November 26, 2024
ফিচার

ডাকবাক্স এক ভূতপূর্ব ইতিহাস

রানার ছুটেছে রানার,তাই ঝুমঝুম ঘান্টা বাজছে রাতে,
রানার চলেছে খবরের বোঝা হাতে,
রানার চলেছে, রানার!

সেলফোন আবিষ্কারের আগ পর্যন্ত চিঠিপত্রই ছিল সর্বসাধারণের জন্য একমাত্র যোগাযোগ ব্যবস্থা। বিশ্বায়নের যুগে সে কথা এখন ইতিহাস। হলুদ খামের চিঠি বিলি করতে খাকি পোশাকের পিয়নকে আর দেখা যায়না বললেই চলে।দূরত্বের ব্যবধান ঘুচাতে চিঠিপত্রের জায়গা দখল করেছে অত্যাধুনিক সেলফোন। কালের স্রোতে বিলুপ্তপ্রায় ডাকবাক্স। রাস্তার মোড়ে অথবা পোস্ট অফিসে ঝুলতে দেখা ডাকবাক্স আধুনিক কালের ছেলেমেয়েরা দেখেনি বললেই চলে।

ডাকবাক্স হল একটি ছোটখাট বাক্স যা ডাকবিভাগ কর্তৃক চিঠিপত্র সংগ্রহের জন্য ব্যবহৃত হয়।পৃথিবীর ভিন্ন ভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন নামে ডাকবাক্সকে ডাকা হয়।গ্রেট ব্রিটেনে পোস্ট বাক্স,মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় কালেকশন বাক্স,মেইলবাক্স,লেটারবাক্স অথবা ড্রপ বাক্স ইত্যাদি নামেও অভিহিত। ডাকবাক্স স্থাপন করা হয় সাধারণত প্রকাশ্য স্থানে,মাটিতে স্থাপন করে বা কোনো কিছুর সঙ্গে ঝুলিয়ে।এর গায়ে একটি ছোট ফোকট থাকে,যা দিয়ে প্রেরক চিঠির খাম ঢুকিয়ে দেন।প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ডাকবিভাগের লোক এসে ডাকবাক্সের তালা খুলে চিঠিপত্র সংগ্রহ করতেন।

একযুগ আগেও চিঠিপত্রের ব্যবহারের ব্যাপক চলন ছিল।তখন ডাকবাক্সের কদরও ছিল বেশ।পকেটের দামী আর আধুনিক মুঠোফোন হারিয়ে দিয়েছে ডাকবাক্সকে।
ধারণা করা হয় ১৬৫৩ সালে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে প্রথম ডাকবাক্স স্থাপন করা হয়।ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জে প্রথম লাল থাম ডাকবাক্স ১৮৫২ সালে জার্সির সেন্ট হিলারে স্থাপন করা হয়।১৮৪৮ সালে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে প্রথম সর্বজনীন ডাক বাক্স স্থাপন করা হয়।সেগুলি কাঠ ও লোহা দিয়ে তৈরি হয়েছিল। এই ডাকবাক্স হালকা ওজনের হওয়ায় চুরি হয়ে যেত।পরবর্তীতে বাক্সগুলো ঢালাই লোহা দিয়ে করা হয় এবং প্রতিটি ডাকবাক্সের গড় ওজন ৪৫ কেজি পর্যন্ত ছিল।

দক্ষিণ এশিয়ায় গত দেড়দশক আগেও  দাপট ছিল বিলুপ্ত প্রায় ডাক বাক্সের। আমাদের দেশের গ্রামগুলোতে, শহরের মোড়ে গত এক যুগ আগেও দেখা যেত ডাকবাক্সের।প্রিয়জনদের কাছে যথাসময়ে খবর পৌছানোর দায়িত্ব ছিল ডাকপিয়নদের।বিশ্বায়নের এই যুগে ডাকবাক্সের পাশাপাশি ডাকপিয়ন অথবা রানারদের কার্যক্রমও নেই বললেই চলে।

বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রামে ডাকবাক্সের জায়গা দখল করেছে সেলফোনের শক্তিশালী টাওয়ার। চিঠিপত্রের জায়গা নিয়েছে স্মার্টফোন। চিঠির যুগটা ছিল অনন্য আর অসাধারণ অনুভূতির সন্ধিক্ষণ।মিথ্যের ছলচাতুরী ছিলনা এখনকার মত।স্মার্ট ফোন যোগাযোগ সহজ করেছে তবে আবেগর দিক দিয়ে  কিছুটা হলেও হারিয়ে দিয়েছে চিঠিপত্রের সময়কালকে। ডাকবাক্সের সেই স্বর্ণকালকে ভুলতেই বসেছে আধুনিককালের শিক্ষিত মানব সমাজ।

 

লেখক:

বিপুল কান্তি চৌধুরী 
সংবাদকর্মী ও পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক ।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *