খুলনায় ব্যাটারী চালিত রিকশা বন্ধের সিদ্ধান্তে নগরবাসীর মিশ্র প্রতিক্রিয়া
জয়নাল ফরাজী
দুই দফা সময় বৃদ্ধির পর অবশেষে আজ বুধবার থেকে খুলনা মহানগরীতে ব্যাটারী চালিত রিকশা-ভ্যান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি)। এ সিদ্ধান্তকে যেমন অনেকে সাধুবাদ জানিয়েছেন, তেমনি অনেকে দিয়েছেন পরামর্শ, আবার কেউ কেউ করেছেন সমালোচনাও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে ‘ব্যাটারী চালিত রিকশা-ভ্যান চলাচল’ প্রসঙ্গ।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে এ প্রতিবেদকের ফেসবুক আইডিতে ‘খুলনা শহরে ব্যাটারী চালিত রিকশা বন্ধের সিদ্ধান্ত আপনি কিভাবে দেখেন’ এমন প্রশ্ন করা হলে এর পক্ষে-বিপক্ষে অন্তত অর্ধশত ব্যক্তি তাদের নিজের মতামত তুলে ধরেছেন।
সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা ও বর্তমান খুলনা মহানগর যুবলীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য মোঃ মশিউর রহমান সুমন বিষয়টিকে ‘যুক্তিযুক্ত’ বলে অভিহিত করেছেন। সিদ্ধান্তকে সময়পযোগী বলেছেন, মহানগর যুবলীগের সাবেক সদস্য শেখ শহীদ আলী, নিসচা’র জেলা সাধারণ সম্পাদক এস এম ইকবাল হোসেন বিপ্লব, খুলনা উন্নয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম সোহেল ইসহাক, শেখ আবু হুরায়রা আহমেদ, রেজওয়ান, সাইফুল ইসলাম মামুন, আর জি উজ্জ্বল, মোঃ ইমাম খান আকাশ, মোঃ জুম্মান ঢালী, মেহেদী হাসান মিশু।
মেহেদী হাসান সজীব লিখেছেন, ‘খুবই দুর্ভোগ! কতটা দুর্ভোগ সেটা অলিগলিতে না ঢুকলে বোঝা যাবে না। কোনো রিক্সাই পাওয়া যাচ্ছে না। পায়ে চালানো রিক্সা ও পাওয়া, যাচ্ছে না। আমার মনে হয় খুলনা ৯৯% রিক্সাই মটরওয়ালা। তারপরও দেশের স্বার্থে সব কিছুই মেনে নিতে রাজি আছি।’
মোঃ দেলোয়ার হোসেন লিখেছেন, ‘সিটি মেয়রকে অনেক ধন্যবাদ জানাই যে তিনি ব্যাটারি চালিত রিক্সা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বন্ধের অনেক কারণ আছে। যারা প্রতিনিয়ত ছোট বড় দুর্ঘটনায় পড়েছেন তারাই বুঝবে কেন ব্যাটারি চালিত রিক্সা বন্ধ করা হয়েছে। আমরা চাই রিক্সা চলুক পায়ে ব্যাটারিতে না। একটা কথা মনে রাখতে হবে সময়ের চাইতে জীবনের মূল্য অনেক বেশি।’
রায়হান রানা লিখেছেন, ‘কিছু মানুষের এক পা নেই, কেউ বৃদ্ধ। প্যাডেল রিকশাতে তাদের প্যাডেল মারার ক্ষমতা নেই। যার কারণে প্যাসেঞ্জারদের সুবিধার থেকে ওইসব লোকদের অনেক বেশি কষ্টে দিন কাটবে। তাই বিষয়টি নিয়ে মনের ভিতরে খুব কষ্ট হচ্ছে।’
লাবনী রহমান লিখেছেন, ‘বন্ধ না করে রাস্তার এক পাশ দিয়ে চালানোর ব্যবস্থা করলে জনগণের জন্য ভাল হবে।’
জামিল আহমেদ লিখেছেন, ‘অনেক বছর পর শহরে ঘুরে শান্তি পাচ্ছি। সেই সাথে ইজিবাইকের মাত্রাও কমাতে হবে।’
জাহিদ খোকন লিখেছেন, ‘সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানাই। দামী গাড়ি আর বড় বাড়িতে বসবাস করলে ঘামে ভেজা মানুষের দুঃখ কষ্টকে উপলব্ধি করা যায় না।’
মোঃ তরিকুল ইসলাম কাবির লিখেছেন, ‘যারা রিক্সা চালিয়ে সংসার চালাতো তাদের কি উপায় হবে সেটা আগে ভাবতে হবে। যানজটমুক্ত করার জন্যে এই সমস্ত গরিবের পেটে লাথি কেন? মিল কলকারখানা চালু করে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে এ উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে।’
রাজু মোলা লিখেছেন, ‘শহরটি দেখতে খুব বেশি ভালো লাগছে, যানজট ছাড়া অনেকটা। আমার মনে হয় ব্যাটারি চালিত রিক্সা বন্ধের সঙ্গে-সঙ্গে লাইসেন্সবিহীন ইজিবাইকগুলো বন্ধ করা উচিত। এতে করে যেমন কমবে যানজট ঠিক তেমনি করে দুর্ঘটনাও কমে যাবে।’
আযমখান কমার্স কলেজের ছাত্র মো. ইব্রাহিম খলিল লিখেছেন, ‘ব্যাটারি চালিত রিক্সা একেবারে বন্ধ করলে রিক্সা চালাকের পাশাপাশি সাধারণ জনগনের অনেক সমস্যায় পড়তে হবে। কারণ শহরে বিভিন্ন অলিগলি অন্য কোন পরিবহনের ব্যাবস্থা নেই রিক্সা ব্যতিত। আর পায়ে চালিত রিক্সা চালানো খুবই কষ্টসাধ্য। যা রিক্সা চালকদের শারীরিক ক্ষতি হবে, তাই ব্যাটারি চালিত রিক্সা মেইন রোড না দিলেও ছোট রাস্তাতে চলতে দেয়া উচিত।’
সমাজকর্মী এম মোস্তফা কামাল লিখেছেন, ‘আমাদের মতো সাধারণ মানুষ এর এই শহরে এক স্থান হতে অন্য স্থানে যাবার সহজ পরিবহন এই রিকশা। এটা বন্ধ থাকলে আমাদের দৈনন্দিন কাজকর্মে অনেক সমস্যা।’
আবু রায়হান ওয়ারসি লিখেছেন, ‘এ শহরকে সুন্দর এবং শহরের রাস্তার জ্যাম দূর করার জন্য এটা একটা সুন্দর পদক্ষেপ। কিন্তু মানবিকতার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে গেলে গরীব ও দরিদ্র মানুষদের অনেক অসুবিধা হবে। যেভাবে ইজিবাইক এর লাইসেন্স দেওয়ার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, সেভাবে বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধী মানুষদের লাইসেন্স দিয়ে মটর চালিত রিকশা চালাতে দেওয়া উচিত।’ একই রকম মন্তব্য করেছেন মোহসিন উদ্দিন মাসুম, আর জে নয়ন, আমিরুল ইসলাম বাবু, মো. ইমাম হাসান, ইব্রাহিম হোসেন আরজু, মাসুদুর রহমান রানা, এইচ এইচ হিরা, মোঃ রিয়াজ উদ্দিন ভুঁইয়া, মোঃ সৈকত হাসান, সজিব হাসান।