April 20, 2024
জাতীয়লেটেস্ট

জামায়াতকে নেওয়া ভুল ছিল, স্বীকার কামালের

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
একাদশ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের প্রার্থী করা ‘ভুল’ ছিল বলে স্বীকার করেছেন জোটের শীর্ষনেতা কামাল হোসেন। ভোটের প্রায় দুই সপ্তাহ পর শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এই ভুল স্বীকারের পাশাপাশি জামায়াতের সঙ্গ ছাড়তে বিএনপিকে চাপ দেবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
গণফোরামের সভাপতি কামাল দলের কেন্দ্রীয় কমিটির এক বৈঠকের পর জামায়াত প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেন, আমার কথা আমি বলি, যেহেতু আমি অলরেডি পাবলিকলি বলেছি। আমি সঙ্গে সঙ্গে বলেছি যে, ভাই এটা তো আমার জানাই ছিল না। তখন ওরা (বিএনপি) বললো না যে জামায়াতের ২৫ জন না কত .., আমি যখন এখানে সম্মতি দিয়েছি, সেটা আমাকে জানানো হয় নাই। আমরা মতে সেটাও একটা ভুল করা হয়েছে।
এই নির্বাচনের আগে বিএনপিকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গড়ে তোলেন গণফোরাম সভাপতি কামাল। গণফোরামের প্রার্থীরা যেমন ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে ভোট করেন, তেমনি বিএনপির পুরনো জোটসঙ্গী নিবন্ধনহীন জামায়াতের নেতারাও ওই প্রতীকেই প্রার্থী হন।
আওয়ামী লীগের এক সময়ের নেতা কামাল বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী জামায়াতের সঙ্গে নিজের আদর্শিক মতভিন্নতার কথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের সময় বলেছিলেন। কিন্তু জামায়াতের সঙ্গে একই প্রতীকে তার দলও ভোটে নামার পর সাংবাদিকদের এই সংক্রান্ত প্রশ্ন এড়িয়ে যাচ্ছিলেন। এমনটি একবার প্রশ্নকর্তা সাংবাদিককে ‘খামোশ’ বলেও ধমকেছিলেন তিনি।
তবে ভোটের ঠিক আগে ভারতের সংবাদপত্র ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, বিএনপি যে জামায়াতকে সঙ্গে রাখবে তা তিনি ‘জানতেন না’। সংবাদ সম্মেলনেও বিএনপির বিরুদ্ধে একই অভিযোগ করলেন কামাল; অথচ এই জামায়াতকে রাখা নিয়েই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে বিকল্প ধারা শেষ পর্যন্ত যোগ দেয়নি।
এখন কি তবে বিএনপিকে চাপ দেবেন জামায়াতকে ছেড়ে দিতে- সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের জবাবে কামাল বলেল, আমি তো মনে করি, সেটা বলা যেতে পারে। যদি বিএনপি জামায়তকে না ছাড়ে তাহলে কী করবেন- প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, হাইপোথেটিক্যাল প্রশ্নৃ যদি বলে কোনো প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যায় না। যখন হবে তখন বলব।
নিবন্ধন হারিয়েছে বলে বিএনপির ২০ দলীয় জোটের সঙ্গী জামায়াত নিজের নামে ভোট করতে পারেনি। তাদের নেতাদের বিএনপি ধানের শীষ প্রতীক দেওয়ার পর দাবি করেছিল, জামায়াত ভোটে নেই। কিন্তু জামায়াত বরাবরই প্রচারে ধানের শীষের ওই প্রার্থীদের দলীয় নেতা হিসেবেই পরিচয় দিচ্ছিল এবং ভোটের দিন ওই প্রার্থীদের বর্জনের ঘোষণা দলীয়ভাবেই দেওয়া হয়েছিল।
জামায়াত প্রশ্নে ভবিষ্যতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট কিংবা গণফোরাম কোন পথে হাঁটবে- জানতে চাইলে কামাল বলেন, আমাদের বক্তব্য একদম পরিষ্কার যে, জামায়াতকে নিয়ে আমরা রাজনীতি কখনও করি নাই। কোনোদিন করার কথা চিন্তাও করি নাই। যেটা করেছি। সেটা আমি সঙ্গে সঙ্গে বলেছি যে, এটা তো আমাদেরকে বলা হয়নি যে, তারা (জামায়াত) থাকবে এটার মধ্যে। ভবিষ্যতে এই ব্যাপারটি একদম পরিষ্কার, জামায়াতকে নিয়ে আমরা করব না।
সংবাদ সম্মেলনের এই পর্যায়ে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু বলেন, আমরা কিন্তু ঐক্যফ্রন্ট করেছি বিএনপির সাথে, ২০ দলের সাথে করি নাই। তারপরেও জামায়াতের নাম যখন চলে আসছে যে, ওরা ২২ জন ধানের শীষে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। তখন বিএনপির সেক্রেটারি জেনারেলকে জানিয়েছি। তিনি (বিএনপি মহাসচিব) তার দলের মিটিংয়ে তা উত্থাপন করেছে। তারা সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ দিয়েছে যে, না জামায়াত হিসেবে কাউকে আমরা দেইনি, আমরা সব ধানের শীষ হিসেবে দিয়েছি।
আমরা বলেছি যে, অবিলম্বে এই ব্যাপারটা সুরাহা করার জন্য। অবশ্যই আমরা জামায়াতের ব্যাপারটার সুরাহা চাই। আমরা জামায়াতকে নিয়ে আগেও রাজনীতি করিনি, এখনও করি না, ভবিষ্যতেও করব না, বলেন এক সময়ের আওয়ামী লীগ নেতা মন্টু।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে গণফোরামের যে দুজন নির্বাচিত হয়েছেন, তাদের শপথ নেওয়া বিষয়ক সিদ্ধান্ত জানতে চাইলে মন্টু বলেন, আমরা এই বিষয়ে আলাপ করে পরে সিদ্ধান্ত নেব।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে ‘ভোট ডাকাতি’ হয়েছে অভিযোগ তুলে পুনর্নির্বাচনের দাবি তুলেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। বিএনপি সরাসরিই জানিয়েছে যে তাদের দল থেকে নির্বাচিত ছয়জন শপথ নেবে না।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে গণফোরামের দুজন এই প্রথম নির্বাচিত হওয়ার কামাল শপথের বিষয়ে ‘ইতিবাচক’ সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা সাংবাদিকদের বলেছিলেন; যাতে তাদের শপথ নেওয়ার ইঙ্গিত ছিল।
কিন্তু বিএনপির কড়া প্রতিক্রিয়ার পর গণফোরামের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের বলা হয়, কামাল হোসেন শপথ নেওয়ার কোনো ইঙ্গিত দেননি। তবে এ বিষয়ে এখনও গণফোরামের সিদ্ধান্ত নিতে না পারাটা তাদের দোদুল্যমানতাই স্পষ্ট করেছে।
ভোটের বিষয়ে কামাল হোসেন বলেন, যেটা তারা (আওয়ামী লীগ) ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি করেছে, ৩০ ডিসেম্বর সেটার ধারাবাহিকতা রক্ষা করেছে। ভালো। ধারাবাহিকতা রক্ষা করার সাথে সাথে অর্থপূর্ণ নির্বাচন যেটাকে দাবি করতে পারেন, সেটা করেন।
যেভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করা হয়েছে, এভাবে মানুষের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করা যায় না। তড়িঘড়ি করে রাতের অন্ধকারে ভোট দিয়ে একটা ফলাফল ঘোষণা করে দেওয়া। সরকারকে বলব, একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন। বিতর্ক না বাড়িয়ে অবাধ নির্বাচনের ব্যাপারে ঐকমত্য আছে, যেখানে সরকারকে এটার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে সকলকে সুযোগ দেওয়া উচিৎ।
মতিঝিলে পুরাতন ইডেন হোটেলের প্রাঙ্গণে গণফোরামের কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির এই বৈঠক হয়। সংবাদ সম্মেলনে দলের সাধারণ সম্পাদক মন্টু বলেন, সভায় নেতৃবৃন্দ দৃঢ়ভাবে মত প্রকাশ করেন যে, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে ভবিষ্যত গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জাতীয় ঐক্যের কোনো বিকল্প নাই। তবে তাড়াতাড়ি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করতে গিয়ে অনিচ্ছাকৃত যেসব ভুল-ত্র“টি সংঘটিত হয়েছে তা সংশোধন করে ভবিষ্যতের জন্য সুদৃঢ় জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে বিএনপি ও গণফোরাম ছাড়াও রয়েছে কাদের সিদ্দিকীর কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগ, আ স ম রবের জেএসডি ও মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য। গণফোরাম আগামী ২৩ ও ২৪ মার্চ ঢাকায় জাতীয় কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানান সাধারণ সম্পাদক মন্টু। তার আগে জেলায় জেলায় কেন্দ্রীয় নেতারা সফর করবেন বলে জানান জানান তিনি।
বৈঠকে সভাপতি কামাল ও সাধারণ সম্পাদক মন্টু ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সুব্রত চৌধুরী, রেজা কিবরিয়া, মফিজুল ইসলাম খান কামাল, মোকাব্বির খান, এস এম আলতাফ হোসেন, আ ও ম শফিউল্লাহ, মোশতাক আহমেদ, রফিকুল ইসলাম পথিকসহ কেন্দ্রীয় কমিটির ৭০ জন।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *