May 4, 2024
জাতীয়লেটেস্ট

জালিয়াতির অভিযোগ, বঙ্গবন্ধু কর্নারের দুই বই নিয়ে রায় এ সপ্তাহে

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থাপিত বঙ্গবন্ধু বুক কর্নারে বিতরণের জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে লেখা বই ‘নকল’ করে ২০ কোটিরও বেশি টাকা হাতিয়ে দেয়া হচ্ছে-এমন অভিযোগে কপিরাইট আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বর্তমানে এ মামলা কপিরাইট অফিসে‍ুবিচারাধীন। চলতি সপ্তাহে এ মামলার রায় হতে পারে বলে জানা গেছে।

এর পাশাপাশি এ ঘটনা তদন্ত করতে সংসদীয় উপ-কমিটিসহ আদালতের নির্দেশনায় একটি শক্তিশালী কমিটি গঠন করে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ কারণে এ-সংক্রান্ত অর্থ ছাড় দেয়া হয়নি বলে জানা গেছে।

অভিযোগ রয়েছে, ই-বই সরবরাহের নামে ১৭ কোটি ৫৭ লাখ ৫৬ হাজার ৫০০ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রকাশনা সংস্থা জার্নি মাল্টিমিডিয়া লিমিটেড। এছাড়া স্বাধীকা পাবলিশার্স নামের একটি প্রকাশনা হাতিয়ে নিচ্ছে আরও তিন কোটি ১৩ লাখ ৩৮ হাজার ৯০০ টাকা।

এই দুটি প্রকাশনা সংস্থাই নাজমুল হোসেন নামের এক ব্যক্তির, যিনি যমুনা টেলিভিশনে সিনিয়র রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত।

জানা গেছে, প্রকল্পের মোট ২৮ কোটি ৭৮ লাখ ১২ হাজার ২০০ টাকার মধ্যে ২০ কোটি ৭০ লাখ ৮৬ হাজার ৪০০ টাকা ওই দুই প্রতিষ্ঠানের নামে পাচ্ছেন নাজমুল হোসেন। দুই প্রকাশনা সংস্থার নামে তিনটি বই সরবরাহ করা হচ্ছে, যার সবগুলো নিয়েই অভিযোগ উঠেছে।

জার্নি মাল্টিমিডিয়ার নামে সরবরাহ করা হচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধু মানেই স্বাধীনতা’ এবং বঙ্গবন্ধুর সমগ্র কারাজীবন নিয়ে ‘৩০৫৩ দিন’ নামের বই দুটি। আর স্বাধীকা পাবলিশার্স থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে ‘অমর শেখ রাসেল’ বইটি।

এর মধ্যে ‘বঙ্গবন্ধু মানেই স্বাধীনতা’ বইটি প্রথম প্রকাশ করেছিল মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। আর ‘৩০৫৩ দিন’ প্রকাশ করেছিল কারা অধিদফতর। সেই বই এখন জার্নি মাল্টিমিডিয়ার নামে প্রকাশ করে ১৭ কোটি টাকার বেশি পাচ্ছেন নাজমুল হোসেন।

যদিও এখনো এ দুই বইয়ের অর্থ ছাড় দেয়া হয়নি। এ বিষয়ে আদালতের অভিযোগ ও সংসদীয় স্থায়ী কমিটির অনাপত্তি পেলেই এ অর্থ ছাড় দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই) মহাপরিচালক এ এম মনসুর আলম।

জানা গেছে, আর ‘অমর শেখ রাসেল’ বইটি স্বাধীকা পাবলিশার্স প্রথম প্রকাশ করলেও এর সম্পাদক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য নাসরীন আহমেদকে না জানিয়েই তা প্রকাশ এবং বঙ্গবন্ধু কর্নারে সরবরাহ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

‘বঙ্গবন্ধু মানেই স্বাধীনতা’ বইয়ের সম্পাদক অমিতাভ দেউরীও তাকে না জানিয়ে বইয়ের দ্বিতীয় ও তৃতীয় সংস্করণ প্রকাশ এবং বইয়ের ক্রেডিট লাইনে পরিবর্তন আনার অভিযোগ করেছেন। এ অভিযোগ তুলে তিনি কপিরাইট আইনে মামলা দায়ের করেন। বর্তমানে সেটি বিচারাধীন।

সম্পাদক অমিতাভ দেউরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার সম্পাদনা বই নিয়ে প্রতারণা করায় নাজমুলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছি। সেখানে আমার ভাষ্য লিখিতভাবে চাইলে তা দিয়েছি। নাজমুলও তার ভাষ্য লিখিতভাবে দিয়েছেন। বর্তমানে এটি রায়ের অপেক্ষাধীন। চলতি সপ্তাহে এ রায় হতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘নাজমুল আমাকে টাকা দিয়ে পরবর্তী সংস্করণ প্রকাশ করেছে। টাকা দেয়ার একটি রশিদ সে জমা দিয়েছে বলে আদালত থেকে জানানো হলেও সেটি মিথ্যা ও ভুয়া রশিদ। তার সঙ্গে কোনো ধরনের চুক্তি বা লেনদেন হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় উপকমিটিসহ আদালতের নির্দেশে এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আলাদা তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও কেউ প্রতিবেদন দেয়নি। তদন্ত কমিটির সদস্যদের মধ্যে কেউ তার সঙ্গে যোগাযোগ করে তথ্য-প্রমাণ চাননি। এ কারণে তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *