April 27, 2024
আঞ্চলিকলেটেস্টশীর্ষ সংবাদ

খুলনার উপকূলীয় এলাকায় প্রথমবার সুগন্ধি ব্রি ধান-৯০ চাষে বাম্পার ফলন

চাল রপ্তানিযোগ্য, আগাম আমন চাষে নতুন সম্ভাবনা

দ. প্রতিবেদক
খুলনার উপকূলীয় এলাকায় চলতি আমন মৌসুমে প্রথমবারের মতো মাঠে কৃষক পর্যায়ে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ হয়েছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত ব্রি ধান-৯০। মাত্র তিন কাঠা জমিতে চাষ করা এই উচ্চ ফলনশীল আধুনিক জাতের সুগন্ধি ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। চিকন দানার এই সুগন্ধি ধানের হেক্টর প্রতি উৎপাদন ৫ টন হওয়ায় তা এলাকায় কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। বর্তমানে এ এলাকায় স্থানীয় বড়ান জাতের ধানের মাঠ এখনও সবুজ এবং কেবল পুষ্পায়ন হচ্ছে। এসব ধান কাটতে আরও প্রায় দু’মাস সময় লাগবে। কিন্তু একই সময় রোপণ করে মাত্র ১১৮ দিনেরও কম সময়ে আশানুরূপ ফলন পাওয়ায় এ জাতটি নিয়ে নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
যেসব জমি মাঝারি উঁচু এবং উঁচু সেখানে এ ধান চাষ করে মধ্য কার্তিকেই ধান কাটার পর সেখানে রবিশস্য চাষ বিশেষ করে সরষে, আলু, শাক-সবজি করা সম্ভব হবে। সাধারণত এ এলাকায় স্থানীয় জাতের আমন ধান অনেক নাবিতে পাকায় নতুন কোনো ফসল চাষ করা যায় না। ফলে এলাকার বেশিরভাগ জমি একফসলি এবং তা বছরের ৭-৮ মাসই পড়ে থাকে। ব্রি ধান-৯০ একদিকে মাত্র চার মাসের মধ্যেই পাকে এবং ফলনও বেশি। স্থানীয় রাণী স্যালট, জটাই, হরকোচ, ভাটেল ধানের হেক্টর প্রতি সর্বোচ্চ উৎপাদন সাড়ে তিন থেকে চার টন। সেখানে ব্রি ধান-৫ টন পর্যন্ত উৎপাদন পাওয়া সম্ভব।
বৃহত্তর খুলনার উপকূলীয় এলাকায় মাঠ পর্যায়ে এ ধানের চাষ হওয়ার খবর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কাছেও নেই। এমনকি বটিয়াঘাটার দাউনিয়াফাদ গ্রামে চাষ হওয়া ব্রি ধান-৯০ সর্ম্পকেও খুব কম লোকে জানে। গুপ্তমারি গ্রামের কৃষক রণজিত রায় প্রথম এ ধানের চাষ এবার করেন। তাকে ব্রি থেকে কেজি বীজ সংগ্রহ করে দেন একজন সৌখিন ধান চাষী। ধান পাকার পর ফলন দেখে অনেকরই এই ধান চাষে আগ্রহ বেড়েছে।
রণজিত রায় তার তিনকাঠা বর্গা জমিতে তিন মণ ফলন পাওয়ায় খুবই খুশি। তিনি তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন ‘এতো অল্প জমিতে এতো চিকন ধানের এভাবে ভাল ফলন পাবো ভাবতেই পারিনি। এলাকার অনেকেই বীজ চেয়েছেন। প্রতি কেজি বীজ দেড় থেকে দ্’ুশ টাকা দর চেয়েও আগ্রহী চাষী নিচ্ছেন। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজনই নিয়েছেন ২ মণ বীজ। তিনি আগামী বছর ৩ একর জমিতে এ ধান চাষ করতে চান।’
দাইনিয়াফাঁদ গ্রামের কৃষাণী আরতি রায় বলেন, ‘এমন সুন্দর ছোট ছোট দানার ধানের এতো ভালো ফলন আগে কখনও দেখিনি। তাছাড়া আমরা যখন আমন ধান কাটি তখন পৌষ মাস। তার ২ মাস আগে এখন এ ধান পেকেছে এটাও বড় ব্যাপার।’ তিনি বলেন, আমি এর নাম দিয়েছি ‘মুসরি দানা’।
এলাকার কেউ বলছেন বেগুন বিচি। আবার কেউ নাম দিয়েছেন স্বর্ণালী ভোগ। মুক্তার মতো ছড়ায় গাঁথা ধানের চালের ভাত খেতে সুস্বাদু এবং তাতে সুগন্ধ থাকায় পোলাওসহ বিভিন্ন উৎসবে রান্নার উপযোগী। এ ধানের চাল বিদেশে রপ্তানিযোগ্য বলছেন ব্রি’র বিজ্ঞানিরা। কেবল খুলনা উপকূলীয় এলাকাতেই নয়, সারাদেশে আগাম আমন ধান হিসেবে ব্রি ধান-৯০ ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাবে এমনটাই আশা করেন উদ্ভাবক ব্রির বিজ্ঞানিরা। মাত্র ২০১৯ সালে এই জাতটি মাঠ পর্যায়ে চাষে ছাড়পত্র দেয় বীজ প্রত্যায়ন বোর্ড।

দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিন/ এম জে এফ

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *