May 19, 2024
জাতীয়লেটেস্ট

করোনা সংক্রমণ বাড়ছে, হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ

দেশে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। ফলে সারাদেশের সব হাসপাতালকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।একই সঙ্গে দেশের সকল স্থানে যাতে মানুষের স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা হয় সেজন্য কঠোর ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী।

সোমবার (১৫ মার্চ) দুপুরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে জাতীয় কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন সংক্রান্ত আলোচনা সভা শেষে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, জাতীয় দিবসকে কেন্দ্র করে আমরা যে অনুষ্ঠানগুলো করবো সেগুলো যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে করা হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্যবিধি প্রণয়ন করে। তারা যাতে স্বাস্থ্যবিধি পালন করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। যেকোনো কাজেই স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। যাতে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি না পায়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চেষ্টা করছে সংক্রমণ কমিয়ে রাখার জন্য কিন্তু দেশে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কাজেই এসব অনুষ্ঠানের মাধ্যমে যাতে করোনা বৃদ্ধি না পায় সেদিকে আমাদের লক্ষ্যে রাখতে হবে।

‘আমরা অনুষ্ঠান করতে গিয়ে যেন হাসপাতালের সেবা ব্যাহত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সেবা সঠিকভাবে দিতে হবে। হাসপাতাল-ক্লিনিকের কার্যক্রম সঠিক রাখতে হবে। মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেলা-উপজেলা হাসপাতাল, বড় বড় হাসপাতাল যেখানে করোনা রোগী এখন বাড়ছে সেখানে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করেই কাজগুলো করতে হবে’ যোগ করেন মন্ত্রী।

করোনার সংক্রমণ বাড়ছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে কি-না জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, করোনা নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ বেশ সফলতা পেয়েছে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই তার দিকনির্দেশনার জন্য। একইসঙ্গে সচিব, ডাক্তারসহ সকল পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানাই, যাদের ত্যাগ ও চেষ্টার মাধ্যমে আমরা করোনা নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছি। যার কারণে দেশের অর্থনীতি ভালো অবস্থানে আছে, মানুষ স্বাভাবিক জীবন-যাপন করছে।

‘আমরা টিকাও ভালো করে দিতে সক্ষম হয়েছি। যার জন্য দেশে-বিদেশে প্রশংসাও পাচ্ছি। ব্লুমবার্গ, জাতিসংঘের মহাসচিব, ডাব্লিউএইচও, বিভিন্ন রাষ্ট্রপ্রধানরা প্রশংসা করেছেন। ১৫-২০ দিন আগেও সংক্রমণ কমতে কমতে ২ দশমিক ৩-এ নেমেছিল, এর মানে প্রায় শেষ হওয়ার কথা। আমাদের মৃত্যুর হার নেমেছিল ১ দশমিক ৫ শতাংশে। আমাদের সুস্থতার হার অনেক বেড়েছিল, প্রায় ৯২ শতাংশ সুস্থতার হার বেড়েছিল। এই পর্যায়ে দেখা যাচ্ছে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। করোনা সংক্রমণের পার্সেন্টেজ এখন ৭ শতাংশে উঠে এসেছে। মৃত্যুর হারও বেড়েছে। গতকালও প্রায় ১৮ জন মৃত্যুবরণ করেছে, যেটা গত আড়াই মাসেও এমন হয়নি। আমরা খুবই আতঙ্কিত ও উদ্বিগ্ন।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা ইতোমধ্যে সচিব-ডিজিদের নিয়ে জুম মিটিং করেছি। সেখানে সারা বাংলাদেশের জেলা-উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালের কর্মকর্তাদের নিয়ে মিটিং করেছি, জানার চেষ্টা করেছি কেন এটা বাড়ছে। আমাদের কাছে খবর এসেছে, মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। তারা মনে করে, করোনা এখন বাংলাদেশে নেই বললেই চলে।

‘মানুষ কক্সবাজার, সিলেট, চট্টগ্রামে ঘুরে বেড়াচ্ছে, কোনো মাস্ক পরছে না। তারা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখছে না, পিকনিক চলছে, বিয়ে ধুমছে চলছে। আমি দুইদিন আগে একটি বিয়েতে গেলাম, আত্মীয়ের বিয়ে বলে গেছি। সেখানে দেখলাম, হাজার হাজার লোক। একটা মানুষের মুখে মাস্ক নেই। এ ধরনের পরিস্থিতি সারাদেশে চলছে। আমাদের জাতির মধ্যে অতিমাত্রার ওভার কনফিডেন্স চলে এসেছে যে, আমাদের মধ্যে তো করোনা নেই, চলে গেছে। এটি খুবই উদ্বেগজনক’ যোগ করেন মন্ত্রী।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, মাঠ পর্যায় থেকে জানলাম, মানুষ করোনার টেস্ট করাতে চাচ্ছে না। কারণ তারা টেস্ট করলে নাকি লকডাউন হতে পারে। সেজন্য তারা টেস্ট করাতে চাচ্ছে না। বাজার-ঘাট, অফিস-আদালত যেখানে নো মাস্ক নো সার্ভিসের একটা পলিসি ছিল সেটাও মানুষ অবহেলা করছে। এ কারণে করোনা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যেটা দেশ ও দেশের মানুষের জন্য মঙ্গলজনক নয়। আমরা ইতোমধ্যে কিছু নির্দেশনা দিয়েছি, যেটা সব জেলা পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। যেহেতু হাসপাতালে রোগী আগের চেয়ে বেড়ে গেছে, সারাদেশে প্রাইভেট ও সরকারি মিলে ১ হাজার ৯০০ হয়ে গেছে। ফলে ৫০০-এর বেশি রোগী বেড়ে গেছে এবং এটা খুব দ্রুত বাড়ছে।

তিনি বলেন, করোনা যাতে তাড়াতাড়ি আমরা নিয়ন্ত্রণে নিতে পারি সেজন্য ডিসিদের কাছে আমরা চিঠিও দিয়েছি এবং মন্ত্রিসভা থেকেও দেয়া হয়েছে। যাতে তারা কিছু সিদ্ধান্ত নেয় এবং প্রয়োগ করে। অর্থাৎ মোবাইল কোর্ট করে, যারা মাস্ক না পরবে তাদের জরিমানা করবে, নো মাস্ক নো সার্ভিসকে কঠোরভাবে প্রয়োগ করবে এবং বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানের গেস্ট কন্ট্রোল করবে। যেসব জায়গায় টেস্টে মানুষের অনীহা সেগুলো বাড়ানোর চেষ্টা করবে।

হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, যেহেতু রোগী নেই, তাই অনেক হাসপাতালে করোনা ইউনিট ছিল না। আবারও প্রতিটি হাসপাতালে করোনা ইউনিটের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। সেখানে পর্যাপ্ত অক্সিজেন আছে। কারণ আমরা প্রায় ৯০টি নতুন হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাগিয়েছি। শুধু আইসিইউ বা সিসিইউতে নয়, আমরা অক্সিজেন লাইন ওয়ার্ডেও টেনে এনেছি। কাজেই আইসিইউ ফ্যাসিলিটি একজন রোগী ওয়ার্ডে বসেও পেতে পারবে।

‘ওষুধের কোনো অভাব নেই, যথেষ্ট অক্সিজেন আছে, ডাক্তার-নার্স আছেন। অন্যান্য যে বিষয়গুলো করোনা চিকিৎসায় লাগে সেগুলোর ব্যবস্থা রাখতে বলা হয়েছে। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সবাই যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে। স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘিত হলে আমেরিকা-ইউরোপের মতো হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। আমরা বাংলাদেশকে সে পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাই না। আমরা বাংলাদেশকে ভালো রাখতে চাই।’

সভায় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব আবদুল মান্নান, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ আলী নূর, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলমসহ মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *