April 25, 2024
আঞ্চলিকফিচার

চেতনায় একুশ

বিপুল কান্তি চৌধুরী : একুশ মানে বিশ্বাস, একুশ মানে চেতনা, একুশ মানে স্বাধিকার অর্জনের প্রেরণা।প্রত্যেক জাতির জীবনে এমন কিছু দিবস থাকে যা স্বমহিমায় উজ্জ্বল। বাঙালি জাতীয় জীবনে তেমনই স্মৃতিবিজড়িত মহিমা উজ্জ্বল একটি দিন একুশে ফেব্রুয়ারি। একুশ বাঙালির স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রথম সোপান।বাঙালি জাতি ভাষার জন্য যে আত্মত্যাগের দৃষ্টান্ত বিশ্বের বুকে রেখেছে তা বর্নণাতীত। মহান একুশে ফেব্রুয়ারি প্রতি বছর আমাদের কাছে বয়ে আনে এক অবিনাশী চেতনা।বাঙালির সাহিত্য-সংস্কৃতির সাথে এ চেতনা মিশে আছে স্বাভাবিকতা। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন বাঙালিকে দিয়েছে আপন সত্তা আবিষ্কারের মহিমা।

বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন বাঙালির ইতিহাসকে অমর করে রেখে। এই ইতিহাস একদিকে যেমন আনন্দের অন্যদিকে বেদনাদায়ক। ১৯৪৭ সালে ইংরেজরা বিদায় নিলে শুরু হয় পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর স্বার্থ হাছিলের ষড়যন্ত্র।সমগ্র পাকিস্তানের মধ্যে বাংলাভাষাকে মাতৃভাষা চাইত শতকরা ৫৮ ভাগ জনগণ।হিসাব অনুযায়ী বলা যায় প্রায় সাতকোটি মানুষের মুখের ভাষা ছিল বাংলা।বাঙালি বুঝতে পেরেছিল তাদের পরাধীনতার শিকলে বাধতে চাই পাকিস্তানি শোষকেরা।বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা না করা তারই অপকৌশল। তাইত আমজনতা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে।সেটা আরও বেগবান হয়ে উঠে যখন ১৯৫২ সালের ৩০ জানুয়ারি পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী নাজিমউদ্দীন ঢাকায় এক জনসভায় উর্দুকেই পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা করেন। বীর বাঙালি ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের বাংলাভাষা সংক্রান্ত আনীত প্রস্তাব গণপরিষদে বাতিল হয়।

ধীরে ধীরে দানা বাধা আন্দোলন এবার রুপ নেয় উত্তাল ঢেউয়ের দোলায়।শোষক গোষ্ঠীর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে বাংলা মায়ের সাহসী সন্তানরা ভাষার দাবীতে রাজপথে নেমে আসে। ২১ ফ্রেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা জারি ভঙ্গ করে রাজপথে নামে রফিক,শফিক , জব্বার,সালাম, বরকত, শফিউররা।ফাগুন মাসের আগুন তাদের অন্তরে।মায়ের ভাষার মর্যাদা রাখতে জীবন দিতেই রাজমিছিলে এসেছিলেন তারা।বর্বর ঘাতকদের বুলেটর আঘাতে পিচঢালা রাজপথ মুহুর্তেই হয়ে উঠে রক্তে রঞ্জিত।বিশ্বের বুকে সৃষ্টি হয় এক যুগান্তকারী দৃষ্টান্ত।বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করতে বাধ্য হয় হায়েনার দল।সৃষ্টি হল নতুন এক ইতিহাস-চেতনার ইতিহাস।

ভাষার এই আন্দোলনই আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনের সুপ্তবীজ।স্বাধীন জাতি হিসাবে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করা জাতিতে আজ আমরা স্বমহিমায় উজ্জ্বল। তাইত কবি শামসুর রাহমান বলেছেন,

“স্বাধীনতা তুমি
শহীদ মিনারে অমর একুশে ফেব্রুয়ারির উজ্জ্বল সভা”

একুশ আমাদের মুক্তির চেতনা । কিন্তু গভীর পরিতাপের বিষয় এই চেতনা সর্বত্র অনুসৃত হচ্ছে না।শঠতার রাজনীতি, দালান চক্রের অপ সংস্কৃতির মনোভাব এ-ই চেতনাকে মলিন করছে।সরকারের কাছে বিনীত আহবান প্রতিটি সরকারি,আধা সরকারি, প্রাইভেট সকল প্রতিষ্ঠানে বাংলা ভাষার সঠিক প্রয়োগে কড়া নজরদারি রাখার।একুশের চেতনা ছড়িয়ে পড়ুক সবার মাঝে সেই কামনা করি।সকল ভাষা সৈনিকদের আত্মার শান্তি কামনা করি।

লেখকঃ সংবাদকর্মী এবং পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *