ডিভোর্স নিয়ে মাহির স্বামীর দীর্ঘ স্ট্যাটাস
ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি। ২০১৬ সালে ভালোবেসে মাহমুদ পারভেজ অপুর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। দীর্ঘ পাঁচ বছর পর তাদের দাম্পত্য জীবনে ছন্দপতন ঘটেছে। তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিবাহবিচ্ছেদের। যদিও এখনো আইনিভাবে তাদের বিচ্ছেদ হয়নি। কিন্তু খুব শিগগির আইনি প্রক্রিয়া শুরু হবে।
অপু-মাহির বিয়েবিচ্ছেদ এখন টক অব দ্য টাউন। ঠিক এই সময়ে বিয়েবিচ্ছেদ নিয়ে ফেসবুকে দীর্ঘ একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন মাহির স্বামী। সম্পর্ক শেষ হয় না পরিবর্তন হয়। বিষয়টি উল্লেখ করে অপু লিখেন, ‘একটি সম্পর্ক গড়তে গেলে যেসব গুণ থাকে সেগুলো হলো সততা, ওয়াদা, বিশ্বস্ততা, বন্ধুত্ব, দায়িত্ব নেওয়ার ক্ষমতা, বোঝার ক্ষমতা, স্বচ্ছতা, ভালোবাসা, নিজস্ব বিশ্বাস ইত্যাদি। সম্পর্ক হওয়ার পর তার পরিবর্তন হতেই পারে। আমরা বেঁচে আছি সম্পর্ক নিয়ে, সম্পর্কের বন্ধনে বন্দি হয়ে। আবার সম্পর্ক কখনো শেষও হয় না শুধু পরিবর্তন হয়।’
দুজন মানুষের মতের মিল আর বিশ্বাস আলাদা হলে একসাথে না থাকাই ভালো বলে মনে করেন অপু। বিষয়টি স্মরণ করে অপু লিখেন, ‘বিচ্ছেদ যেকোনো সম্পর্কে যেকোনো সময় আসতে পারে। যেকোনো বিচ্ছেদই কষ্টদায়ক। কিন্তু প্রত্যেক মানুষের নিজের মতো করে বাঁচার স্বাধীনতা রয়েছে। আর এতে করে তিনি নিজের মতো করে ভালো থাকতেই পারেন। সম্পর্কগুলো স্থায়ী হোক এমনটাই সবাই চান। কিন্তু বাস্তবতায় তা হয় না। দেখা যায়, সারাজীবন দুজন পাশাপাশি থাকার পরও মৃত্যু এসে একজনকে নিয়ে যায় বা দুজনের মতের মিল ও বিশ্বাস আলাদা হলে তখন একসাথে থাকার চেয়ে আলাদা থাকতে চান, এতে দোষের কিছু তো নাই বরং এটা উভয়ের জন্য ভালো।’
ডিভোর্স হওয়ার পর তাদের দিকে কপাল কুঁচকে তাকানো সমাজের একটা অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বিষয়ে অপু লিখেন, ‘আমাদের বাঙালি সমাজ এখনো সেভাবে প্রাপ্তবয়স্ক হয়নি। তাই তো ডিভোর্স কথাটা শুনলেই অনেকেরই কান ভোঁ-ভোঁ করে ওঠে। এই কারণেই ডিভোর্সির দিকে কপাল কুঁচকে তাকানোটাই এই সমাজের একটা অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্পর্ক তৈরী করার মতোন, সম্পর্ক থেকে বের হয়ে আসাও খুব স্বাভাবিক। মানুষের জীবনে অনুভূতির সংকোচন, সম্প্রসারণ হতেই পারে। একসাথে থাকতে না চাওয়ার কারণ জন্মাতে পারে। ভালো নাই লাগতে পারে। বিশেষ কোনো কারণে আলাদা হওয়ার ইচ্ছা হতে পারে। আবার কেউ কেউ মানিয়ে নিয়েও বেঁচে থাকে। দুজন মানুষের ভেতর আভ্যন্তরীন বনিবনা না হলে, একসাথে থেকে তিক্ততা বাড়ানোর কোনো মানেই হয় না। তার চেয়ে দুজন মানুষ আলাদা হয়ে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের জায়গাটুকু বাঁচিয়ে রাখার দৃশ্যই সুন্দর।’
যেকোনো বিচ্ছেদই কষ্টদায়ক। কিন্তু কোনো সম্পর্কই হয়তো পুরোপুরি শেষ হয় না, সময়ের সঙ্গে বদল আসে দুজনের বোঝাপড়ায়। আসলে ডিভোর্সের পর সম্পর্কের নাম বদলে যায় শুধু। একে অপরের কথা শেষ হয়ে যায় না, কেউ কারো শত্রু হয়ে যায় না, বন্ধুত্বও শেষ হয়ে যায় না। অনেক চাওয়া পাওয়া অনেক ভালোবাসা, আকাঙক্ষার ফসলে বৈবাহিক সম্বন্ধ গড়ে উঠে তার ভাঙনকালে যন্ত্রণা হওয়া অবশ্যম্ভাবী। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, জীবন সেখানেই শেষ হয়ে গেল বা শেষ হয়ে গেল এমনো নয় প্রাক্তণের প্রতি তীব্র বিদ্বেষ থাকবেই! ডিভোর্স সত্ত্বেও প্রাক্তণের প্রতি সম্মান ধরে রাখা সম্ভব। আর এই সম্মানটা মনের মধ্যে পোষণ করেই নিজেদের মর্যাদা অটুট রেখে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন অপু।
সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়ে অপু লিখেছেন—‘আশা করছি, পরিচিত পরিজনেরা শুভাকাঙ্ক্ষীরা আমাদের এই সিদ্ধান্তকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করে সাথে থাকবেন। আর একটা অনুরোধ করতে চাই, আদর্শিক পার্থক্য বা নিজের ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের কারণে গালিগালাজ তথা নেতিবাচক মানসিকতা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখুন। মূল্যবোধ, দায়বদ্ধতা, শ্রদ্ধা এবং বিশ্বাস—এখনো কিছু মানুষ এই শব্দগুলোর মানে বুঝেন। তাই সবার প্রতি অনুরোধ, নিজের আপত্তি বা ক্ষোভ যৌক্তিক এবং শোভনীয় ভাষায় তুলে ধরুন।’