তাসভীরকে গ্রেপ্তার নিয়ে প্রশ্ন রিজভীর
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
বনানীর এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডে প্রাণহানির মামলায় বিএনপি নেতা তাসভীর উল ইসলামকে গ্রেপ্তারের সমালোচনা করে রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, নিজেদের ‘ব্যর্থতা আড়াল’ করে বিএনপির ঘাড়ে দোষ চাপাতে এটা করা হয়েছে।
কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির সভাপতি তাসভীর এফআর টাওয়ারের বর্ধিতাংশের (উপরের কয়েক তলা) মালিক। সেখানকার ২১ থেকে ২৩ তলায় তার প্রতিষ্ঠান কাশেম ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের অফিস। ওই ভবন পরিচালনা কমিটিরও সভাপতি তিনি।
বৃহস্পতিবার এফআর টাওয়ারে আগুনে ২৬ জনের প্রাণহানির ঘটনায় শনিবার মামলা হওয়ার পর রাতেই তাসভীরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। একাদশ সংসদ নির্বাচনে কুড়িগ্রাম-৩ আসনে (উলিপুর) বিএনপির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বদ্বিতা করে হেরে যান তাসভীর। ওই জেলাতেই বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর বাড়ি। তাকে গ্রেপ্তার করা নিয়ে রোববার দুপুরে এক আলোচনা সভায় সরব হন রিজভী।
এ ঘটনায় তাসভীরের দায় খুঁজে না পাওয়া রিজভী বলেন, তাসভীর উল ইসলাম কুড়িগ্রাম বিএনপির সভাপতি, দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য। এই (এফআর) বিল্ডিংয়ের সাথে তার সম্পর্ক কী? ওইটার তো তিনি জমির মালিক নন, ওই বিল্ডিংয়ের সে তো ডেভেলপার নন। তাহলে তাকে গ্রেপ্তার করলেন কেন গতকাল রাতে?
একাদশ সংসদ নির্বাচনে রুহুল কবির রিজভীর জেলা কুড়িগ্রামে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করে হেরে যান তাসভীর উল ইসলাম উদ্দেশ্য একটাই, জনগণকে দেখানো যা কিছু হয়, যা কিছু ঘটে বিএনপি জড়িত। উদোর পিন্ডি বুদোঁর ঘাড়ে চাঁপানোর জন্যই আজকে তাসভীর উল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এ ঘটনায় সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ করে রিজভী বলেন, মানুষকে বাঁচানো, মানুষের নিরাপত্তা দেওয়ার, দুর্যোগের মধ্যে মানুষকে সহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থা প্রধানমন্ত্রী করেননি। এখন প্রত্যেকটা ঘটনার মধ্যই আপনি দেখানোর চেষ্টা করেন বিএনপি দায়ী। এজন্যই করেন যে, আপনার আর কোনো সমর্থন নেই, ‘মিডনাইট নির্বাচন’ করে ধিকৃত, অবৈধ সরকার হয়ে ধিকৃত, জনগণের শত্র“ হয়ে ধিকৃত। তাই আপনাকে হারিকেন নিয়ে খুঁজে বেড়াতে হয়-কোথায় বিএনপি আছে, কোথায় বিএনপি আছে।
এখন ঘৃণ্য কাজ শুরু করেছে এটি বিএনপির ঘাড়ে চাঁপিয়ে দেওয়ার জন্য। সবাই জানে, এই জমির মালিক কে ছিল, ডেভেলপার কে ছিল, তার সাথে সরকারের কী সম্পর্ক। আমি নিন্দা জানাই এফআর বিল্ডিংয়ে অগ্নি প্রজ্জলনে ২৬ জন মানুষের মৃত্যু। এই মৃত্যুতে সরকারের ব্যর্থতার নিন্দা জানাই।
রিজভী বলেন, তাসভীর উল ইসলাম তো ওই বিল্ডিংয়ে তিনটা ফ্ল্যাট কিনেছেন। কার কাছ থেকে? ‘রূপায়ন’ এর কাছ থেকে। রূপায়ন কে? আপনি (প্রধানমন্ত্রী) সেটার ইঙ্গিত দিচ্ছেন না। সরকার সমর্থিত-সেটা বলছেন না। তিনি ফ্ল্যাট কিনেছেন যখন বিল্ডিং হয়ে গেছে। সে দায়ী হয়ে গেলেন, সে গ্রেপ্তার হয়ে গেল। আর যারা সরকারের সাথে জড়িত সেটার ডেভেলপার, সেটার মালিক তারা নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়ায় ওই বনানীতে।
রাতে তাসভীরকে ধরার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এফআর টাওয়ারের জমির মালিক প্রকৌশলী এস এম এইচ আই ফারুককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এই মামলার অপর আসামি করা হয়েছে রূপায়ন গ্র“পের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলীকে।
তদন্তে যার-ই দোষ পাওয়া যাবে, তাকেই ধরা হবে বলে দুপুরেই এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল বাতেন। বনানীতেই অনুমতির বাইরে আরও ৫-৬ তলা তৈরি করা ভবন রয়েছে দাবি করে বিএনপি নেতা রিজভী বলেন, ইকবাল টাওয়ারের (কামাল আতার্তুক এভিনিউতে) কথা আমি বলতে চাই না। তার বিল্ডিং কোড কত, আজকে কততলা? ওই খানে হাত দেবে না। কারণ ওইটার মালিক যে ক্ষমতাসীন দলের সাথে জড়িত।
অগ্নিকাণ্ডের মতো দুর্যোগে বিপদগ্রস্তদের জীবন রক্ষায় যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না অভিযোগ করে তিনি বলেন, সরকার ফায়ার সার্ভিসকে উন্নত করেনি। আজকে হেলিকপ্টারে করে হাতিরঝিল থেকে পানি নেয়, সেই পানি বালতির মধ্যে থাকে না। এফআর টাওয়ারের ধোঁয়া-আগুন থেকে রক্ষায় মানুষ যখন উঁচু তলা থেকে লাফ দিচ্ছে তখন আপনার ফায়ার সার্ভিসের নেট বা জাল নাই কেন? ফায়ার সার্ভিসের আধুনিক সরঞ্জামাদি নেই কেন?
আজকে শেখ হাসিনা জোর করে ক্ষমতায় থাকছেন। ক্ষমতার মসনদ, ময়ূরের সিংহাসন আঁকড়ে রেখেছেন পুলিশ-র্যাব-বিজিপি দিয়ে। কেউ প্রতিবাদ করলে গুলি ছুঁড়ছে বিএনপির দিকে, নেতা-কর্মীদের ওপর। সেদিন আপনি তো মানুষকে বাঁচানোর ব্যবস্থা করেননি।
শটগানের জন্য ৩০ লাখ কার্তুজ ঠিকই কিনেছেন, ৩০ হাজার এলপি বন্দুক কিনেছেন। কারণ আওয়াজ দেখলেই গুলি কর, বিএনপি দেখলেই গুলি কর, তাদেরকে লাশ করে দাও। প্রধানমন্ত্রী লাশে বিশ্বাস করেন। আপনার আস্থা লাশে সেই বিএনপি হোক, বিরোধী দল হোক আর সাধারণ মানুষের। মানুষের পোঁড়া গন্ধ আপনার ভালো লাগে।
নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয়তাবাদী উলামা দলের উদ্যোগে সংগঠনের সদ্য প্রয়াত সভাপতি হাফেজ আবদুল মালেক ও প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক মো. মোয়াজ্জেম হোসেনের স্মরণে এই আলোচনা সভা হয়।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা শাহ নেছারুল হকের সভাপতিত্বে সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসেন, উলামা দলের মাওলানা দেলোয়ার হোসেন, শামসুর রহমান খান, গোলাম মোস্তফা, প্রয়াত হাফেজ আবদুল মালেকের ছেলে রেদোয়ান আহমেদ, মরহুম মোয়াজ্জেম হোসেনের ছেলে কামরুজ্জামান কামরুল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।