December 23, 2024
জাতীয়

ডাকসু ভবনে ভিপি নূরের উপর হামলা, আহত ১৫

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক

ডাকসু ভবনে হামলার শিকার হয়েছেন ভিপি নুরুল হক নূর; তিনিসহ আহত হয়েছেন তার অন্তত ১৫ সঙ্গী। হামলার সময় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের ব্যানারে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের তৎপর দেখা গেলেও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ কিংবা ছাত্রলীগ কেউই দলগতভাবে এই হামলার দায় স্বীকার করেনি।

তারা দাবি করেছেন, ভিপি নূর বহিরাগতদের নিয়ে ডাকসু ভবনে অবস্থান নিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সাধারণ শিক্ষার্থীরা’ তাদের প্রতিহত করেছে। হামলায় আহত নূর ও সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ১৫ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকসু ভবনে রবিবার ভিপি নুরুল হক নূরের সঙ্গে থাকা সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সদস্যরাও হামলার শিকার হন। হামলার সময় ভাংচুর করা হয়েছে ডাকসু ভিপির কক্ষের কম্পিউটার, চেয়ারসহ আসবাবপত্র। রবিবার দুপুর পৌনে ১টার দিকে এই হামলার ঘটনা ঘটে।

চলতি বছরের শুরুতে অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে অধিকাংশ পদে ছাত্রলীগ জয়ী হলেও ভিপিসহ দুটো পদে জয়ী হয় কোটা সংরক্ষণ আন্দোলনকারীদের প্যানেলের প্রার্থীরা। তারপর থেকে বিভিন্ন সময় নূর হামলার মুখে পড়েন। মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতা-কর্মীরা স¤প্রতি ডাকসু ভবনে নূরের কক্ষে তালা দেওয়াসহ তার কর্মসূচিতে বাধা দেওয়ার ঘটনাও ঘটিয়েছিল।

রবিবারের হামলার প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বলেন, দুপুর ১২টায় রাজু ভাষ্কর্যে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ তাদের পূর্বনির্ধারিত একটি কর্মসূচি শেষ করে ডাকসু ভবনের দিকে মিছিল নিয়ে যায়। একপর্যায়ে সেখানে ভিপি নুরসহ তার অনুসারীদের সঙ্গে মঞ্চের নেতাকর্মীদের উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। পরে মঞ্চের কিছু নেতাকর্মী নুরদের লক্ষ্য করে ইট ছুড়তে থাকে। মঞ্চের কিছু নেতাকর্মী ডাকসু ভবনের দ্বিতীয় তলায় উঠতে থাকলে নুরের অনুসারীরা তাদের প্রতিহত করে ডাকসু ভবনের মুল ফটক বন্ধ করে দেয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকসু ভবনে রবিবার ভিপি নুরুল হক নূরের সঙ্গে থাকা সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সদস্যরাও হামলার শিকার হন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস এবং সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম হোসেন ডাকসু ভবনের মূল ফটক খুলে ভেতরে ঢোকেন। তাদের সঙ্গে ছাত্রলীগের কিছু নেতা-কর্মীও ঢুকে পড়েন।

সনজিত-সাদ্দাম ভিপি নুরের কক্ষে গিয়ে তাকে বহিরাগতদের বের করে দিতে বলেন। কিন্তু নূর আপত্তি জানালে উভয়ের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। এসময় ছাত্রলীগের অন্য নেতাকর্মীরা ভিপি নুরের কক্ষে থাকা সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতাকর্মীদের বের করে দেন। ওই কক্ষ থেকে বের হতে বাধ্য হওয়া পরিষদের নেতা-কর্মীরা নিচে নামার পরপরই ছাত্রলীগ ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতাকর্মীদের লাঠিপেটার শিকার হন।

এরই মধ্যে সনজিত ও সাদ্দাম ডাকসু ভবন থেকে বেরিয়ে পাশের মধুর ক্যান্টিনে চলে যান। এরপর মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে ভিপি নুরের কক্ষে ঢুকে বাতি নিভিয়ে সেখানে থাকা সবাইকে এলোপাতাড়ি পেটান বলে আহতরা জানান।

এতে নূর ছাড়াও আহত হন পরিষদের আহŸায়ক হাসান আল মামুন, যুগ্ম আহŸায়ক ফারুক হোসেন, রাশেদ খানসহ ১৫ জন। হামলাকারীরা যাওয়ার সময় ডাকসু ভবনের সিসি ক্যামেরার ধারণ করা চিত্রের হার্ডডিস্ক খুলে নিয়ে যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকসু ভবনে রবিবার হামলার শিকার হন ভিপি নুরুল হক নূর। এদিকে হামলার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা গিয়ে নূরসহ অন্যদের বের করে হাসপাতালে পাঠান।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক একেএম গোলাম রাব্বানী সাংবাদিকদের বলেন, নুরসহ আহতদের ঢাকা মেডিকেলের ইমার্জেন্সিতে পাঠিয়েছি। সেখানে সহকারী প্রক্টররা আছেন। আগে চিকিৎসা হোক, পরে সবার বক্তব্য শুনে তারপর ব্যবস্থা নেব।

হামলার বিষয়ে নুরের প্যানেল থেকে নির্বাচিত ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ছাত্রলীগের নেতৃত্বে প্রশাসনের প্রশ্রয়ে ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নূর, ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহŸায়ক হাসান আল মামুন, যুগ্ম আহŸায়ক রাশেদ খান, ফারুক হোসেন, মশিউর রহমানসহ অন্তত ৪০ জনের উপর হামলা হয়েছে।

কারও পা ভেঙে গেছে, নাক মুখ দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে, বমি করছে, বুকের হাড় ভেঙে গেছে। অনেকে আইসিইউতে রয়েছে। অনেকের অবস্থা সংকটাপন্ন। তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরা নিয়ে আমরা শঙ্কায় আছি। তবে হামলায় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেছেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মো. আল মামুন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকসু ভবনে রবিবার হামলার শিকার হন ভিপি নুরুল হক নূর।

তিনি  বলেন, ভিপি নুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগত ক্যাডারদের নিয়ে এসে ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছিল। তাই সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই খবর শুনে তা প্রতিহত করতে যায়। এখানে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতাকর্মীদের সেখানে উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন করলে মামুন বলেন, তাদের সবচেয়ে বড় পরিচয়, তারা সাধারণ শিক্ষার্থী। ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি সনজিতকে ফোন করা হলে তিনি ধরেননি। তবে ঘটনাটি নিয়ে নিজের ফেইসবুক ওয়ালে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকসু ভবনে রবিবার ভিপি নুরুল হক নূরের সঙ্গে থাকা সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সদস্যরাও হামলার শিকার হন।

যেখানে সনজিত কয়েকজনের ছবি দিয়ে লিখেছেন, বহিরাগত শিবির ক্যাডারদের নিয়ে ক্যাম্পাসে হামলা ও অস্থিতিশীল করতে চেয়েছিল পাগলা নূরা, সচেতন শিক্ষার্থী ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ স্বাধীনতাবিরোধীদের সমুচিত জবাব দিয়েছে, এই ক্যাম্পাসে কোনো স্বাধীনতাবিরোধীদের জায়গা হবে না। নুরুর নাটক সবাই বুঝে গেছে। ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম হোসেনও সাংবাদিকদের প্রশ্নে ঘটনাটিকে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ও নূরদের পরিষদের রেষারেষি হিসেবে চিহ্নিত করতে চেয়েছেন।

তিনি বলেন, আমরা চাই না, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটুক। গত কয়েকদিন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ও নুরের সঙ্গে শিবির সংশ্লিষ্টদের ধারাবাহিক সংঘর্ষের ঘটনা দেখছি। আজকেও ঐতিহ্যবাহী মধুর ক্যান্টিন ও ডাকসু ভবনে দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান করেছিল। আমরা নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেছি। আমরা দুই পক্ষকেই আহŸান জানাই, তারা যেন নিজেদের ভেতরের সমস্যার সমাধান করে নেয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকসু ভবনে রবিবার ভিপি নুরুল হক নূরের সঙ্গে থাকা সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সদস্যরাও হামলার শিকার হন। হামলায় ছাত্রলীগের সংশ্লিষ্টতার কথা অস্বীকার করেন সাদ্দাম।

ঘটনার পর ডাকসুর জিএস গোলাম রাব্বানী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সাংবাদিকদের বলেন, নুর নিজের দুর্নীতি ঢাকতে বহিরাগতদের নিয়ে ডাকসুকে ব্যবহার করে অরাজকতা করছেন। সে সকাল থেকে বহিরাগতদের দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ডাকসুতে আশ্রয় দিয়ে রেখেছিল।

এদিকে ডাকসু ভিপি নুরের উপর হামলার প্রতিবাদে বিকালে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছে প্রগতিশীল ছাত্রজোট, সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, ইশা ছাত্র আন্দোলন। প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে ছাত্র ফেডারেশন।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *