‘খাদ্যে আত্মনির্ভরশীলতা অর্জন আ.লীগের অবিস্মরণীয় সাফল্য’
বৈদেশিক সাহায্য পাওয়ার আশায় বিএনপি দেশের কৃষি খাতকে অবহেলা করেছিল, অভিযোগ করে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার কৃষিবান্ধব বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার কারণে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে।
খাদ্যে আত্মনির্ভরশীলতা অর্জন আওয়ামী লীগের অবিস্মরণীয় সাফল্য বলে দাবি করেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) দুপুরে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নরসিংদীর ঘোড়াশাল-পলাশ ফার্টিলাইজার প্রকল্প উদ্বোধনকালে এ দাবি করেন তিনি।
একই সময়ে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) বহুতল ভবন ও মাদারীপুরে সম্প্রসারিত বিসিক শিল্প নগরী; বিটাকের টেস্টিং সুবিধাসহ টুল ইনস্টিটিউট এবং বিএসইসি’র এলইডি লাইট (সিকেডি) অ্যাসেম্বলিং প্ল্যান্ট প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘কৃষি খাতকে বিএনপি সরকার চরম অবহেলা করেছিল। ন্যায্যমূল্যে সার কিনতে চাওয়ার অপরাধে ১৮ জন কৃষককে বিএনপি সরকারের পুলিশের গুলিতে প্রাণ দিতে হয়েছিল। দেশে খাদ্য ঘাটতি থাকলে বেশি করে বৈদেশিক সাহায্য পাওয়া যাবে, বিএনপি সরকারের এই দৃষ্টিভঙ্গির কারণেই কৃষি খাত চরমভাবে উপেক্ষিত হয়েছিল। আমরা সরকারে এসে তিনটি নতুন সার কারখানা স্থাপন করি এবং দুটি পুরাতন কারখানা পুনর্বাসন করি।’
স্বাধীনতা অর্জনের পরপরই যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মনিয়োগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কল-কালখানা, রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, নদী-সমুদ্র বন্দর, বিমান বন্দর মেরামত ও সচল করেন তিনি। সদ্য স্বাধীন দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার, শিল্পায়ন এবং কৃষি উৎপাদনের ওপর ব্যাপক গুরুত্ব দিয়েছিলেন। তিনি ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির আদেশ জারি করে ৫৯৩টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে জাতীয়করণ করেন। ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে অল্প কয়েকটি পণ্য রপ্তানি করে ৩৪৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় হয়েছিল; যা ১৯৭৪-৭৫ অর্থবছরে দাঁড়িয়েছিল ৩৮৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে। জাতির পিতা মাত্র সাড়ে তিন বছরেই বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশে রূপান্তরিত করেছিলেন।’
দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প প্রসারে ৫৭টি শিল্পনগরী স্থাপন করি এবং আরও ১৩টি শিল্পনগরী স্থাপনের কাজ শুরু করি। বেসরকারি খাতকে শক্তিশালী করি, কাঁচামাল আমদানির উপর শুল্ক হ্রাস, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি এবং রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকা স্থাপন, সম্প্রসারণ ও উন্নয়নে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করি।’
তিনি বলেন, ‘১৯৯৫-৯৬ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছিল ১ হাজর ৬০০ মেগাওয়াট। আমরা ২০০১ সালে তা ৪ হাজার ৩০০ মেগাওয়াটে উন্নীত করি। পরে বিএনপি ক্ষমতায় আসলে বিদ্যুৎ উৎপাদন আবারও কমে যায়। চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে বিদ্যুতের দাবিতে আন্দোলন করলে, সেখানেও তারা ২০ জন নিরীহ মানুষকে গুলি করে হত্যা করে। আমরা দেশকে যখনই এগিয়ে নিতে শুরু করি, ঠিক তখনই দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা উন্নয়নকে পিছনে টেনে ধরতে নানা অপপ্রচার এবং বিশৃঙ্খলা শুরু করে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৮-০৯ অর্থবছরে মোট রপ্তানি আয় পেয়েছিলাম ১৫ হাজার ৫৬৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরে ৪৫ হাজার ৩৮৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করেছি। বর্তমানে আমরা ২০২টি দেশ বা অঞ্চলে ৭৬৬টি পণ্য রপ্তানি করছি। আমরা শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ দিচ্ছি। ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল সৃষ্টি করছি। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুবিধা আহরণের প্রস্তুতি অব্যাহত রেখেছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন বাস্তবতা। নতুন জাতীয় শিল্প নীতিমালা-২০২১ চূড়ান্ত করেছি।’
সরকারের নীতি এবং কর্মসূচির ফলে বর্তমানে জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান প্রায় ৩৫ শতাংশ, এ তথ্য উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশব্যাপী পরিবেশবান্ধব শিল্পের প্রসার ঘটছে এবং নারীদের অংশগ্রহণ জোরদার হচ্ছে। এতে দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির অনেক সূচকে বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে এগিয়েছে।’
২০১৪ সালে ঘোড়াশাল এবং পলাশে দুটি পুরাতন ইউরিয়া সার কারখানার স্থলে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন, অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর, শক্তি সাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব নতুন সার কারখানা ‘ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া সারকারখানা’ স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘নতুন এ সার কারখানায় দৈনিক ২৮০০ মেট্রিক টন (বার্ষিক প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন) দানাদার ইউরিয়া সার উৎপাদন হবে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কার্বন-ডাই-অক্সাইড থেকে ১০ শতাংশ ইউরিয়া উৎপাদন বৃদ্ধি করা হবে।’
এই প্রকল্পটিতে জাপান ও চীন সরকার ঋণ সহায়তা দেওয়ায় তাদের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী
ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প উন্নয়নে নানা উদ্যোগ গ্রহণের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে শিল্প নগরীতে বিনিয়োগের পরিমাণ ৪১ হাজার ২১৭ কোটি টাকা এবং ৮ লাখের অধিক লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। বিসিককে শক্তিশালী করতে আমরা তেজগাঁওয়ে বিসিকের বহুতল ভবন এবং মাদারীপুরে সম্প্রসারিত বিসিক শিল্প নগরী নির্মাণ উদ্বোধন করছি।’
বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্র (বিটাক) দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং গবেষণার মাধ্যমে আমদানি বিকল্প যন্ত্রাংশ তৈরির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে, জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিটাকের টুল অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউট (টিটিআই) দেশের লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাতে দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশন (বিএসইসি) লাইটিং সামগ্রী উৎপাদনকারী একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান, যা আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি উন্নত, গুণগত মানসম্পন্ন ফ্লোরেসেন্ট টিউব লাইট, সিএফএল বাল্ব, এলইডি বাল্ব ও এলইডি টিউব লাইট উৎপাদন ও বাজারজাত করে আসছে। বিএসইসির অধীনস্ত প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন টিউবস লিমিটেডের উদ্যোগে এলইডি লাইট এসেম্বলিং প্ল্যান্ট স্থাপনের ফলে এর উৎপাদিত পণ্য বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’