করোনা মহামারী কাটিয়ে রূপসায় নৌকা বাইচ, মাতলো খুলনাবাসী
দ. প্রতিবেদক
খুলনার রূপসা নৌকা বাইচ আয়োজনে দেখা যেত প্রাণের উচ্ছ¡াস। কয়েকবছর থেকে রূপসা নদীতে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে এ আয়োজন। তবে করোনার কারণে বন্ধ ছিলো এ ঐতিহ্যবাহী প্রতিযোগিতা। করোনার প্রকোপ কমে আসায় নতুন বছরের প্রথম দিনে গতকাল শনিবার বিকেলে অনুষ্ঠিত হয় নৌকাবাইচ।
বাইচে মানুষের ঢল নেমেছিল। বাইচ শুরুর আগেই রূপসা সেতুসহ দুই নদীর তীর মানুষের উপচেপড়া ভিড় দেখা যায়। জায়গা সংকুলান না হওয়ায় কয়েকশ ইঞ্জিনচালিত ট্রলার, বড় বড় অসংখ্য কার্গো এবং নদীর পাড়ে ভবনের ছাদে উঠে লক্ষাধিক মানুষ বাইচ উপভোগ করেন।
কাস্টম ঘাট এলাকা থেকে প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে খানজাহান আলী সেতু (রূপসা সেতু) এলাকায় গিয়ে শেষ হয়। নৌকাবাইচকে কেন্দ্র করে তৈরি হয় আনন্দঘন পরিবেশ। নানা রঙের পোশাকে বাইচে অংশ নেন প্রতিযোগীরা। ঢাক-ঢোলসহ নানা বাদ্যের তালে তালে ছিল সারিগান। নানা বর্ণে, আনন্দে-উল্লাসে বেশ জমে ওঠে বাইচ।
দূর-দূরান্ত থেকে নৌকাবাইচ দেখতে আসা দর্শণার্থীরা দুপুর পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঘোরাঘুরি, আত্মীয় স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ এবং দুপুরের খাবার শেষে প্রতিযোগিতা দেখতে প্রস্তুতি নিতে থাকেন। নদীর দু’পাড়ের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেন।
নৌকাবাইচ দেখতে আসা বেশ কয়েকজন দর্শক জানান, এবার ভালো আয়োজন হয়েছে। ঐতিহ্যবাহী নির্মল সুস্থধারার এ নৌকাবাইচ দেখে দারুণ মুগ্ধ দর্শনার্থীরা।
আবহমান বাংলার ঐতিহ্য ধরে রাখতে প্রতি বছরের মত এবারও খুলনার রূপসা নদীতে ‘ফ্যান্টাস্টিক ১৪ তম খুলনা নৌকা বাইচ’ অনুষ্ঠিত হয়। নগর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এবং আকিজ বেকার্স লিমিটেডের ফ্যান্টাস্টিক বিস্কুটের সৌজন্যে অনুষ্ঠিত হয় এ বাইচ।
দুপুর ২টায় নগরীর ২ নম্বর কাস্টমঘাটে বেলুন উড়িয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এ প্রতিযোগিতার উদ্বোধন ঘোষণা করেন খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক। পরে রূপসা নদীর কাস্টম ঘাট থেকে পীর খানজাহান আলী (র.) সেতু পর্যন্ত বাইচ অনুষ্ঠিত হয়। খুলনার দিঘলিয়া, কয়রা, নড়াইল, মাগুরা ও গোপালগঞ্জের ১২টি দল অংশ নেয়।
বাইচ চলাকালীন দ্বিতীয় রাউন্ড শেষে দিঘলিয়ার ‘সোনার বাংলা’ নামের নৌকাটি নদীতে ডুবে যায়। তবে কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এ সময় বাইচ নির্বিঘœ করতে নদীতে জেলা পুলিশ, নৌ পুলিশ, নৌবাহিনী ও কোষ্টগার্ডসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা টহল দেয়।
বাইচ শেষে বিজয়ী প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অর্জনকারী বাইচ দলকে পুরস্কৃত করা হয়। প্রতিযোগিতার প্রথম পুরস্কার ছিল ১ লাখ টাকা, দ্বিতীয় পুরস্কার ৬০ হাজার টাকা এবং তৃতীয় পুরস্কার ছিল ৩০ হাজার টাকা। বড় গ্রæপে প্রথম হয়েছে কয়রার সুন্দরবন টাইগার নৌকা, দ্বিতীয় মাগুরার মাগুরা টাইগা নৌকা, তৃতীয় তেরখাদার ভাই ভাই জলপরী নৌকা। ছোট গ্রæপে প্রথম রিয়া নৌকা বাইচ দল, দ্বিতীয় কপোতাক্ষ তুফা, তৃতীয় কপোতাক্ষ পঙ্খিরাজ।