাউসের কূটনৈতিক বিজয়।

ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনালাপের ১০ দিন পর তেলের উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্তের কথা জানান রাজপুত্র সালমান। ৭৫ বছরের মিত্রতা ঝুঁকিতে ফেলে ট্রাম্প প্রমাণ করলেন, যুক্তরাষ্ট্রের তেলশিল্প সুরক্ষার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন তিনি।

অথচ এর আগে বিভিন্ন সময় যুক্তরাষ্ট্রে তেলের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ওপেকের কম তেল উৎপাদনকে দায়ী করেছিলেন ট্রাম্প। এবার তিনি নিজেই উৎপাদন কমানোর আবেদন করলেন।

ঊর্ধ্বতন এক মার্কিন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, সৌদি নেতাদের হোয়াইট হাউস থেকে বলা হয়, ‘তেলের উৎপাদন না কমালে, বিধিনিষেধ আরোপ করা থেকে কিছুতেই নিরস্ত করা যাবে না মার্কিন কংগ্রেসকে। ফলে সৌদি থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করা হতে পারে।’

তবে সৌদি রাজপুত্রকে এমন কিছু বলেছিলেন কিনা জিজ্ঞেস করা হলে, রয়টার্সকে ট্রাম্প বলেন, ‘আমার তাকে এটি বলতে হয়নি। আমার মনে হয়েছিল তিনি ও প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন খুবই যুক্তিবাদী। তারা জানতেন যে তাদের মধ্যে একটি সমস্যা হয়েছিল। তারপর তারা সমাধানে আসলেন।’

এদিকে সৌদি আরব এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। তবে সৌদি এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এ চুক্তিতে ‘ওপেক প্লাস’ গ্রুপের সব দেশই সম্মত হয়েছে। তেলের উৎপাদন কমাতে সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া প্রত্যেকেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে কিন্তু চুক্তিতে যে ২৩টি দেশ ছিল, তাদের সবার সহযোগিতা ছাড়া এটি সম্ভব হতো না।’ তবে সৌদি রাজপুত্র ও ট্রাম্পের কথোপকথনের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি তিনি।

ট্রাম্পের ফোনের এক সপ্তাহ আগে সৌদি আরব থেকে সব মার্কিন সেনা, প্যাট্রিয়ট মিসাইল এবং অ্যান্টি মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম সরানোর একটি আইনি প্রস্তাবনা দেন মার্কিন রিপাবলিকান সিনেটর কেভিন ক্র্যামার এবং ডান সালিভান। সৌদি-রাশিয়া মূল্যযুদ্ধে ক্ষুব্ধ হয়েই তারা এমন প্রস্তাব দেন।

ইরানের মতো আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ থেকে সুরক্ষা এবং অস্ত্রের যোগানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল সৌদি আরব।

এ পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাম্পের পক্ষ থেকে চাপের পর, ১২ এপ্রিল তেল উৎপাদন কমানোর ঘোষণা দেয় দেশটি। ওপেক, রাশিয়া ও অন্য মিত্র দেশগুলো তেলের উৎপাদন দৈনিক ৯৭ লাখ ব্যারেল কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়, যা মোট উৎপাদনের ১০ শতাংশ। এর মধ্যে শুধু সৌদি ও রাশিয়াই উৎপাদন কমায় দৈনিক ২৫ লাখ ব্যারেল করে।

উৎপাদন এত কমানোর পরেও ইতিহাসের সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামে তেলের দাম। গত সপ্তাহে মার্কিন তেলের দাম নেমেছিল শূন্য ডলারের নিচে। চলতি বছরের শুরুতে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ছিল ৭০ ডলার প্রতি ব্যারেল, যা কমতে কমতে ১৫ ডলার প্রতি ব্যারেলে নামে।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *