May 6, 2024
আঞ্চলিকলেটেস্টশীর্ষ সংবাদ

খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি অনুমোদনের আগেই বিতর্কের ঝড় !

 

জয়নাল ফরাজী

দলের প্রাথমিক সদস্য নন। ওয়ার্ড বা ইউনিয়নের কমিটিতে নাম নেই। আদৌ দল বা সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী কখনো ছিলেন না। এমনকি দলের প্রাথমিক সদস্য নন। তবুও পদভুক্ত হয়েছেন খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটিতে। উপরন্তু তালিকায় নাম আছে যুদ্ধাপরাধী, জামায়াত পরিবারের সন্তান ও সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্য। মোটকথা খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটিতে গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন, অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ তৃণমূলের। পাশাপাশি এক ঝাঁক সক্রিয় নেতার বদলে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে নিষ্ক্রিয়দের নাম।

সূত্রমতে, প্রস্তাবিত কমিটিতে বটিয়াঘাটা উপজেলার বাসিন্দা ও সাবেক সচিব প্রশান্ত কুমার রায়কে সহ-সভাপতি করা হয়েছে। সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে পাইকগাছা উপজেলার বাসিন্দা প্রকৌশলী প্রেম কুমারকে। তারা কখনোই খুলনা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন না। কমিটিতে পাইকগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীকের বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন শেখ মনিরুল ইসলাম ও ডুমুরিয়ায় বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন এজাজ আহমেদ। শেখ মনিরুল ইসলামকে সহ-সভাপতি এবং এজাজ আহমেদকে প্রস্তাবিত কমিটিতে উপ-প্রচার সম্পাদক করা হয়েছে। নৌকা প্রতীকের বিপক্ষে এজাজের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট ছিলেন এবিএম শফিকুল ইসলাম। তাকে কৃষি ও সমবায় সম্পাদক করা হয়েছে। খুলনা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি অসিত বরণ বিশ্বাসকে করা হয়েছে তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন অনেকে। দপ্তর সম্পাদক একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ হলেও সেখানে আনা হয়েছে একেবারেই অনভিক্ত মৃণাল কান্তি বিশ্বাসকে। যা নিয়ে দলের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এছাড়াও যারা আগে কখনও আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেনি এবং বিএনপি জামায়াত পরিবারের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এমন ব্যক্তিদের রাখা হয়েছে কমিটিতে।

এদিকে খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং সংরক্ষিত সাংসদ গেøারিয়া ঝর্ণার বিরুদ্ধে প্রস্তাবিত কমিটিতে গঠনতন্ত্র লংঘন, অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ এনে আবেদন করেছেন জেলার সাবেক দপ্তর সম্পাদক অধ্যাপক আশরাফুজ্জামান বাবুল। জাতির পিতার ম্যুরাল ভাংচুরকারী, রাজাকার পরিবারের সন্তান, মৃণাল বাহিনীর সদস্য, স্বজনপ্রীতি এবং দলের প্রাথমিক সদস্য নন, এমন ১৯ জনের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও সাধারণ সম্পাদক, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক ও দপ্তর-উপ-দপ্তর সম্পাদকের কাছে অভিযোগ করেছেন তিনি। একই অভিযোগে আরও বলা হয় ত্যাগী ও পরীক্ষিত বাদ পড়া নেতাদের মধ্যে রয়েছেন বিগত কমিটির বেশ কয়েকজন সদস্য। খসড়া ওই কমিটিতে জেলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক এসএম মোস্তফা রশিদী সুজার অনুসারীদেরও কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পৃথক তালিকা নিয়ে গত ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় যান জেলা সভাপতি শেখ হারুনুর রশীদ ও সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. সুজিত কুমার অধিকারী। দুই দফায় মিটিং বসেও তারা একমত হতে পারেননি। ১৯ সেপ্টেম্বর তারা খুলনায় ফিরে আসেন। পরদিন রাতেই একটি খসড়া কমিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. সুজিত অধিকারী বলেন, পুরোনো ও ত্যাগীদের কমিটি থেকে বাদ পড়েছে। প্রাথমিক সদস্য নন, এমন অনেকেই কমিটিতে প্রস্তাবিত কমিটিতে নাম আসছে। এক সাংসদের কোটায় পাঁচজন জায়গা পেয়েছেন, যাদের নাম কেউ কখনও শোনেনি। এসব বিষয়ে প্রয়োজনে দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে নালিশ হবে বলে তিনি জানান।

খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশীদ বলেন, দলের জেলা কমিটিতে জামায়াত পরিবারের সদস্য, বিতর্কিত ব্যক্তি ও হাইব্রীডদের ঠাঁই হবে না। প্রস্তাবিত কমিটিতে এমনসব বিতর্কিতদের ব্যাপারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দলের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হকসহ কেন্দ্রীয় হাইকমান্ড এনিয়ে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছেন। যাচাই-বাছাই শেষে অচিরেই একটি স্বচ্ছ কমিটি চ‚ড়ান্ত অনুমোদন হবে এমনটাই প্রত্যাশা করেন তিনি।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *