কেসিসি’র ৬০৮ কোটি টাকার উন্নয়নমুখী বাজেট ঘোষণা
* বাজেটে নতুন কোন কর আরোপ করা হয়নি
* ফুটপাত পথচারীদের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে
* উন্নয়ন কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রতিশ্রুতি
* নগরীতে মোটরচালিত রিকশা চলাচল নিষিদ্ধ
* নির্মাণ সামগ্রী রাস্তায় রাখলে আইনানুগ ব্যবস্থা
দ. প্রতিবেদক
খুলনা কর্পোরেশনের ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ৬শ ৮ কোটি ২ লক্ষ ৫৬ হাজার টাকার প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। সিটি মেয়র আলহাজ্ব তালুকদার আব্দুল খালেক বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় জনাকীর্ণ সাংবাদিক সম্মেলনে নগরবাসীর সম্মুখে এ বাজেট ঘোষণা করেন। একই সাথে তিনি নগর ভবনের শহীদ আলতাফ মিলনায়তনে ২০২০-২০২১ অর্থবছরের ৩শ ৬৯ কোটি ১৯ লাখ ২৬ হাজার টাকার সংশোধিত বাজেট পেশ করেন। বাজেট ঘোষণা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কেসিসি’র অর্থ ও সংস্থাপন স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও ২০ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শেখ মোঃ গাউসুল আজম। বাজেট অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন কেসিসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোঃ আজমুল হক।
বাজেট ঘোষণা অনুষ্ঠানে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কেসিসি মেয়র বলেন, নির্বাচনী ইস্তেহারে নগরবাসীকে যে, প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম এ বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মধ্যে দিয়ে তা বাস্তবে রূপদানের চেষ্টা করছি। তিনি বলেন মেয়র নির্বাচিত হবার পর খুলনাবাসীর সুখ-দু:খের সাথী হয়ে খুলনা মহানগরীকে একটি উন্নত, পরিচ্ছন্ন, শান্তি ও স্বস্তির নগরী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আমরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। খুলনাকে সর্বাঙ্গীন সুন্দর নগরীতে পরিণত করতে আমাদের আন্তরিকতার কোন ঘাটতি নেই। সিটি মেয়র ঘোষিত বাজেটের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, এ বাজেটে নতুন কোন কর আরোপ করা হয়নি। বকেয়া পৌরকর ধার্য্য এবং নিজস্ব আয়ের উৎস সম্প্রসারণ এর মাধ্যমে কেসিসি’র আয় বৃদ্ধির পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। বাজেট ঘোষণা অনুষ্ঠানে কেসিসি মেয়র ঘোষিত বাজেটকে উন্নয়নমুখী বাজেট হিসেবে মন্তব্য করে বলেন এ বাজেটে নাগরিক সেবা সম্প্রসারণ ও সেবার মান উন্নীত করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। শহরের সড়ক ও ড্রেনের তথা জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে নিস্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এছাড়া স্বাস্থ্য খাত ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে বাজেটে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। পাশাপাশি কোভিড-১৯ রোগ প্রতিরোধে মশক নিধন এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। বাজেটে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবন মান উন্নয়ন, পার্ক, ধর্মীয় উপসানালয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন এবং কেসিসি’র বিভিন্ন দপ্তর আধুনিক প্রযুক্তির আওতায় আনা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি করার উপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। বাজেটের বৈশিষ্ট তুলে ধরতে গিয়ে সিটি মেয়র বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণে প্রতিনিয়ত যে ক্ষতি হচ্ছে তা মোকাবেলা, অবকাঠামো গড়ে তোলা এবং ক্ষতিগ্রস্থ মানুষদের স্বনির্ভর করে গড়ে তোলাসহ বস্তি এলাকার রাস্তাঘাট, ড্রেন, ল্যাট্রিনসহ শিক্ষার মানন্নোয়নের দিক নির্দেশনা এ বাজেটে রয়েছে।
বাজেটের উল্লেখযোগ্য দিক বর্ণনা করতে গিয়ে কেসিসি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, এ বছর উন্নয়ন বাজেটে (এডিপি) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির জন্য থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৫৫ কোটি টাকা। এছাড়া জাতীয় এডিপিভুক্ত কেসিসি’র ৩টি উন্নয়ন প্রকল্পে ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে ২শ ১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সিটি মেয়র বলেন নিজস্ব সংস্থাপন ব্যয় মিটিয়ে এবং ব্যয় সংকোচন করে নগরীর বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের জন্য রাজস্ব খাত থেকে এ বাজেটে ৫১ কোটি ৫৬ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
সিটি মেয়র বলেন, খুলনা মহানগরীর সার্বিক উন্নয়ন ও জনগণের কল্যাণের জন্য আমরা সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে কাজ করছি। উন্নয়ন সহযোগীদের দ্বারা ১৫টি প্রকল্পে ২০২১-২২ অর্থ বছরে ১শ ৫৩ কোটি ১৬ লক্ষ ৬৩ হাজার টাকা সহায়তা পাওয়া যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। প্রকল্প সমূহ হচ্ছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্প, নগর অঞ্চল উন্নয়ন প্রকল্প-২, সিটি ওয়াইড ইনক্লুসিভ স্যানিটেশন এনগেজমেন্ট ইন খুলনা সিটি (এসএনভি), আরবান ম্যানেজমেন্ট অব ইন্টারনাল মাইগ্রেশন ডিউ টু ক্লাইমেট চেঞ্জ, এনগেজিং মাল্টি সেক্টরাল পার্টনার্স ফর ক্রিয়েটিং অপরচুনিটিজ ইনপ্রুভিং ওয়েলবিয়িং এন্ড রিলিজিং রাইটস অব দি আরবান পুওর প্রকল্প, লাইভষ্টক ডেইরি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট, ক্লাইমেট চেঞ্জ আরবান ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবেলায় খুলনা সিটি কর্পোরেশন এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসন ও উন্নয়ন প্রকল্প, ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি ওয়াটার এ্যাজ লিভারেজ নেদারল্যান্ড সরকার, ভারত সরকারের অর্থায়নে খুলনা শহরে বিভিন্ন এলাকায় কৃষি মার্কেট, পার্ক, কম্পিউটার ল্যাব, ওয়াই-ফাই জোন নির্মাণ প্রকল্প, ক্লাইমেট ব্রীজ ফান্ড, হেলদি সিটি খুলনা আন্ডার আরবান লীড প্রোগ্রাম, ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন, ক্যাপেক্স মডেল ৯৬৫ কে ডব্লিউ ফ্লোটিং এন্ড রুফটপ সোলার পাওয়ার প্লান্ট আন্ডার সিটি কর্পোরেশন থ্রি আর ইনেটেটিভ পাইলট প্রোজেক্ট ফেজ-১ এ্যাট মাথাভাঙ্গা ও আরবান ম্যানেজমেন্ট অব ইন্টারন্যাশনাল মাইগ্রেশন ডিউ-টু ক্লাইমেট চেঞ্জ প্রকল্প।
বাজেট ঘোষণাকালে কেসিসি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন অর্থের। অর্থ সংস্থানের জন্য একটি স্ব শাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে খুলনা সিটি কর্পোরেশন শুধুমাত্র সরকারি বা বিদেশী সাহায্য ও ঋণের উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকতে পারে না। তাকে নিজস্ব আয়ের উপর নির্ভর করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চিন্তা করতে হবে। এটা আজ সমযের দাবি। এজন্য প্রয়োজন সকল শ্রেণির নাগরিকের পরিপূর্ণ আন্তরিকতা ও সহযোগিতা। সিটি মেয়র বলেন, কর্পোরেশনের যেমন দায়িত্ব রয়েছে নগরবাসীর নাগরিক স্বাচ্ছন্দের ব্যবস্থা করা, তেমনিভাবে নাগরিকদেরও কর্তব্য রয়েছে সিটি কর্পোরেশনকে তার কাজে সার্বিক সহযোগিতা করা। তিনি নগরীর উন্নয়ন কর্মকান্ডকে এগিয়ে নিতে নিয়মিত কর পরিশোধসহ উন্নয়ন কর্মকান্ডে সর্বাত্মক সহায়তা করার জন্য নগরবাসীর প্রতি আহবান জানান।
বাজেট ঘোষণা অনুষ্ঠানে সাংবাদিক এবং নগরবাসীর বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে সিটি মেয়র বলেন, ফুটপাথ পথচারীদের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে। যারা ফুটপাথ দখল করে ব্যবসা করছে অথবা নির্মাণ সামগ্রী রাস্তার উপর রেখে জন চলাচল বিঘ্নিত করছে তাদের উপর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সিটি মেয়র বলেন কেসিসি’র উন্নয়ন কাজে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করাসহ কাজের গুনগত মান বজায় রাখতে চাই। একাজে সহযোগিতা করার জন্য তিনি সাংবাদিক এবং সচেতন নাগরিকদের প্রতি আহবান জানান। তিনি বলেন, নগরীতে মোটরচালিত রিকশা চলাচল নিষিদ্ধ থাকবে। শুধুমাত্র প্যাডেল চালিত রিকশা চলাচলের অনুমোদন থাকবে। প্যাডেল চালিত রিকশা যথাযথভাবে পরিদর্শন শেষে তা প্রতিবছর নবায়ন করা হবে।
খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম ডি এ বাবুল রানা, কেসিসি’র মেয়র প্যানেলের সদস্য মোঃ আমিনুল ইসলাম (মুন্না) ও এ্যাড. মেমরী সুফিয়া রহমান শুনুসহ কাউন্সিলর, সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর, সরকারি কর্মকর্তা, নাগরিক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, নগরীর গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, সাংবাদিকবৃন্দ ও কেসিসি’র কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ বাজেট অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিন/ জে এফ জয়