January 19, 2025
আঞ্চলিকলেটেস্টশীর্ষ সংবাদ

খুমেক হাসপাতাল থেকে কমছে না দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য

দুই দালালকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ

জয়নাল ফরাজী
খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতাল থেকে কিছুতেই কমছে না দালালদের দৌরাত্ম্য। বিভিন্ন ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের এসব দালালদের দৌরাত্ম্য প্রধান ফটক, বহির্বিভাগ, এমনকি আন্তঃবিভাগেও। যার কারণে হাসপাতালে আসা রোগীদের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীদের ভাগিয়ে নেওয়া হয় পার্শ্ববর্তী ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। যদিও হাসপাতালের পরিচালক দাবি করেছেন ইতোমধ্যেই ৭০ ভাগের মতো দালাল নির্মূল হয়েছে। এদিকে শনিবার ডালিম বেগম ও আরিফুল নামে দালাল চক্রের দুই সদস্যকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে।
হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা জিএম ইকতিয়ার উদ্দিন জানান, গতকাল শনিবার সকালে মোঃ আরিফুল ও ডালিম বেগম নামে ক্লিনিকের দালাল হাসপাতালের ভেতর প্রবেশ করে রোগী ভাগাতে কাজ করছিল। এসময় সেখানে দায়িত্ব দেওয়া আউটসোর্সিং আয়া রাশিদা বেগমের চোখে পড়ে। সে তাদের সেখান থেকে বের হতে বললে তারা রোগী ফুসলিয়ে পার্শ্ববর্তী ক্লিনিকে নেওয়ার চেষ্টা করে। এসময় তিনি (রাশিদা) প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও পরিচালকে বিষয়টি অবগত করেন। তারা গিয়ে এ দুই দালালকে ধরে আটকে রেখে পুলিশে খবর দেয়। বেলা ২টার দিকে সোনাডাঙ্গা থানা পুলিশ এসে তাদের নিয়ে যায়।
দালাল চক্রের ব্যাপারে রাশিদা বেগম বলেন, ‘বহির্বিভাগে দায়িত্ব পালনকালে গত ১৮ অক্টোবর দালাল চক্রের সাথে তার হাতাহাতি হয়। এসময় ঐ সময় ঝরনা নামে এক দালাল তার হাতে কামড়ে দিয়ে পালিয়ে যায়। তিনি জানান, ঝর্না সুগন্ধা ক্লিনিকের হয়ে দালালির কাজ করতো। এ ব্যাপারে সে পরিচালক বরাবর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য একটি আবেদনপত্র দিয়েছেন।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খুমেক হাসপাতালের সামনে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিক। এর অনেকগুলোর কোনো সাইনবোর্ডও নেই। হাতেগোনা কয়েকটি ছাড়া বেশিরভাগেরই কোনো অনুমোদন নেই। এসব প্রতিষ্ঠানে কোনো ডিগ্রিধারী ও মানসম্মত প্যাথলজিস্টও নেই। নিয়মের ফাঁকফোকর গলিয়ে ব্যবসা করে চলেছে প্রতিষ্ঠানগুলো। প্রতিষ্ঠান চালিয়ে রাখতে রোগী ভাগিয়ে আনতে তারা নিয়োগ দিয়েছে দালালদের। তাদের একটি মাসিক লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া থাকে এবং তা অর্জনের ক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে পরবর্তীতে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এ কর্মচারি-কর্মকর্তাদের সঙ্গে চুক্তি থাকে ওষুধের দোকান, ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং ছোট ছোট ক্লিনিকের মালিক কর্মচারিদের।
আরও জানা গেছে, কিছু টাকার আশায় দালালরা হাসপাতালটির প্রধান ফটক থেকে শুরু করে হাসপাতালের অভ্যন্তরে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে রোগীদের বিভ্রান্ত করে। বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে আসা হাসপাতালের সেবা সম্পর্কে না জানা রোগীদের ভাগিয়ে নেয় তারা। বোরকা পরে থাকায় নারীদের বোঝাই যায় না যে তারা দালাল। জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও র‌্যাব এসব দালালদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করলেও নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না তাদের দৌরাত্ম্য। আটকের কিছুদিনের মধ্যে ছাড়া পেয়ে তারা ফের একই কাজ শুরু করেছে। এখন তারা ধরা পড়ার ভয়ে সকালে হাসপাতালে এসেই ১০ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে নিজে রোগী সাজে। এরপর দিনভর চলে রোগী ভাগিয়ে নেওয়ার কাজ।
এ বিষয়ে খুমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. মুন্সি রেজা সেকান্দার জানান, ‘হাসপাতালের রোগী সেবার প্রধান অন্তরায় এ দালাল চক্র। তাই হাসপাতালকে সেবামূলক করতে তিনি দালালমুক্ত করার পদক্ষেপ নিয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার দু’জন দালালকে হাতেনাতে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই ৭০ ভাগের মত দালাল নির্মূল হয়েছে। সবার সহযোগিতা থাকলে পূর্ণাঙ্গভাবে এ হাসপাতাল দালালমুক্ত করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।’

দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিন/ এম জে এফ

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *