April 23, 2024
জাতীয়লেটেস্ট

ডাকসু ভোটে অনিয়ম থাকলে প্রমাণ দিন: ঢাবি কর্তৃপক্ষ

ডাকসু ও হল সংসদের নির্বাচনের অনিয়মের সব অভিযোগ নাকচ করে এরপরও কারও কাছে যদি কোনো ‘বস্তুনিষ্ঠ প্রমাণ’ থাকে, তা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

তিন দশক পর গত ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও প্যানেলের পুনর্নির্বাচনের দাবির মধ্যে শনিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এই আহ্বান জানানো হয়।

টেলিভিশন আলোচনা অনুষ্ঠান ও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ‘বিভ্রান্তিকর বক্তব্য ও মন্তব্যের’ পরিপ্রেক্ষিতে জনমনে বিভ্রান্তি নিরসনের লক্ষ্যে কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যাসহ এই বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে বলে জানায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগ।

এই নির্বাচনে ডাকসুর ভিপি ও সমাজসেবা সম্পাদক পদে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের নেতা নুরুল হক নুর ও আখতার হুসেন জয়ী হলেও বাকি সব পদে বিজয়ী হয় ছাত্রলীগের প্রার্থীরা। অধিকাংশ হল সংসদেই জিতেছে ছাত্রলীগের প্যানেল।

ভোটের পর ছাত্রলীগ ভিপি পদে পুনর্নির্বাচনের দাবি তুললেও তা থেকে সরে আসে। তবে নুরের প্যানেলসহ বাম ছাত্র জোট ও স্বতন্ত্র প্যানেলগুলো কারচুপির অভিযোগ তুলে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে।

নিজেদের উদ্যোগে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে বিভিন্ন অনিয়মের ঘটনা তুলে ধরে এই নির্বাচন স্থগিত করে নতুন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরামর্শ দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক।

এর পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছে, “উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে অপরাজনীতির দৃষ্টিভঙ্গিতে কোনো কোনো মহল/ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই ছাড়াই ধারাবাহিকভাবে নির্বাচন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে মনগড়া মন্তব্য ও ব্যাখ্যা প্রদান করে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছেন।”

বিশাল এই নির্বাচন আয়োজনে ‘অনিচ্ছাকৃত কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি’ থাকার কথা স্বীকার করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ভবিষ্যতের জন্য ভাবনার অনেক সুযোগ করে দিল এবারের অভিজ্ঞতা।

শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ লাইন, ভোটগ্রহণে কালক্ষেপণের অভিযোগ নাকচ করে কর্তৃপক্ষ বলেছে, “সর্বোচ্চ দুই ঘণ্টার মধ্যেই সকল ভোট কেন্দ্রে দীর্ঘ লাইনের অবসান ঘটে এবং উপস্থিত সকল শিক্ষার্থী নির্ধারিত সময়ের কম-বেশি আগে-পরে স্বাচ্ছন্দ্যে তাদের ভোটাধিকার প্রদান করতে সক্ষম হয়।

“কেউ ভোট দিতে পারেননি, কারও ভোট অন্য কেউ দিয়েছেন, কেউ হেনস্তার শিকার হয়েছেন- এমন কোনো অভিযোগ কোনো রিটার্নিং অফিসার পাননি।

“এখন পর্যন্ত নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কাজের কোনো পর্যায়ে কোনো অনিয়মের বা ব্যত্যয়ের কোনো প্রশ্ন কোনো শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী উত্থাপন করেননি।”

এই নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তার বিব্রত বোথ করা নিয়ে ‘মনগড়া ব্যাখ্যা’ চলছে বলেও মন্তব্য করেছে ঢাবি কর্তৃপক্ষ।

“দু’একটি কেন্দ্রে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে কিছু ঘটনা ও প্রশ্ন উত্থাপনের ফলে ভোটগ্রহণ কার্যক্রম সাময়িকভাবে বাধাগ্রস্ত হওয়ায়, তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে বিব্রতবোধ করেছেন বলে জানিয়েছেন। এটিকে অন্যভাবে ব্যাখ্যা করার কোনো সুযোগ নেই।”

ফল দেরিতে প্রকাশের অভিযোগ নাকচ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কুয়েত মৈত্রী হল ও রোকেয়া হলে ভোটগ্রহণ দেরিতে শেষ হয়েছিল। আর ভোট গণনার মেশিন সংখ্যায় কম থাকায় এক হলের ভোট গণনার পর অন্য হলের ভোট গণনা করতে হয়েছিল।

কুয়েত মৈত্রী হলে ভোট দেওয়া ব্যালট উদ্ধারের ঘটনাটিকে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রত্যাশিত’ উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “ভোটগ্রহণ শুরুর পূর্বেই এটি চিহ্নিত হওয়ায় বড় ধরনের কর্মবিপর্যয় এড়ানো সম্ভব হয়।”

ওই ঘটনার বর্ণনায় বলা হয়, “ভোটকেন্দ্রের বুথ সংলগ্ন একটি কক্ষ থেকে ব্যবহৃত (সিল মারা !) ব্যালট ভর্তি একটি ব্যাগ উদ্ধার করা হয়। বিষয়টি উপাচার্য মহোদয় অবহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি উক্ত হলের ভোটগ্রহণ কার্যক্রম স্থগিত করার নির্দেশ দেন। চিফ রিটার্নিং অফিসারকে ঘটনাস্থলে যাওয়ার অনুরোধ করেন। হলের ভারপ্রাপ্ত প্রাধ্যক্ষকে তাৎক্ষণিক দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে উপাচার্য মহোদয় একজন নতুন প্রাধ্যক্ষ নিয়োগ দেন।”

এই ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠনের কথা জানিয়ে বলা হয়, “এখানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো অস্বচ্ছতা বা শৈথিল্যের প্রশ্ন অবান্তর। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বদ্ধপরিকর।”

রোকেয়া হলে ‘অত্যন্ত বিভ্রান্তিকরভাবে’ ব্যালট পেপার উদ্ধারের কথা বলা হচ্ছে দাবি করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “মূলত উক্ত ব্যালট পেপার ব্যালট বাক্সে ছিল না; চিফ রিটার্নিং অফিসার কর্তৃক প্রেরিত ট্রাংকের মধ্যে সংরক্ষিত ছিল। সেসব ব্যালট পেপারে কোনো সিল মারা ছিল না; ছিল অক্ষত, অটুট।

“নিয়ম অনুযায়ী ব্যালট পেপারসমূহ নির্ধারিত টেবিল থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের মাধ্যমে ভোটারদের সরবরাহ করা হয়। কোনো টেবিলের ব্যালট পেপার শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকগণ নির্ধারিত ট্রাংক থেকে প্রয়োজনীয় ব্যালট পেপার সংশ্লিষ্ট টেবিলে প্রদান করেন। ব্যালট পেপারের নিরাপত্তার জন্য এটিই সর্বোত্তম পন্থা।

“রোকেয়া হলে ব্যালট বাক্সের সংখ্যা নিয়েও বিভ্রান্তি তৈরি করা হয়েছে। মূলত সেখানে ছিল ছয়টি ব্যালট বাক্স (যাতে ভোট প্রদান করা হবে), আর তিনটি ছিল ব্যালটের ট্রাংক, যেখানে অক্ষত, অটুট ব্যালট পেপার রক্ষিত। অতএব, ৯টি ব্যালট বাক্সের ৬টি পাওয়া গেল, ৩টি গোপন করা হয়েছে, এই বক্তব্য অসার ও মনগড়া।”

এই নির্বাচন নিয়ে ‘অসত্য, উস্কানিমূলক, মনগড়া, বিভ্রান্তিকর অপতথ্য ও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ’ শিগগিরই দূর হবে বলে আশা প্রকাশ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

তারা বলেছে, “যদি ভোটের কোনো অনিয়ম, অসততা, কারচুপি, জালিয়াতি প্রভৃতির বস্তুনিষ্ঠ প্রমাণ কারও কাছে থাকে, তাহলে সেসব সুনির্দিষ্টভাবে বিশ্ববিদ্যালয়কে অবহিত করলে যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *