April 28, 2024
জাতীয়

ডিবি পরিচয়ে অপহরণ, বুকের ওপর পা তুলে ঘোরানো হয় ২ ঘণ্টা

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে এক ব্যবসায়ী ও তার শ্যালককে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে অপহরণ করে গাড়িতে তুলে নিয়ে মারধর ও টাকা-মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১ টার দিকে উপজেলার সাইনবোর্ড হাজীবাড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগী দুজন হলেন- তারাব পৌরসভার রূপসী বাগবাড়ি ৪ নম্বর ওয়ার্ডের এলাকার মৃত আবদুল্লাহ ভূঁইয়ার ছেলে ব্যবসায়ী মনির হোসেন ভূঁইয়া (৫৩) ও একই এলাকার মৃত তোফাজ্জল হোসেন ভূঁইয়ার ছেলে প্রবাসী রমজান ভূঁইয়া (৪৮)। মনির হোসেন পেশায় একজন ব্যবসায়ী এবং তার শ্যালক রমজান ভূইয়া সম্প্রতি কুয়েত থেকে দেশে ফিরেছেন।

এ ঘটনায় বুধবার সন্ধ্যায় রূপগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে বলে জানান ভুক্তভোগী মনির হোসেন।
তিনি বলেন, বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১১টার দিকে যমুনা ব্যাংকের রূপসী শাখা থেকে দেড় লাখ টাকা তুলি। পরে ইজিবাইকে করে আমার শ্যালককে নিয়ে রূপগঞ্জের জমি রেজিস্ট্রি অফিসে যাচ্ছিলাম। পথে রূপসী সাইনবোর্ড হাজীবাড়ি এলাকায় একটি সাদা মাইক্রোবাস আমাদের পথ আটকায়। এ সময় গাড়ি থেকে পাঁচ জন লোক নেমে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে আমাদের ওই গাড়িতে তুলে নেন। সাদা শার্ট ও প্যান্টের সঙ্গে ডিবি পুলিশের পোশাক জড়ানো ওই কর্মকর্তাদের হাতে ওয়্যারলেস ও দুটি হাতকড়া ছিল। চালকসহ তারা ছিলেন ছয় জন।

এ সময় তারা বলেন, ‘তোদের অনেকদিন ধরে খুঁজতেছি, তোরা বাবার (ইয়াবা) ব্যবসা করছ। উঠ গাড়িতে উঠ, তোদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট আছে’। এ সময় আমি তাদের কাছে ওয়ারেন্টের কাগজ দেখতে চাইলে, তারা জানান, ওয়ারেন্টের কাগজ থানায় আছে। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা-কাটাকাটিও হয়। এক পর্যায়ে তারা আঘাত করে আমার শ্যালকের মাথা ফাটিয়ে দেন। পরে হাতকড়া পরিয়ে আমাদের গাড়িতে তুলে সিটের নিচে পা রাখার জায়গায় দুজনকে শুইয়ে দেন। আর আমার বুকের ওপরে পা দিয়ে সিটে বসে থাকেন।

তিনি আরও বলেন, কিছুদূর যাওয়ার পরে তারা মোবাইলে কোনো একজনের সঙ্গে কথা বলছিলেন। এ সময় তারা বলেন, স্যার ধরা খাইছে। তখন আমি তাদের বলি ভাই, আমাদের কেন ধরলেন ঠিক বুঝতে পারলাম না। তাদের ভাই বলে সম্মোধন করায় তারা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। এ সময় একজন বলেন, তুই স্যারেরে ভাই বলস কেন এটা বলে আমাকে রেঞ্জ দিয়ে আঘাত করেন। তখন কাপড় দিয়ে আমার চোখ বেঁধে ফেলা হয়। এ সময় আমি বলি, স্যার আমাদের মারধর না করে, টাকা রেখে ছেড়ে দেন। আর বাড়ি ফেরার জন্য গাড়িভাড়া বাবদ কিছু টাকা দিয়ে দিয়েন। এ কথা বলায় তারা আবার গালাগালি ও আমাদের মারধর করেন। মাথায়, পিঠে, পায়েসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করেন। এভাবে প্রায় দুই ঘণ্টা আমাদের গাড়িতে রেখে ঘুরিয়েছেন।

মনির হোসেন আরও বলেন, আমার চোখ বাঁধা থাকায় দেখতে পারিনি। তবে এসব ঘটনার এক পর্যায়ে আমাদের তুলে নেওয়াদের একজন ফোনে একজনের সঙ্গে কথা বলছিলেন। তিনি বলছিলেন, স্যার ইনফরফেশন ভুল, ওরা বাবার ব্যবসা করে না। ওরা ভালো লোক, স্যার এখন কী করবো। কিন্তু এই কথা কার সঙ্গে বলেছিলেন বুঝতে পারিনি। কথাবার্তার এক পর্যায়ে তারা বলেন, ঠিক আছে স্যার, ছেড়ে দিচ্ছি। পরে রূপসী আদুরিয়া এলাকায় আমাদের নামিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় তারা বলেন, গাড়ি থেকে নেমে পেছনে তাকালে গুলি করে দেব, সোজা চলে যাবি। পরে তারা দ্রুত গাড়ি নিয়ে চলে যান, গাড়ির নম্বর দেখতে পারিনি। যাওয়ার আগে তারা আমাদের কাছে থাকা দেড় লাখ টাকাসহ আমার ও আমার শ্যালকের দুটি মোবাইল ফোনও নিয়ে গেছেন। এছাড়াও পকেটে থাকা খুচরো টাকাসহ দুটি ভোটার আইডি কার্ডও নিয়ে যান। যাদের কাছ থেকে জমি কিনব তাদের এই দুটি ভোটার আইডি কার্ড।

এ ঘটনার পর ভুক্তভোগী দুই জন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। মনির হোসেনের শ্যালক রমজান ভূঁইয়ার মাথায় চারটা সেলাই লেগেছে।

মনির হোসেন বলেন, আমার শ্যালককে তারা বেশি মারধর করেছেন। কারণ তার হাতে ওই দেড় লাখ টাকাসহ জমির দলিল ছিল। পরে এ ঘটনায় সন্ধ্যায় রূপগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছি। তবে আমাকে জিডির কপি দেওয়া হয় নাই, পুলিশ জানিয়েছে তদন্ত শেষ হলে জিডির কাগজ দেবে।

মনির জানান, ঘটনার তদন্ত করছেন উপ-পরিদর্শক (এসআই) মেহেদী। তিনি রোববার আমাকে ব্যাংকে যেতে বলেছেন, তিনি ফোন দিলে আমি সেখানে যাব। ব্যাংকে গিয়ে টাকার বিষয়টি তদন্ত করবে, ওই দিন আমি টাকা উত্তোলন করেছি কিনা। এছাড়াও আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজও চেক করবেন বলে জানিয়েছেন।

তবে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন রূপগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক মো. মেহেদী হাসান। তিনি বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। এমন কোনো অভিযোগ হয়নি। অভিযোগ হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

রূপগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হুমায়ুন কবির মোল্লা বলেন, এ ধরনের কোনো জিডি হয়নি। আমার জানা নাই।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *