চুড়িহাট্টা ট্র্যাজেডি: ৮ জনের লাশ বুঝে পেলেন স্বজনরা
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের দুই সপ্তাহ পর আট জনের লাশ বুঝে পেলেন স্বজনরা, যাদের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে ডিএনএন পরীক্ষার মাধ্যমে। অগ্নিকাণ্ডে জীবন্ত দগ্ধদের মধ্যে ১৯ জনের মৃতদেহ চেনা সম্ভব না হওয়ায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) তাদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে।
লাশের দাবি নিয়ে আসা স্বজনদের ডিএনএ-এর সঙ্গে মিলিয়ে দেখার পর এ পর্যন্ত ১১ জনের পরিচয় নিশ্চিত করতে পেরেছে সিআইডি। সেই ১১ জনের মধ্যে আটজনের মৃতদেহ বুধবার পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বাকি তিনজনের মৃতদেহ বৃহস্পতিবার হস্তান্তর করা হবে বলে চকবাজার থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মুরাদুল ইসলাম জানান।
তিনি বলেন, নিহত আহসানুল্লাহ, ফাতেমাতুজ জোহরা বৃষ্টি, তানজীল হাসান রোহান, নুরুজ্জামান, সালেহ আহমেদ লিপু তার স্ত্রী নাসরিন জাহান, শাহিন আহমেদ এবং এনামুল হকের মরদেহ স্বজনদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। বাকি তিনজন হলেন ইব্রাহিম, দুলাল কর্মকার ও নুরুল হক।
সিআইডির ফরেনসিক বিভাগ ১১ জনের ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদন তদন্ত কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর করার পর প্রত্যেকের পরিবারকে ফোন করে লাশ নিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে আসতে বলে পুলিশ। এ সময় স্বজনদের কান্নায় ভারি হয়ে ওঠে হাসপাতালের পরিবেশ।
নাসরিন জাহানের ভাই আনোয়ার হোসের রনি জানান, তারা পুলিশের ফোন পেয়ে ঢাকা মেডিকেলের মর্গে এসেছেন লালবাগের মেয়ে বৃষ্টির লাশ নিতে মর্গে যান বাবা জসিম উদ্দীন ও চাচা গিয়াস উদ্দীন। বৃষ্টির সঙ্গে একই রিকশায় চড়ে সেই রাতে চুড়িহাট্টা দিয়ে যাচ্ছিলেন তার বান্ধবী রেহনুমা তারান্নুম দোলা। তার লাশ এখনও শনাক্ত করা যায়নি।
নিহত সালেহ আহম্মেদ লিপু (৪২) ছিলেন ইগলু আইসক্রিমের ডিস্ট্রিবিউটর। তার স্ত্রী নাসরিন জাহান (৩৩) চাকরি করতেন মদিনা গ্র“পে। মর্গে তাদের লাশ নিতে আসেন লিপুর বাবা লাল মিয়া। নিহত নুরুজ্জামান হাওলাদার (৪৩) ছিলেন রিকশাচালক। বাড়ি পটুয়াখালী সদর উপজেলায় হলেও তিনি থাকতেন নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়।
মো. শাহীন মোল্লার (৪০) বাড়ি ফরিদপুরে, চকবাজারেই থাকতেন তিনি। আর তানজিন হাসান রুহান (২১) ছিলেন নর্থ সাউথ ইনভার্সিটির বিবিএ দ্বিতীয় সেমিস্টার শিক্ষার্থী। গত ২০ ফেব্র“য়ারি রাতে চকবাজারের চুড়িহাট্টা মোড়ে কয়েকটি ভবনে আগুন লাগার পর ১৫ ঘণ্টার চেষ্টায় তা নেভায় ফায়ার সার্ভিস। পরদিন ঢাকা মেডিকেলের মর্গে পাঠানো হয় ৬৭টি লাশ ও একজনের একটি বিচ্ছিন্ন হাত।
পরের দুই দিনে ৪৮ জনের লাশ শনাক্ত করে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করে ঢাকা মেডিকেল কর্তৃপক্ষ। বাকিদের পরিচয় জানতে ডিএনএ পরীক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয় সিআইডি পুলিশকে। চুড়িহাট্টা মোড়ের আগুনে দগ্ধদের মধ্যে যারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন, তাদের মধ্যে চারজনের মৃত্যু হওয়ার ভয়াবহ ওই অগ্নিকাণ্ডে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭১ জনে।