করোনাভাইরাসের ঝুঁকিকে হালকা করে দেখেছিল ট্রাম্প প্রশাসন, অভিযোগ হুইসেলব্লোয়ারের
কোভিড-১৯ এর বিপদ নিয়ে আগে থেকে সতর্ক করার পরও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন তা হালকা করে দেখেছিল বলে অভিযোগ করেছেন প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস মোকাবেলায় প্রতিষেধক প্রস্তুতের দায়িত্বে থাকা একটি সংস্থার সাবেক এক কর্মকর্তা।
‘হুইসেলব্লোয়ার’ রিক ব্রাইটের দাবি, করোনাভাইরাস নিয়ে সতর্ক করার পর তাতে গা না করে কর্তাব্যক্তিরা উল্টো তার বিরুদ্ধেই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছেন।
বায়োমেডিকেল অ্যাডভান্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের পদচ্যুত এ পরিচালক যুক্তরাষ্ট্রের স্পেশাল কাউন্সেলের দপ্তরে এ সংক্রান্ত্র অভিযোগও দিয়েছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
ব্রাইটের দাবি, জানুয়ারিতে তিনি প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করে স্বাস্থ্য ও মানবসেবা মন্ত্রী অ্যালেক্স আজার ও অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের চক্ষুশূল হয়েছিলেন।
“ড. ব্রাইট মহামারী মোকাবেলাকে গুরুত্ব দিতে কাজ করছিলেন, কিন্তু তিনি স্বাস্থ্য ও মানবসেবা মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ নেতৃত্বের বাধার মুখে পড়েন। এদের মধ্যে মন্ত্রী আজারও আছেন, যিনি ভয়াবহ এ বিপদের ঝুঁকিকে হালকা করে দেখেছিলেন বলেই মনে হচ্ছে,” স্পেশাল কাউন্সেলের দপ্তরে দেওয়া অভিযোগে এমনটাই বলেছেন ব্রাইটের আইনজীবীরা।
মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ৭২ হাজারেরও বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে; এ সংখ্যা বিশ্বের অন্য যে কোনো দেশের তুলনায় বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত-মৃত্যুর সংখ্যা ও ব্যাপকভিত্তিক সংক্রমণের জন্য ডেমোক্রেটদের পাশাপাশি অনেক রিপাবলিকান রাজনীতিকও ট্রাম্প প্রশাসনকে দোষারোপ করছেন। তাদের ভাষ্য, প্রশাসন কেবল করোনাভাইরাসকে হালকা করেই দেখেনি করোনাভাইরাস শনাক্তে পর্যাপ্ত পরীক্ষা কিট ও সুরক্ষা উপকরণ সংগ্রহেও দেরি করেছে।
ব্রাইটকে বায়োমেডিকেল অ্যাডভান্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের পরিচালকের পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যকার ‘হুইসেলব্লোয়ারদের’ সুরক্ষায় থাকা একটি আইনের লংঘন করেছে বলেও মত তার আইনজীবীদের।
যুক্তরাষ্ট্রের এ বায়োমেডিকেল অ্যাডভান্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট দেশটির স্বাস্থ্য ও মানবসেবা মন্ত্রণালয়ের (এইচএইচএস) অধীন।
এইচএইচএসের মুখপাত্র কেইটলিন ওকল এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ব্রাইটকে বায়োমেডিকেল অ্যাডভান্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট থেকে সরিয়ে ভাইরাস শনাক্তে পরীক্ষা কিট উদ্ভাবন ও সমৃদ্ধের অন্য দায়িত্বে নিয়ে আসা হয়েছিল।
“কিন্তু তিনি আমেরিকান জনগণ ও সংকটকালীন এ মুহুর্তে কাজে যোগ না দিয়ে আমাদের হতাশ করেছেন,” বলেছেন ওকলে।
এর আগে গত মাসে এক বিবৃতিতে ব্রাইট বলেছিলেন, করোনাভাইরাসের ওষুধ হিসেবে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ও অন্যান্য ক্লোরোকুইনের ব্যবহার নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের অবস্থানের বিরোধীতা করায় তাকে নিচের পদে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞানভিত্তিক কোনো প্রমাণ না থাকা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের সরকার ওই ওষুধগুলোকে ‘মহৌষধ’ হিসেবে হাজির করতে চেষ্টা করেছিল, অভিযোগ করেছিলেন তিনি।
ব্রাইটকে আগামী ১৪ মে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের একটি প্যানেলের শুনানিতে উপস্থিত হতে হবে বলে তার মুখপাত্র জানিয়েছেন।
প্রতিনিধি পরিষদের ডেমোক্রেট স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি হুইসেলব্লোয়ার ব্রাইটের অভিযোগ নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনকে একহাত নিয়েছেন।
“শেষ যে জায়গায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ প্রয়োজন, তা হচ্ছে বিজ্ঞান,” এমএসএনবিসিকে এমনটাই বলেছেন তিনি।
টিকা ও প্রতিষেধক বিশেষজ্ঞ ব্রাইট ২০১৬ সালে বায়োমেডিকেল অ্যাডভান্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের পরিচালক পদে নিয়োগ পান।
তাকে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের অধীনে একটি পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ প্রকল্পে সরিয়ে দেয়া হয়েছে বলে গত মাসে এইচএইচএস জানিয়েছিল।
স্পেশাল কাউন্সেলের দপ্তরে করা অভিযোগে ব্রাইট বায়োমেডিকেল অ্যাডভান্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের পদ ফেরত এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চেয়েছেন।