গ্যাস সংকটের কারণে বন্ধ যমুনা সার কারখানার উৎপাদন
১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় জামালপুরের সরিষাবাড়ির তারাকান্দিতে দেশের সর্ববৃহৎ ইউরিয়া সার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান যমুনা সার কারখানা। স্বল্প গ্যাসে তুলনামূলক বেশি সার উৎপাদন করতে পারে এই কারখানাটি।
অন্যদিকে গুণগত মান ভালো হওয়ায় এই সারের চাহিদাও অনেক বেশি। তবে গ্যাস সংকটের কারণে চলতি বছরের ২১ জুন বন্ধ হয়ে যায় এ কারখানার ইউরিয়া উৎপাদন। এর মধ্যে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে বিদ্যুতের লোডশেডিং। ফলে সার উৎপাদন ও সরবরাহে অনিশ্চয়তায় পড়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ।
যমুনা সার কারখানা থেকে জামালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, রাজবাড়ি ছাড়াও উত্তরবঙ্গের ১৬ জেলার প্রায় আড়াই হাজার ডিলার সার উত্তোলন করেন। কারখানা দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকলে আসন্ন বোরো-আমন মৌসুমে কৃত্রিম সার সংকটের পাশাপাশি কৃষকদের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা করছে সার ব্যবসায়ীরা।
সার ব্যবসায়ী ফারুক হোসেন বলেন, এখন যদি কারখানা উৎপাদনে না যায় তাহলে আসন্ন বোরো মৌসুমে কৃষকদের সার সরবরাহ করতে পারবে না কর্তৃপক্ষ। এতে করে ডিলাররাসহ কৃষকেরাও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
কারখানা এলাকার ট্রাকচালক ফরহাদ বলেন, আমাদের আয়-রোজগার এই কারখানার ওপর নির্ভরশীল। এখন এই কারখানা বন্ধ থাকলে আমাদের না খেয়ে থাকতে হয়। অনেকে কারখানা ছেড়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় চলে গেছে। সবাই তো আর কারখানা ছেড়ে চলে যেতে পারছে না। আমরা চাই এই কারখাানাটি দ্রুত চালু হোক।
তারাকান্দি ট্রাক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম মানিক জানান, কারখানা কেন্দ্রিক ৪২০টি ট্রাক রয়েছে। এর সাথে জড়িত রয়েছে ৮৪০ জন চালক ও চালকের সহযোগী। ট্রাক মালিকরাও রয়েছে। এছাড়াও এই কারখানার সাথে হাজারও শ্রমিক জড়িত। কারখানা বন্ধ থাকায় এরা সবাই মানবেতর জীবন-যাপন করছে।
সার ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, প্রতিবছর কোনো না কোনো অজুহাতে যমুনা সার কারখানা বন্ধ রেখে দেশকে সার আমদানী নির্ভর করে তুলতে চাচ্ছে একটি অসাধু চক্র।
সার ব্যবসায়ী সরকার আবুল হোসেন বলেন, আমরা অতীত থেকে লক্ষ্য করছি যে, ধান লাগানোর মৌসুম আসলেই কোনো না কোনো অজুহাতে কারখানা বন্ধ রাখা হচ্ছে। আর এই সুযোগে বিদেশ থেকে কয়েকগুন বেশি মূল্য দিয়ে সার আমদানি করা হচ্ছে। প্রতি টনে সরকারকে ৮০ হাজার টাকার মতো ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। এতে করে সরকার ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কিন্তু একটি অসাধু চক্র লাভবান হচ্ছে।
কারখানায় সার উৎপাদন বন্ধ থাকায় প্রতিদিন অলস সময় পার করছে কারখানার সহস্রাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী।
জামালপুরের মানবাধিকার কর্মী জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, যমুনা সার কারখানায় প্রায় ১৬০০ কর্মচারী রয়েছে। কারখানা বন্ধ থাকলেও এই কর্মচারীদের কোটি কোটি টাকার বেতন তো বন্ধ থাকছে না। সরকার চাইলেই গ্যাস সরবরাহ করতে পারে। এতে করে সরকারের শত শত কোটি টাকার লোকসান হবে না।
এ বিষয়ে জানতে যমুনা সার কারখানায় গেলে সেখানে গষমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে দেখা করেননি কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী মো. জাকির হোসাইন। কারখানায় প্রবেশে সাংবাদিকদের জন্য জারি করা হয়েছে অলিখিত নিষেধাজ্ঞা। এরপর তাকে কয়েকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
তবে মুঠোফোনে যমুনা সার কারখানার মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) আব্দুল হাকিম সাংবাদিকদের জানান, যমুনা বন্ধ থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সকলেই। গ্যাস সংকট ও লোডশেডিংয়ের কারণে বন্ধ রয়েছে উৎপাদন। নিয়মিত গ্যাস সরবরাহ করা হলেই আবারও উৎপাদনে ফেরার আশা রয়েছে।
১৭০০ মে. টন উৎপাদনক্ষম ইউরিয়া উৎপাদনকারী যমুনা সারকারখানায় প্রতিদিন ৪৫ মিলিয়ন ঘন ফুট গ্যাসের প্রয়োজন হয় ।