May 5, 2024
আঞ্চলিককরোনালেটেস্টশীর্ষ সংবাদ

করোনা পরীক্ষা না করেই ১৯ ঘণ্টায় অক্সিজেন বিল ৫৪ হাজার টাকা!

দ. প্রতিবেদক
মাত্র ১৯ ঘন্টায় অক্সিজেন ভাড়া ৫৪ হাজার টাকা, বেড ভাড়া ১৫ হাজার টাকা আর ওষুধের বিল ২৭ হাজার টাকা। একজন করোনা উপসর্গের রোগীর কাছ থেকে এই টাকা আদায় করেছে খুলনার বেসরকারী গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। তবে রোগীকে দেয় হয়নি ভেন্টিলেশন। ছিলো না কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। করা হয়নি করোনা টেষ্টও। খুলনার বেসরকারী এই হাসপাতালে নজরুল ইসলাম নামের ওই রোগীকে গত ১৫ আগস্ট সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টায় ভর্তি করা হয়। পরদিন ১৬ আগস্ট বেলা পৌনে দুই টায় তিনি মারা যান। অতিরিক্ত বিলের কারণে চরম ক্ষুব্ধ নড়াইল সদরের বাধাল এলাকার নজরুল ইসলামের পরিবার।
নজরুল ইসলামের শোকাহত ভাই অ্যাডভোকেট নাজমুল ইসলাম বাবলু অভিযোগ করে বলেন, তার ভাই নজরুল ইসলাম শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। গত ১৫ আগস্ট সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় তার ভাইকে নড়াইল থেকে খুলনার গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু তার ভাই করোনা আক্রান্ত কিনা তা পরীক্ষা না করেই তাকে করোনা ইউনিটে ভর্তি করা হয়। ওই ইউনিটে কোনো সিনিয়র চিকিৎসক ছিলেন না। সদ্য যোগ দেওয়া জুনিয়র একজন চিকিৎসক তার ভাইকে চিকিৎসা দিয়েছেন।
তিনি জানান, ১৬ আগস্ট দুপুর ১টা ৫০ মিনিটের দিকে তার ভাই মারা যান। মৃত্যুর পর ওষুধ ছাড়া অন্যান্য বিল করা হয় ৭১ হাজার ৪০০ টাকা। এর মধ্যে বেড ভাড়া দেখানো হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। অথচ যে রুমে তার ভাইকে রাখা হয়েছিল, সেখানে মোট ৮ জন রোগী ছিল। ৮ জন রোগীর রুমে থাকা এক রোগীর বেড ভাড়া ১৫ হাজার টাকা হয় কিভাবে?
মৃতের স্ত্রী নড়াইল সদরের সম্মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক নাসরিন আকতার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কোনো পরীক্ষা না করেই তার স্বামীকে করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। অথচ এক বছর ধরে তার স্বামী ফুসফুসের সমস্যায় ভুগছিলেন। বিষয়টি চিকিৎসককে জানানো হলেও তারা করোনা ইউনিটে ভর্তি করেন। এছাড়া মাত্র একদিনের চিকিৎসায় বিল করা হয়েছে ৭১ হাজার ৪০০ টাকা। পরে তারা ৩ হাজার ৪০০ টাকা কম নেয়।
অ্যাডভোকেট নাজমুল ইসলাম বাবলু অভিযোগ করেন, মাত্র ১৯ ঘণ্টা অক্সিজেন দেওয়ার বিল করা হয়েছে ৫৪ হাজার টাকা। এছাড়া ওষুধের বিল হয়েছে আলাদাভাবে ২৭ হাজার টাকা। তিনি বলেন, গাজী মেডিকেলে চিকিৎসার নামে বাণিজ্য হয়েছে। শেষ পর্যন্ত তার ভাই মারাও গেছেন। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেন।
এ ব্যাপারে খুলনার সিভিল সার্জন ডা. সুজাত আহমেদ বলেন, করোনা পরীক্ষা না করে কোনো রোগীকে করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি করা অন্যায় কাজ। এছাড়া এতো অল্প সময়ে অক্সিজেন দেওয়ার জন্য ৫৪ হাজার টাকা বিল করার বিষয়টিও অস্বাভাবিক। রোগীর স্বজনরা সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রসহ লিখিত অভিযোগ দিলে তারা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন বলে জানান।
এ ব্যাপারে গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. গাজী মিজানুর রহমান বলেন, ওই রোগীকে আনার পর সিটি স্ক্যান করে দেখেন তার ফুসফুসের বেশীরভাগ অংশই ড্যামেজ হয়ে গেছে। সে কারণে দ্রুত তাকে অক্সিজেন দেওয়ার প্রয়োজন হয়। সে জন্য তাকে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা দিয়ে অক্সিজেন দেওয়া হয়েছে। যে পরিমাণ অক্সিজেন ও ওষুধ দেওয়া হয়েছে তার বিলই করা হয়েছে। কোনো বাড়তি বিল করা হয়নি।
তিনি বলেন, হাসপাতালে সিনিয়র-জুনিয়র সব ধরণের চিকিৎসকই চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। যেহেতু তার শ্বাসকষ্ট ছিল সে কারণে করোনা সন্দেহভাজন রোগী হিসেবেই তাকে ওই ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। রোগীর মৃত্যুর পর শোকে-কষ্টে তার পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন ধরণের অভিযোগ করছে, যা সঠিক নয়।

দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিন/ এম জে এফ

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *