April 19, 2024
আঞ্চলিকলেটেস্টশীর্ষ সংবাদ

খুলনার রাকিব হত্যা: চূড়ান্ত রায়ে দুই আসামির যাবজ্জীবন বহাল

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
সাড়ে পাঁচ বছর আগে খুলনায় নির্মম কায়দায় শিশু রাকিব হাওলাদারকে হত্যার ঘটনায় দুই আসামি ওমর শরিফ ও মিন্টু খানকে হাই কোর্টের দেওয়া যাবজ্জীবন সাজার রায় সর্বোচ্চ আদালতেও বহাল রাখা হয়েছে। দণ্ডিতদের আপিল খারিজ করে সোমবার এ রায় দিয়েছে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির আপিল বেঞ্চ।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ। আসামিদের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন মুশফিকুদ্দিন বখতিয়ার। পরে সর্বোচ্চ আদালতের এ আদেশ নিয়ে সাংবাদিকদের সামনে কথা বলেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা এ এম আমিন উদ্দিন।
তিনি বলেন, ‘এ ধরনের জঘণ্যতম নৃশংস, ঘৃণিত হত্যাকাণ্ড যারা ঘটাচ্ছে, তাদের জন্যে এটি (আপিল বিভাগের আদেশ) একটি বার্তা হবে যে, এ ধরনের শিশু হত্যার শাস্তি অনিবার্য। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ অত্যান্ত কষ্ট করে মামলা পরিচালনা করেছে। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ শাস্তি বহাল রেখেছেন।’
২০১৫ সালের ৩ আগস্ট খুলনা নগরীর টুটপাড়া কবরখানা মোড়ে এক মোটর ওয়ার্কশপে মোটরসাইকেলে হাওয়া দেওয়ার কমপ্রেসার মেশিনের মাধ্যমে মলদ্বারে হাওয়া ঢুকিয়ে ১২ বছর বয়সী রাকিবকে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনার পর ক্ষোভের সৃষ্টি হয় সারা দেশে।
পরদিন রাকিবের বাবা মো. নুরুল আলম বাদী হয়ে সদর থানায় হত্যা মামলা করেন। ওই ওয়ার্কশপের মালিক ওমর শরিফ ও তার সহযোগী মিন্টু খান এবং শরিফের মা বিউটি বেগমকে সেখানে আসামি করা হয়। মামলা হওয়ার ৯৬ দিন পর ২০১৫ সালের ৮ নভেম্বর শরীফ ও মিন্টুর ফাঁসির রায় দেন খুলনা মহানগর দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক দিলরুবা সুলতানা। অপর আসামি শরীফের মা বিউটি বেগম খালাস পান।
ওই বছর ১০ নভেম্বর রাকিব হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স হাই কোর্টে আসে। পাশাপাশি বিচারিক আদালতের দেওয়া ফাঁসির রায়ের বিরুদ্ধে আসামিরা হাই কোর্টে আপিল করেন। পরে প্রধান বিচারপতির নির্দেশে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এই মামলার পেপারবুক তৈরি করা হয়।
জজ আদালত শরীফ ও মিন্টুকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল, হাই কোর্ট তাদের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন দেয়জজ আদালত শরীফ ও মিন্টুকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল, হাই কোর্ট তাদের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন দেয়আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শেষে ওই বছরের ৪ এপ্রিল রায় দেয় হাই কোর্ট। তাতে দুই আসামি ওমর শরিফ ও মিন্টু খানের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড করা হয়। পাশাপাশি দুজনকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়।
রায়ে বলা হয়, জরিমানার অর্থ রাকিবের পরিবারকে দিতে হবে। তা না হলে দুই আসামিকে আরও দুই বছর করে কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। ওই বছরের ৩ মে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ৬৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, ‘ঘটনার পরপরই বিক্ষুব্ধ জনতা দুই আসমিকে ধরে পিটুনি দেয়। ওই সময় তারা পালানোর চেষ্টা করেনি, বরং ভিকটিমকে বাঁচানোর চেষ্টায় খুলনার কয়েকটি হাসপাতালে নিয়ে যায়।
কিন্তু কীভাবে রাকিবকে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব সে বিষয়ে চিকিৎসকরা নিশ্চিত ছিলেন না, কেননা এক্ষেত্রে অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল ব্যতিক্রমী এক উপায়ে। ঘটনার চার ঘণ্টার মাথায় ভিকটিকমকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার সময় তার মৃত্যু হয়।
হাই কোর্টের রায়ে বলা হয়, দুই আসামির কারও অতীতে বড় কোনো অপরাধের রেকর্ড নেই, আগে কখনও তারা দোষী সাব্যস্তও হননি। এ অবস্থায় আসামিদের অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি হবে, নাকি তাদের যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হবে- সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া ছিল একটি কঠিন কাজ।
যেহেতু আসামিদের অপরাধ সংঘটনের বিষয়ে বিচারকদের কোনো সংশয় ছিল না, সেহেতু আলোচনার কেন্দ্রে ছিল একটি প্রশ্ন- মৃত্যুদণ্ড, না যাবজ্জীবন। সবকিছু বিচারে আদালত সিদ্ধান্ত দিয়েছে, দুই সাজার মধ্যে তুলনামূলক কম শাস্তির সুযোগ এ মামলার আসামিদের পাওয়া উচিৎ।
আসামিদের সাজা কমানোর পরোক্ষ একটি যুক্তি আমরা পেয়েছি। কিন্তু পেনাল কোডোর ৩০২/৩৪ ধারায় আসামিদের দোষী সাব্যস্ত করার যে সিদ্ধান্ত, তা পরিবর্তনের কোনো কারণ আমরা দেখছি না। এই আলোচনা ও পারিপার্শ্বিক বিচারে আমাদের মনে হয়েছে, দুই আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হলেই সুবিচার হবে। পরে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার অনুমতি চেয়ে সর্বোচ্চ আদালতে আবেদন করেন দুই আসামি। তাদের সেই আবেদন আপিল বিভাগে খারিজ হল।

দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিন/ এম জে এফ

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *