কলারোয়ায় দুই সন্তানসহ গৃহবধূর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
কন্যার শ্লীলতাহানীর বিচার না পাওয়ার গুঞ্জন
কলারোয়া (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি
সাতক্ষীরার কলারোয়ায় দুই সন্তান ও তাদের মায়ের ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করেছে থানা পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কলারোয়া উপজেলার ৪নং লাঙ্গলঝাড়া ইউনিয়নের লাঙ্গলঝাড়া বাজারের পাশে পূর্বপাড়া গ্রামের নিজ বাড়িতে ওই ঘটনা ঘটেছে।
মৃতরা হলেন- মাহফুজা খাতুন (৩২) এবং তার দুই সন্তান মাহফুজ হোসেন (৯) ও মোহনা (৫)। মাহফুজা লাঙ্গলঝাড়া গ্রামের ট্রাক্টর চালক শিমুল হোসেনের স্ত্রী। শিমুল বাড়িতে ছিলেন না তিনি কর্মসূত্রে ছিলেন বাগেরহাটে ট্রাক্টর চালক হিসাবে কাজ করছিলেন।
কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর খায়রুল কবীর জানান, নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে অধিকতর তদন্ত করা হচ্ছে। খবর পেয়ে সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান পিপিএম (বার), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) শামসুল আলম, পিবিআই, সিআইডি, ডিবি, র্যাব, ওসি কলারোয়া থানা, উপজেলা নির্বাহী অফিসার জুবায়ের হোসেন চৌধুরী, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম লাল্টু, ভাইস চেয়ারম্যান শাহানাজ নাজনীন খুকুসহ উর্ধ্বতন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
স্থানীয়রা জানান, সকাল ৮টার দিকে বাজার থেকে বিস্কুট কিনে নিয়ে তারা বাড়ীতে বসে খাওয়া দাওয়া করে। পরে প্রতিবেশীরা সাড়ে ৯টার দিকে তাদের বাড়ীর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় জানালা দিয়ে ঘরের মধ্যে আড়ায় মৃতদেহ ঝুলে থাকতে দেখেন। ওই সময় থানা পুলিশে খবর দেয়।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত মৃত মাহফুজার বড় ভাই বসন্তপুর গ্রামের মশিয়ার রহমান জানান, শবে বরাতের দিন তার ৫ বছর বয়সের ভাগ্নে মোহনা খাতুনকে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে পার্শ্ববর্তী গ্রামের লাল্টুর ছেলে হৃদয় (১৪) নামে এক যুবক। বিষয়টি স্থানীয় মেম্বার সাফিজুল ইসলাম সাফি, চেয়ারম্যান মাস্টার নুরুল ইসলামকে জানালে তারা কোন সুরহা না করে বলেন যে সামনে ভোট, ভোটের পর দেখবো। সম্ভবত মানসম্মান আর অন্যের কটুক্তি সহ্য করতে না পেরে ছেলে মেয়েকে শ^াসরোধ করে হত্যার পরে মা মাহফুজা বেগম নিজে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে একাধিক সূত্র জানিয়েছে, শিশু কন্যাকে যৌন নির্যাতনের বিচার না পেয়ে দুই ছেলে-মেয়েকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর রশিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেছেন মা মাহফুজা খাতুন।
শিমুল হোসেনের পিতা আব্দার আলী জানান, তিন দিন আগে খেলা করার সময় স্থানীয় লাল্টুর ছেলে হৃদয় শিশু মোহনাকে যৌন নির্যাতন করে। মোহনা বিষয়টি বাড়ি এসে তার মাকে জানালে মাহফুজা স্থানীয় ইউপি সদস্য সাফিজুলের কাছে বিচার চান। তখন সাফিজুুল সামনে নির্বাচন উল্লেখ করে কয়েকদিন পরে বিচারের আশ্বাস দেন। বিষয়টি চেয়ারম্যানকে জানালে তিনিও মামলা ও একই পরামর্শ দেন।
পরে মাহফুজা তার কাছে (আব্দার আলী) মামলা করার কথা বললে তিনি বলেন, আমরা গরীব মানুষ, মামলার খরচ চালাবো কিভাবে। বৃহস্পতিবার সকালে তিনি (আব্দার আলী) কাজে গেলে মাহফুজা দুই সন্তানকে মেরে নিজেও আত্মহত্যা করে থাকতে পারে বলে তিনি ধারণা করছেন।
সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান পিপিএম (বার) বলেন, এটি আত্মহত্যা নাকি হত্যা সেটা বিশ্লেষণের চেষ্টা চলছে। আশা করছি খুব শীঘ্রই বিষয়টি জানা যাবে।
দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিন/ এম জে এফ