May 19, 2024
আঞ্চলিক

কেন পরিবেশ দূষণ করা যাবে না, তা শিশুদের মগজে ঢুকিয়ে দিতে হবে : পরিবেশ উপমন্ত্রী

কেন পরিবেশ দূষণ করা যাবে না, তা শিশুদের মগজে ঢুকিয়ে দিতে স্কুলের শিক্ষকদের পরামর্শ দিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার। তিনি বলেছেন, শিশুরা শিক্ষকদের কথাগুলো বেশি বিশ্বাস করে। তাই শিশুদের অন্তরে বিষয়টি গেঁথে গেলে তারপর এই শিশুরাই তাদের বাবা-মাকে ঠিক করতে পারবে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বা এসি ঘরে বসে গোলটেবিল বৈঠক করে যে কাজ ৫০ বছরে হয়নি, এভাবে করলে ওই কাজ হয়তো কয়েক বছরে হয়ে যাবে।
বুধবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ‘রিডিউসিং পলিউশন ফর গ্রিনিং সিটিজ’ শিরোনামের সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, প্লাস্টিক যাঁরা বানাচ্ছেন তাঁরা নিজেরা এর ক্ষতি বুঝে যদি তা থেকে সরে না আসেন, তাহলে এ কাজ বন্ধ করা কঠিন। ঘরের মধ্যে ছোট যন্ত্র দিয়েও প্লাস্টিক উৎপাদন করা হচ্ছে।

উপমন্ত্রী বলেন, ‘প্রায় প্রতিটি মানুষ পরিবেশ দূষণ করছি, আমরা ঠিক না হলে পরিবেশ দূষণ কমানো সম্ভব হবে না।’
সংলাপে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে। পরিবেশ ধ্বংস করে উন্নয়ন ঘটানো হলে তা টেকসই হবে না। বায়ুদূষণ, প্লাস্টিক দূষণ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। মানুষের স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বায়ুদূষণে বিভিন্ন অসুখে শিশুরা মারা যাচ্ছে।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, বায়ু, প্লাস্টিকসহ পরিবেশদূষণ রোধে মানুষকে সচেতন হতে হবে। নীতিনির্ধারকেরা যেসব উদ্যোগ নিচ্ছেন, তা জনগণকে জানাতে হবে। আইনকানুন যা আছে, তা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে। আর কাজগুলো একক কোনো মন্ত্রণালয় বা বিচ্ছিন্ন ভাবে করলে হবে না, সমন্বিত ভাবে করতে হবে। পরিবেশদূষণ রোধে মানুষের আচরণ পরিবর্তনের বিষয়টিতেও গুরুত্ব দিতে হবে।

সংলাপের শুরুতে সিপিডির রিসার্চ ফেলো সৈয়দ ইউসুফ সাদাত প্লাস্টিক ও বায়ুদূষণ নিয়ে করা একটি গবেষণার সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন। তিনি জানান, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ৫০০ পরিবারের মানুষের বায়ু ও প্লাস্টিক দূষণ সম্পর্কে ধারণা জানার জন্য গবেষণা দু’টি করা হয়। ৩১ মে থেকে ২৫ জুন গবেষণাটি পরিচালনা করা হয়। এতে অংশগ্রহণকারী ৭৬ শতাংশ মানুষ মনে করে গত দুই-তিন বছরে বায়ুদূষণ বেড়েছে। ৭৩ শতাংশ মানুষ প্লাস্টিকের বেলায় এ কথা বলেছে। বায়ুদূষণজনিত অসুস্থতায় চিকিৎসক দেখানোর জন্য প্রতিবছর প্রতিজনের চার হাজার টাকা খরচ হচ্ছে।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, যারা পরিবেশদূষণের সঙ্গে সরাসরি জড়িত, তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। আর যারা দূষণ রোধে যেমন প্লাস্টিকের বিকল্প পণ্য উৎপাদন, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহারসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেবে, তাদের বিভিন্নভাবে উৎসাহ দিতে হবে। সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। আর সার্বিকভাবে সুশাসন এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করা সম্ভব না হলে কোনো উদ্যোগই সফল হবে না।
সংলাপে ঢাকায় যুক্তরাজ্যের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার ম্যাট ক্যানেল সবুজায়ন ও পরিবেশদূষণ রোধে আইন ও নীতি বাস্তবায়নের বিষয়টিতে গুরুত্ব দেন। শিক্ষার মাধ্যমে মানুষের আচরণগত পরিবর্তন, পরিবেশদূষণ রোধের বিভিন্ন কার্যক্রমে মানুষের অংশগ্রহণ এবং মানুষকে তথ্য জানানো প্রয়োজন বলে উলে­খ করেন। তিনি বলেন, পরিবেশদূষণ রোধে এককভাবে ঢাকা বা বাংলাদেশে কাজ করলে লাভ হবে না, অঞ্চলভিত্তিক সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।
বিশ্বব্যাংকের স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞ ওয়ামেক এ রাজা নারী ও শিশুদের জীবনে পরিবেশদূষণের নেতিবাচক প্রভাবের বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বায়ুদূষণের ফলে নিউমোনিয়া, কম ওজন নিয়ে এবং সময়ের আগে শিশুর জন্ম হচ্ছে।
সিপিডির গ্রিন সিটিজ ইনিশিয়েটিভের উদ্যোগে আয়োজিত এই সংলাপে ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের অধ্যাপক সামিয়া সেলিম, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) লিগ্যাল রিসার্চার বারিশ হাসান চৌধুরী আলোচনায় অংশ নেন। এ ছাড়া সংলাপে উন্মুক্ত পর্বে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা নিজেদের সুপারিশ তুলে ধরেন।

শেয়ার করুন: