November 24, 2024
লাইফস্টাইল

জাকাত গরিবের অধিকার

জাকাত ইসলামের তৃতীয় স্তম্ভ। গুরুত্বপূর্ণ একটি ফরজ ইবাদত। নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং খুলাফায়ে রাশিদীনের সোনালি শাসনামলে সামাজিকভাবে তাদেরই মুসলিম গণ্য করা হতো যারা নামাজ পড়তেন এবং জাকাত দিতেন। পবিত্র কুরআনের প্রায় ৩২ স্থানে জাকাতের কথা বলা হয়েছে। জাকাত ইসলামের দৃষ্টিতে অনুদান নয় বরং গরিবের অধিকার।

জাকাত প্রদান করলে সম্পদ বৃদ্ধি পায় এবং পবিত্র হয়। এ মর্মে সূরায়ে রূমের ৩৯ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, তোমাদের মধ্য থেকে যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে জাকাত প্রদান করে তারাই (নিজেদের সম্পদ) কয়েক গুণ বৃদ্ধি করে। সূরা তাউবার ১০৩ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, হে নবী! আপনি তাদের সম্পদ থেকে জাকাত গ্রহণ করুন। এতে আপনি তাদের পরিশুদ্ধ ও পবিত্র করবেন।

সূরায়ে তাউবার ৩৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘যারা সোনা-রুপা (অর্থ-সম্পদ) সঞ্চয় করে কিন্তু আল্লাহর পথে ব্যয় করে না (জাকাত দেয় না) তাদের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ শোনাও।’

পরের আয়াতে যন্ত্রণাদায়ক এ শাস্তির বিবরণ দিয়ে বলা হয়েছে, ‘ঐ সোনা-রুপা (অর্থ-সম্পদ) জাহান্নামের আগুনে দগ্ধ করা হবে এবং তা দ্বারা তাদের কপালে, পিঠে, পাজরে দাগ দেওয়া হবে। তাদের বলা হবে, তোমরা এগুলোই সঞ্চয় করতে। এখন এর স্বাদ ভোগ করো।’

জাকাত বিলি করার তারিখ ও সময় ঘোষণা দিয়ে নিম্নমানের হাজার হাজার শাড়ি ও লুঙ্গি বিতরণ করার দ্বারা যদিও জাকাত আদায় হয় কিন্তু জাকাতের বৈশিষ্ট্য ও সৌন্দর্য এতে নষ্ট হয়। তাই যাদের জাকাতের পরিমাণ বেশি তারা নিজেদের পরিচিত মহল থেকে জাকাত গ্রহণযোগ্য গরিব মানুষদের তালিকা এবং তাদের অভাবের তথ্য সংগ্রহ করুন। নিজের জাকাতের পরিমাণের সঙ্গে এ তথ্য মিলিয়ে একটি পরিকল্পনা তৈরি করুন। পরিকল্পনাতে জাকাত ভোগকারীর সংখ্যা বৃদ্ধির চেষ্টা না করে প্রয়োজন পূরণের চেষ্টা করুন।

যাকে জাকাত দেবেন তাকে এ পরিমাণ জাকাত দিন যেন আপনাদের জাকাত গ্রহণ করে তার অভাব পূর্ণরুপে মিটে যায়। অভাবের তাড়নায় যেন আর কারো কাছে তাকে হাত পাততে না হয়। যাদের কর্মক্ষমতা, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা আছে কিন্তু পুঁজির অভাবে কর্ম করতে পারছে না, আপনি আপনার জাকাত দিয়ে তাদের কাউকে কর্ম করার ব্যবস্থা করে দিন। একটি ক্ষুদ্র শিল্পপ্রতিষ্ঠান তাকে দাঁড় করিয়ে দিন। ছোট যানবাহন কিনে দিন। যা তার সংসারের উপার্জনের জন্য সুন্দর উপলক্ষ হবে।

কোরআনে বর্ণিত জাকাতের অন্যতম একটি খাত হলো ইসলামের সেবা। তাই যে সব ব্যক্তি নিজেদের জীবন ইসলামের সেবায় সদা নিয়োজিত রেখেছেন, এলমে দ্বীন শিখা ও শিখানোর কাজে, ইসলামের প্রচার ও প্রতিষ্ঠার কাজে নিজের জীবনের বেশি সময় ব্যয় করছেন, তাদের মধ্যে যারা জাকাত গ্রহণযোগ্য জাকাতের উল্লেখযোগ্য একটি বড় অংশ তাদের মাঝেও বিলি করুন।

নামাজ যেভাবে রাকাত হিসাব করে আদায় করতে হয়, রোজা যেভাবে দিন হিসাব করে রাখতে হয়, জাকাতও সেভাবে সম্পদ হিসাব করে দিতে হয়। এটা ফরজ। তাই সম্পদের পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব না-করে অনুমান করে কিছু দিয়ে দিলে জাকাত আদায় পূর্ণ হবে না। আবার নামাজের যেমন ওয়াক্ত আছে, রোজার যেমন ওয়াক্ত আছে, হজের যেমন ওয়াক্ত আছে, জাকাত হিসাবেরও তেমন ওয়াক্ত আছে। হিজরী বর্ষপঞ্জীকার যে তারিখে আপনি প্রথম নেসাবের মালিক হয়েছিলেন প্রতি বছর হিজরী বর্ষপঞ্জীকার ঠিক সেই তারিখে আপনার সম্পদ হিসাব করে জাকাত নির্ণয় করতে হবে।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *