April 26, 2024
আন্তর্জাতিককরোনালেটেস্ট

করোনা টিকার অর্ধেকই ধনী দেশের দখলে

করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় তরঙ্গ ইউরোপজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে, কোভিড-১৯ শনাক্তের ক্ষেত্রে প্রতিদিনের রেকর্ড ভেঙে চলেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। করোনা ভ্যাকসিনের জরুরত তাই আগের চেয়ে অনেক বেশি অনুভূত হচ্ছে।

ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো করোনাভাইরাসের একটি কার্যকর ভ্যাকসিন বাজারে আনতে দৌড়ঝাঁপ করছে। সম্প্রতি আশার আলোও দেখা গেছে। গত ৯ নভেম্বর ওষুধ কোম্পানি ফাইজার ও বায়োএনটেক ঘোষণা দেয় যে, তাদের পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিন প্রাথমিক ট্রায়ালে ৯০ শতাংশের বেশি কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। যদিও সারা বিশ্বে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভ্যাকসিন সরবরাহের জন্য আরও দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে।

নিজেদের নাগরিকদের জন্য করোনাভাইরাসের টিকা নিশ্চিত করতে ভ্যাকসিনগুলোর কার্যকারিতা প্রমাণিত হওয়ার আগেই সেগুলো আগাম চুক্তিতে কিনে রাখছে বিশ্বের ধনী দেশগুলো। ওষুধ কোম্পানিগুলোর সঙ্গে অগ্রিম চুক্তির বেশিরভাগই করেছে উন্নত দেশ।

ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লোবাল হেলথ ইনোভেশন কেন্দ্রের গবেষকদের সংগৃহীত তথ্যমতে, করোনাভাইরাসের সম্ভ্যাব্য টিকার অর্ধেকের বেশি অগ্রিম কেনার চুক্তি সম্পন্ন করেছে উচ্চ-আয়ের দেশগুলো।

প্রি-অর্ডারের প্রায় ছয় ভাগের এক ভাগ কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরই দখলে। দেশটি আধা ডজন ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানির কাছ থেকে এক বিলিয়নের বেশি ডোজ প্রি-অর্ডার করে রেখেছে। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি নাগরিকের জন্য তিনটি করে করোনার টিকা ইতোমধ্যে বরাদ্দ হয়ে গেছে!

অন্যদিকে কানাডা আরও এক কদম এগিয়ে। তারা প্রতি নাগরিকের জন্য দশটি করে ডোজের বন্দোবস্ত আগাম করে রেখেছে। একক ব্যক্তির জন্য যেকোনো দেশের তুলনায় এটাই সর্বাধিক।

২০২১ সালের শেষ নাগাদ ফাইজার-বায়োএনটেক যে পরিমাণ ভ্যাকসিন উত্পাদন করতে পারবে তার অর্ধেক, প্রায় ৬০০ মিলিয়ন ডোজ অগ্রিম কেনার চুক্তি সম্পন্ন করে ফেলেছে গুটিকয়েক দেশ।

তবে কানাডা-যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপীয় ধনী দেশগুলোর নাগরিকদের মতো ভাগ্যবান নয় পৃথিবীর অন্যান্য প্রান্তের নাগরিকরা। ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা বলছেন, দরিদ্র দেশগুলিকে মূলত নির্ভর করতে হবে কোভ্যাক্সের ওপর। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে যে ভ্যাকসিনটির কার্যক্রম চলছে। এই উদ্যোগের অংশ নেওয়া দেশগুলোর জন্য ৫০০ মিলিয়ন ডোজ কেনার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। আয়-নির্বিশেষে অংশগ্রহণকারী সব দেশে সমানভাবে কোভ্যাক্স বিতরণের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে সংস্থাটি। তবে এতে দেশগুলোর এক-পঞ্চমাংশ নাগরিককে করোনার টিকা সরবরাহ করা সম্ভব হবে।

কয়েকটি উন্নত দেশ প্রতিবেশী অনুন্নত দেশকে করোনার ভ্যাকসিন সরবরাহ করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। অস্ট্রেলিয়া তার প্রতি নাগরিকের জন্য পাঁচটি করে টিকার অগ্রিম চুক্তি করে রেখেছে। একই সঙ্গে দেশটি প্রশান্ত মহাসাগরীয় প্রতিবেশী ভানুয়াতু ও কিরিবাতির মতো ছোট্ট দেশের নাগরিকদের ভ্যাকসিন সরবরাহ করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

অন্যদিকে চীন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোভ্যাক্স উদ্যোগে যুক্ত হয়ে ঘোষণা দিয়েছে, তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে থাকা বার্মা, কম্বোডিয়া ও ফিলিাইন্সসহ দরিদ্র কয়েকটি দেশের সঙ্গে করোনা ভ্যাকসিন ভাগাভাগি করে নেবে।

তবে কার্যকরী ভ্যাকসিনের সরবরাহ নিতান্তই যদি স্বল্প হয় তবে এই সব হিসাব-নিকাশ, প্রতিশ্রুতি ও অগ্রিম চুক্তি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে উঠতে পারে। কিংবা মানুষজন যদি সরবরাহকৃত টিকায় ভরসা না করে তা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায়। গত জুনে একদল গবেষক ১৯টি দেশের ১৩ হাজার নাগরিককে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তারা নিরাপদ ও কার্যকর টিকা গ্রহণ করবেন কিনা? এক-চতুর্থাংশের বেশি উত্তরদাতা জবাবে ‘না’ বলে দিয়েছিলেন।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *