May 18, 2024
জাতীয়লেটেস্ট

করোনা: ২০০০ কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি অ্যাভিয়েশন শিল্পে

প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে সংকটে পড়েছে দেশের অ্যাভিয়েশন শিল্প। গত কয়েক মাস ধরেই চীন ছাড়া বাকি সব আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট বন্ধ রয়েছে বাংলাদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর। ফলে বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়েছে এ খাত।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ খাতে প্রতি মাসে বাংলাদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর ব্যবসা রয়েছে ৭০০ কোটি টাকারও বেশি। সেই হিসেবে গত তিন মাসে ২১০০ কোটি টাকারও বেশি আর্থিক ক্ষতি হয়েছে দেশের চার এয়ারলাইন্সের। এ সংকট কাটিয়ে উঠতে প্রণোদনাসহ অ্যারোনাটিক্যাল চার্জ মওকুফ করার দাবি খাত সংশ্লিষ্টদের। যদিও প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ৭২ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজে ৩০ শতাংশ প্রণোদনার সুযোগ রয়েছে, তবে এটাকে অপ্রতুল বলছেন এ খাতের সংশ্লিষ্টরা।

তথ্য মতে, গেলো ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে উৎপত্তি হয় করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯)। সেই থেকে সারা পৃথিবীতে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে ভাইরাসটি। জানুয়ারি থেকে করোনা কাবু করে চলেছে গোটা পৃথিবীকে। থমকে আছে সবধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ। গৃহবন্দি কোটি কোটি মানুষ। ভাইরাস প্রতিরোধে ঘর থেকে মানুষ কম বের হওয়ায় কিংবা নিষেধাজ্ঞা থাকায় কার্যত অচল বিশ্বের যোগাযোগ ব্যবস্থা। গত তিন মাস ধরে চরম বিপর্যয় নেমে এসেছে বাংলাদেশের অ্যাভিয়েশন শিল্পে।

গত ২৪ মার্চ থেকে চীন ছাড়া বাকি ১৬টি দেশের সঙ্গে প্লেন চলাচল বন্ধ রয়েছে বাংলাদেশের। অভ্যন্তরীণ রুটে গত ২১ মার্চ থেকে চলাচল বন্ধ রয়েছে। তারপর থেকেই বিমানবন্দরে গ্রাউন্ডেড হয়েছে দেশের চার উড়োজাহাজ সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স, নভোএয়ার ও রিজেন্ট এয়ারওয়েজের প্লেন।

এর আগে থেকেই বিভিন্ন দেশের নিষেধাজ্ঞার কারণে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন রুটে ফ্লাইট বন্ধ করে বিদেশে ফ্লাইট পরিচালনাকারী এয়ারলাইন্সগুলো। ফ্রেবুয়ারি, মার্চ ও এপ্রিল এ তিন মাসে ২১০০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এটি গড় ক্ষতির পরিমাণ, এয়ারলাইন্স ভেদে ক্ষতির পরিমাণ কমবেশি রয়েছে।

স্থবির হয়ে পড়া দেশের অ্যাভিয়েশন খাতে আয়ের পথ রুদ্ধ হলেও ব্যয় থেমে নেই প্রতিষ্ঠানগুলোর। সিভিল অ্যাভিয়েশন চার্জ, উড়োজাহাজ রক্ষণাবেক্ষণ, কর্মীদের বেতনসহ নানা ব্যয় টানতে হিমশিম খাচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে ইতোমধ্যে রাষ্ট্রয়াত্ত বিমানকে ১ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে সোনালী ব্যাংক।

অ্যাভিয়েশন খাতে বিপর্যয় কাটাতে সরকারের কাছে বিশ্বের অন্য দেশের মতো চার্জ মওকুফসহ অ্যাভিয়েশন খাতের জন্য পৃথক ‘রেসকিউ প্যাকেজ’ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে বিমান, ইউএস বাংলা, নভো ও রিজেন্ট।

জানা গেছে, বর্তমানে এ চার কোম্পানির মোট উড়োজাহাজের সংখ্যা ৪৫টি। ইউএস-বাংলার একটি উড়োজাহাজ ছাড়া বাকি সবই গ্রাউন্ডেড। একমাত্র ইউএস বাংলার একটা ফ্লাইট চলছে গুয়াংজু রুটে। এরমধ্যে বিমানের বহরে আছে ১৯টি উড়োজাহাজ, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের বহরে ১৩টি, নভোএয়ারের বহরে ৭টি ও রিজেন্ট এয়ারওয়েজের আছে ৬টি উড়োজাহাজ।

ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক মো. কামরুল ইসলাম বলেন, এ ধাক্কা দীর্ঘ মেয়াদী ক্ষতির মুখে পড়েছে অ্যাভিয়েশন শিল্প। এ খাতকে বাঁচিয়ে রাখতে ৫ বছর পর্যন্ত অ্যারোনাটিক্যাল চার্জসহ সিভিল অ্যাভিয়েশনের বিভিন্ন চার্জ মওকুফ করতে হবে। তাহলে এ খাত বেঁচে থাকবে। আর এ খাত বেঁচে থাকলে বিপুল অর্থ বিদেশি এয়ারলাইন্স নিয়ে যেতে পারবে না।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মহিবুল হক বলেন, দেশের বিমান সংস্থাগুলোর প্রতি আমাদের সহানুভূতি আছে। তাদের কীভাবে সুবিধা দেওয়া যায়, সেটা আমরা চিন্তা করছি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও এ ব্যাপারে কথা বলবো। বিশ্বের অন্য দেশে অ্যাভিয়েশন শিল্পকে বাঁচাতে যেভাবে দেখা হচ্ছে, আমরাও সেই পদক্ষেপ নেবো।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *