December 21, 2024
জাতীয়

জাহাজ ভাঙা শিল্পের জন্য বনভূমির জমি ইজারা বাতিল করল হাইকোর্ট

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক

জাহাজ ভাঙা শিল্পের জন্য চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সলিমপুরে চিহ্নিত বনভূমির ৭ দশমিক ১০ একর জমির ইজারা বাতিল করেছে হাই কোর্ট। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি-বেলার জনস্বার্থের রিটে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি খোন্দকার দিলিরুজ্জামানের হাই কোর্ট বেঞ্চ গতকাল বৃহস্পতিবার এ রায় দেয়।

আদালতে রুলের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, মিনহাজুল হক চৌধুরী ও সাঈদ আহমেদ কবীর। জমির ইজারা নেওয়া বিবিসি স্টিলের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মেহেদী হাসান চৌধুরী।

২০১৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক সলিমপুরে জলাবনের (ম্যানগ্রোভ) ৭ দশমিক ১০ একর জমি মো. কাশেম রাজার মালিকানাধীন ‘বিবিসি স্টিলকে’ ইজারা দেন। গেল বছরের ২১ মার্চ আবার সে ইজারা নবায়নও করা হয়।

ওই ইজারা চুক্তি ও নবায়ন চ্যালেঞ্জ করে গত বছরের ২৮ এপ্রিল জনস্বার্থে হাই কোর্টে রিট আবেদন করে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি। পরে সে রিটে প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আদালত ১৩ মে এ জলাবনে জাহাজ ভাঙা শিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। সঙ্গে রুলও দেয়।

‘বিবিসি স্টিল’ ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের মধ্যে জলাবনের ইজারা সংক্রান্ত চুক্তি কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ও আপিল বিভাগের রায়ের পরিপন্থি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয় রুলে। ওই রুলই যথাযথ ঘোষণা করা হয়েছে রায়ে। এর ফলে জেলা প্রশাসকের দেওয়া ইজারা চুক্তি ও চুক্তির নবায়ন অবৈধ ঘোষণা করে বাতিল করা হয়েছে বলে জানান আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

১৯৭৪ সাল থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে চট্টগ্রাম জেলার ১ লাখ ৬৫ হাজার একর সমুদ্র পয়োস্তি (জেগে ওঠা চর) চরভূমি বনায়নের জন্য বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ১৯৮৫ সালে সরকার ১ লাখ ৬৫ হাজার একর চরভূমি সংরক্ষিত বন ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে।

এ গেজেট প্রকাশের আগেই ১৯৮৩-৮৪ অর্থবছরে সীতাকুণ্ডে সলিমপুরে বন বিভাগ ৪০০ একর ভূমি চিহ্নিত করে। বন আইনের ৪ ধারা অনুযায়ী গেজেটভুক্ত কোনো বনভূমি বা বনাঞ্চল চূড়ান্ত সংরক্ষিত বনাঞ্চলে রূপান্তরিত না হলেও আইনটির ২০ ধারা অনুযায়ী চিহ্নিত অংশ বা অঞ্চল বনেরই অংশ ধরে নেওয়া হয়।

এর ফলে সংরক্ষিত বনভূমি বা বনের চিহ্নিত অংশ সরকার বা কোনো সংস্থা বনবিরুদ্ধ কোনো কাজের জন্য কোনোভাবেই কাউকে ইজারা দিতে পারে না বা হস্তান্তর করতে পারে না। তাছাড়া ২০১৩ সালে আপিল বিভাগের নির্দেশনা আছে জাহাজভাঙা শিল্পের জন্য বা বনবিরুদ্ধ কাজের জন্য যেন বন, বনের অংশ ইজারা না দেওয়া হয়।

সে নির্দেশনা উপেক্ষা করে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক বিবিসি স্টিলকে সলিমপুরের ৪০০ একর ঘন জলাবনের ৭ দশমিক ১০ একর জমি জাহাজভাঙা শিল্পের জন্য বরাদ্দ দেন বলে আইনজীবী রিজওয়ানা হাসান জানান।

এ আইনজীবী সাংবাদিকদের বলেন, মহামান্য হাই কোর্টের এ রায়ের ফলে বন আইনের ২০ ধারা অনুযায়ী চূড়ান্ত ঘোষণা করা হয়নি যুক্তিতে এসব জমি বনবিরুদ্ধ ব্যবহারের পথ রুদ্ধ হলো। এ রায় বনভূমি সংরক্ষণে সরকারকে বাধ্যবাধকতায় এনেছে।

 

 

 

 

 

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *