May 10, 2024
আঞ্চলিক

চিকিৎসা ও গবেষণাকে প্রাধান্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে বিকশিত করতে চাই

একান্ত সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
খুলনার উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহবুবুর রহমান

দ. প্রতিবেদক
গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার প্রত্যন্ত এক গ্রাম গোপালপুর। সেখানে জন্মগ্রহণ করেন প্রফেসর ড. মাহবুবুর রহমান। গ্রামের ছায়া সুনিবিড় আ¤্রকাননে পন্তিত মশাইয়ের কাছে তাঁর প্রথম পাঠ গ্রহণ। অতঃপর শৈশব, কৈশোরে পিতার কর্মসূত্রে বিভিন্ন জেলায় গমণ এবং এক সময় খুলনা জিলা স্কুলের ছাত্র হয়ে ওঠা। সেখান থেকে এসএসসি পাশ করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হয়েও শেষপর্যন্ত ফিরে আসতে হয় খুলনায় এবং বিএল কলেজের শিক্ষার্থী হয়ে উচ্চমাধ্যমিকের গন্ডি পেরোতে হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী শেখ হাসিনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মাহবুবুর রহমান সাফল্যের সাথে গ্রাজুয়েশন শেষ করেন ১৯৮৭ সালে এবং ৮ম বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ডাক্তার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন বৃহত্তর বরিশালের গৌরনদী নামক প্রত্যন্ত একটি এলাকায়।
রাজনৈতিকভাবে তখন ভয়ংকর একটি গোলমেলে এলাকা ছিল এই গৌর নদী। বিবাদমান চরমপন্থি দলের সদস্যরা তখন এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে রেখেছে। খুনখারাবি ছিল নৈমিত্তিক ঘটনা। এক প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য বলেন, ডাক্তারি তো শুধু পাশ করার জন্য পড়িনি। এর গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক হলো সেবা। তাই পোস্টিং নিয়ে দুশ্চিন্তা করিনি, কাজে যোগ দিয়েছি এবং সেবার মাধ্যমে মানুষের আস্থা ও ভালবাসা অর্জন করেছি।
শিক্ষাজীবনের সর্বস্তরে কৃতি এই শিক্ষার্থী অনেক কাজে প্রথম হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। যেমন, তিনিই প্রথম ঐবসধঃড়ষড়মু বিষয়ের এফসিপিএস পরীক্ষায় বাংলাদেশে প্রথম পার্টওয়ান পাশ করেন কৃতিত্বের সাথে। ঐবসধঃড়ষড়মু হল রক্তবিজ্ঞান, বিষয়বস্তু হিসেবে যার পাঠের আওতাভুক্ত থাকে রক্ত তৈরির অর্গানসমূহ ও রক্ত সংক্রান্ত রোগব্যধিসমূহ। তিনি এ বিষয়ে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। দীর্ঘ দশ বছর ক্যান্সার হাসপাতালে কাজ করেছেন এই প্রতিথযশা ডাক্তার, বলতে গেলে তার বিকাশই হয়েছে তাঁর হাতে।
দেশে বর্তমানে ৫০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলমান আছে। উপাচার্যের কাছে জানতে চাওয়া হয়, নবিন এই মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ পরিচিতি তৈরির ক্ষেত্রে তিনি কোন্ বিষয়টাকে প্রাধান্য দেবেন? জবাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথা উল্লেখ করে উপাচার্য বলেন, আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ‘রিসার্চ ব্রান্ড ইমেজ’ তৈরির চেষ্টা করবো। এটি হবে আমার অগ্রাধীকার ভিত্তিক উদ্যোগ। আগামী ২০২১/২২ শিক্ষাবর্ষে এটি খুলনা বিভাগের মেডিকেল কলেজসমূহ অ্যাফিলিয়েশন দেবে। সেভাবেই সকল প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। আমি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বর্তমান টিচিংলার্নিং ও পেশাগত জীবনে একটি গুণগত পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে আমার সকল পরিকল্পনা সাজাচ্ছি। যেহেতু বর্তমান যুগ প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ ও উদ্ভাবনের যুগ, প্রতিটি ক্ষেত্রে আমি তাই উদ্ভাবনমূলক কর্মকান্ডকে প্রাধান্য দেবো। আমাদের পরিকল্পনা বিভাগ এ বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ নিচ্ছে এবং চমৎকার একটি টিমওয়ার্ক রয়েছে আমাদের। শিক্ষকদেরকে যেমন মৌলিক গবেষণার বিষয়ে তাগিদ দেওয়া হবে, তেমনি শিক্ষার্থীদেরকেও তাগিদ দেওয়া হবে তারা যেন জনগণের স্বাস্থ্যসমস্যা ও সেবার মৌলিক দিকগুলি নিয়ে গবেষণামূলক কাজে ব্রত থাকে। বিশেষ করে আমি যে কথাটা বলতে চাই তাহলঃ শিক্ষক নিয়োগ ও পদন্নতির সাথে আমি মৌলিক গবেষণা ও শিক্ষার্থীদের গবেষণায় নেতৃত্ব দেয়ার বিষয়টাকে এমনভাবে ট্যাগ করতে চাই, যাতে গ্রাজুয়েশন ও পোস্ট গ্রাজুয়েশন লেভেলে আমাদের অ্যাকাডেমিক কমিউনিটি গবেষণাকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করেন ও তাতে ব্রত থাকতে আগ্রহী হন।
এক প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০০ একর ভ‚মি অধিগ্রহণ ও বিভিন্ন প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডির কাজ চলছে। কাজের অগ্রগতি সন্ত্যষজনক। প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে তাঁর প্রত্যাশা সম্পর্কে বলেন, এতদাঞ্চলের মানুষ আমাকে অন্যায় চাপ দেওয়া থেকে বিরত থাকবেন, গুজবে কান না দিয়ে প্রকৃত সত্যানুসন্ধানের চেষ্টা করবেন ও উপাচার্যের যে স্বাধীনতা আমার সেই স্বাধীনতাটিকে তারা অক্ষত রাখবেন। আশাকরি আমার কাজের পরিধি ও সীমাবদ্ধতা সবাই বুঝবেন ও আমাকে সে মোতাবেক সহযোগীতা করবেন। প্রতিবছর চিকিৎসার জন্য প্রচুর মানুষ বিদেশে পাড়ি জমান। এতে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় হয়, যা অনভিপ্রেত। আমার লক্ষ্য, মানসম্মত শিক্ষা ও প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে দক্ষ জনবল তৈরির ব্যবস্থাটাকে এমন একটি উৎকর্ষের যায়গায় নেওয়া, যাতে বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগের মাধ্যমে স্বাস্থ ও চিকিৎসাখাতে মানুষের যে আস্থা বর্তমান সরকার ফিরিয়ে এনেছে, তার শ্রীবৃদ্ধি ও উত্তরোত্তর বিস্তার ঘটে।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *