খেলাপি ঋণ-অর্থ পাচারের তথ্য চেয়েছে হাই কোর্ট
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
গত ২০ বছরে এক কোটি টাকার উপরে ঋণ খেলাপি, ঋণের সুদ মওকুফ, অর্থপাচার ও অর্থপাচারকারীদের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে প্রতিবেদন চেয়েছে হাই কোর্ট। এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাই কোর্টে বেঞ্চ গতকাল বুধবার রুলসহ এ আদেশ দেয়।
আদেশে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে তিন দফা নির্দেশনা দিয়ে আদালত আদেশে বলেছে, দেশের সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক খাতে একটি নাজুক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা উধাও হয়ে গেছে। বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু কোনো সিকিউরিটি মানি নাই। যারা লোন নিচ্ছে তাদের ঠিকানায় খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এভাবে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়ে যাচ্ছে এবং বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলো চরম দুরবস্থার মধ্যে পড়েছে। এই পরিস্থিতি দ্রুত কাটিয়ে তুলতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়ার উপর জোর দিচ্ছে আদালত।
যারা ঋণ নিয়েছেন এবং অর্থ পাচার করেছেন, তাদের তালিকা করে আদালতে দাখিল করতে বলেছে আদালত। আত্মসাতের অর্থ দেশ কিংবা বিদেশের যেখানেই থাকুক না কেন, তা ফিরিয়ে আনতে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তাও প্রতিবেদন উলেখ করতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকে আর্থিক দুর্নীতি, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তাকে কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং আর্থিক খাতে অনিয়ম, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা বন্ধে কমিশন গঠন করে সে কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।
এছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন, সালেহ উদ্দিন আহমেদ, তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম, সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ, সিটি ব্যাংক এনএ বাংলাদেশের সাবেক সিইও মামুন রশিদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন প্রতিনিধি ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধির সমন্বয়ে কমিশন গঠনের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে অর্থপাচার রোধে কেন কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে না, রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।
চার সপ্তাহের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিব, অর্থ মন্ত্রণালয়ের দুই সচিব, আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আব্দুলাহ আল মাহমুদ বাশার। আদেশের পর মনজিল মোরসেদ সাংবাদিকদের বলেন, ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনার মধ্যে যেসব অনিয়ম-ত্র“টি আছে সেগুলো চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া জন্য উকিল নোটিস পাঠিয়েছিলেন তিনি। জবাব না পেয়ে জনস্বার্থ বিবেচনায় হিউমেন রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষ থেকে মঙ্গলবার রিট আবেদন করা হয়।
এক প্রশ্নে এই আইনজীবী বলেন, আদালত যে তালিকা চেয়েছে, সে তালিকা এলেই বোঝা যাবে কারা লোন নিয়েছেন, কারা লোন নিয়ে পরিশোধ করেননি, কারা মানি লন্ডারিং করেছেন বা করছেন। এগুলোর বিষয়ে শুনানির সময় আমরা পরবর্তী নির্দেশনা চাইব।
অর্থপাচার বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, মানি লন্ডারিংয়ের বিষয়ে কিছুদিন অগে একটা রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছে আমেরিকা থেকে। সেখানে কিন্তু বলা হয়েছে কত হাজার কোটি টাকা বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে। যে সমস্ত দেশে অর্থ যায় তাদেরও কিন্তু রিপোর্ট আছে। এসব রিপোর্ট ব্যাংকের গভর্নরকে কালেক্ট করে আদালতকে জানাতে হবে।
এই আইনজীবী বলেন, পত্র-পত্রিকায় যা দেখেছি, তাতে এক লক্ষ কোটি টাকার উপরে অর্থপাচার হয়েছে বলে আমরা জানি। আর লোন নেওয়ার ক্ষেত্রে এক-দুই লক্ষ কোটি টাকার লোন বিভিন্ন লোকে পরিশোধ করছেন না।
আদালত যে তালিকা চেয়েছে, সেটার সময়সীমা কী হবে- জানতে চাইলে মনজিল বলেন, ২০ বছরের মধ্যে যে ঘটনাগুলো ঘটেছে, মূলত সেসব ঘটনার বিষয়ে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছিল।
তবে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বাশার সাংবাদিকদের বলেন, একটি কমিশন গঠন করে ঋণখেলাপি ও অর্থ আত্মসাৎকারীদের তালিকা করতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। তবে সে তালিকা দাখিলের নির্দিষ্ট তারিখ আদালত দেননি।