April 26, 2024
জাতীয়

‘ডেল্টা প্ল্যান’ নিয়ে গণশুনানির প্রস্তাব

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক

পানি ও ভূসম্পদ ব্যবস্থাপনায় দীর্ঘমেয়াদী কৌশল হিসেবে বাংলাদেশ সরকারের নেওয়া ‘বদ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০’ চূড়ান্ত করার আগে আর্থ-সামাজিক অবস্থা যাচাই করে নেওয়ার পরামর্শ এসেছে পরিবেশ বিষয়ক একটি সম্মেলন থেকে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্ক (বেন) শুক্রবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে ‘বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ এবং বাংলাদেশের স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন’ শীর্ষক এই বিশেষ সম্মেলনের আয়োজন করে।

সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, পরিবেশ ও জলবায়ুর পরিবর্তন আমাদের জন্য বড় বিপর্যয়ের সংবাদ। মানুষ যদি এই যুদ্ধে জয়লাভ করতে না পারে, যদি জলবায়ু পরিবর্তনের আক্রমণ প্রতিহত করতে না পারি, তবে বাংলাদেশের মানুষকে বড় খেসারত দিতে হবে।

‘ডেল্টা প্ল্যান’নামে বেশি পরিচিত শতবছরের এ মহাপরিকল্পনা চূড়ান্ত করার আগে একটি গণশুনানির প্রয়োজন রয়েছে বলে মত দেন বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের প্রধান আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। তিনি বলেন, অত্যন্ত বড় এক সমস্যা সামনে রেখে দীর্ঘমেয়াদী এই পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। আমি মনে করি, এতে অংশীজনের আরো অনেক মতামতের প্রয়োজন রয়েছে। আওয়ামী লীগের গত সরকারের শেষ সময়ে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় ‘বদ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০’ চূড়ান্ত অনুমোদন পায়।

ডেল্টা প্ল্যানে বলা হয়েছে, নতুন নতুন প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং বিদ্যমান অবকাঠামো উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে ব-দ্বীপ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রতিবছর জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) আড়াই শতাংশের মত অর্থের প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ অর্থায়ন বেসরকারি খাত থেকে এবং ২ শতাংশ সরকারি খাত থেকে যোগান দিতে হবে।

এ বিনিয়োগ যেন সঠিক ধারায় সঠিক প্রকল্পে ব্যয় করা হয়, তা নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন সম্মেলনে উপস্থিত বিশেষজ্ঞরা। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, অর্থনৈতিক ও সামাজিক নানা ক্ষেত্রের মতো বাস্তু পরিবেশ নিয়ে ভাবতে হবে। বাস্তু পরিকল্পনাও সুচিন্তিত হওয়া জরুরি।

পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ বদ্বীপ পরিকল্পন প্রণয়ণের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন জ্যেষ্ঠ সচিব শামসুল আলম। তিনিও উপস্থিত ছিলেন এ সম্মেলনে। শামসুল আলম বলেন, দীর্ঘমেয়াদী এই পরিকল্পনা প্রণয়ণের আগে তারা নেদারল্যান্ডসের মডেল অনুসরণ করেছেন। নেওয়া হয়েছে প্রায় ৩ হাজার বিজ্ঞানীর অভিমত।

তিনি বলেন, এটা কোনো স্ট্যাটিক প্ল্যান নয়। এ পরিকল্পনা পুনর্বিন্যাসের সুযোগ রয়েছে। ব-দ্বীপ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ছয় ধরনের জায়গাকে বাংলাদেশ বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে, সেগুলোকে বলা হচ্ছে ‘হটস্পট’। এগুলো হল- উপকূলীয় অঞ্চল, বরেন্দ্র ও খরাপ্রবণ অঞ্চল, হাওর এবং আকস্মিক বন্যাপ্রবণ এলাকা, পার্বত্য অঞ্চল এবং নগর এলাকা।

ডেল্টা প্ল্যানের আওতায় ২০৩০ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য এসব এলাকা ঘিরে ৮০টি প্রকল্প নেবে সরকার, যাতে ব্যয় হবে প্রায় ২৯৭৮ বিলিয়ন টাকা। বদ্বীপ পরিকল্পনার শক্তি ও দুর্বলতার জায়গাগুলো নিয়ে সম্মেলনে কথা বলেন দেশি-বিদেশি পরিবেশবিদরা। পাশাপাশি ‘হট স্পট’ ধারণার উপযোগিতা, বাংলাদেশের নদ-নদীর ওপর ভারত ও অন্যান্য উজান দেশের হস্তক্ষেপের অভিঘাত নিয়েও তারা আলোকাপাত করেন।

দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলনে প্রস্তাবিত বদ্বীপ কমিশনের সঙ্গে জাতীয় পরিকল্পনা কমিশন, নদী টাস্কফোর্স, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ের বিষয়গুলো নিয়েও পর্যালোচনা হবে বলে আয়োজকরা জানান।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *