April 27, 2024
আন্তর্জাতিক

কমলা হ্যারিসকে নিয়ে দ. এশীয়রা উচ্ছ্বসিত কেন?

অ্যাফ্রো-ইন্ডিয়ান বংশোদ্ভূত প্রথম আমেরিকান হিসেবে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট (ভিপি) প্রার্থী হয়েছেন কমলা হ্যারিস। তার বিষয়ে ২৭ বছর বয়সী তামানি জয়শিঙ্গের মুখে সবার আগে যে দু’টি শব্দ আসলো তা হচ্ছে, ‘কমলা আন্টি’। দক্ষিণ এশীয় পরিবারগুলোতে আন্টি (খালা, ফুপু, চাচি প্রভৃতি) হচ্ছে পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ এক সদস্য। সুতরাং শ্রীলঙ্কান বংশোদ্ভূত তামানির কথাতেই বোঝা যায়, তারা কমলা হ্যারিসকে কতটা আপন ভাবছেন, তিনি প্রার্থী হওয়ায় কতটা খুশি হয়েছেন!

তামানি জয়শিঙ্গে বার্তাসংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে বলেন, ‘তিনি একই সঙ্গে কৃষ্ণবর্ণ, আবার বাদামি। এটাই বিষয়টিকে এত উত্তেজনাপূর্ণ করে তুলেছে। আমি তার সঙ্গে যোগসূত্র অনুভব করছি।’

কমলা হ্যারিসের বাবা জ্যামাইকান আর মা ভারতীয়। রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের শুরুতে যখন তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল ও সিনেটর হন, তখনও অনেকেই জানতেন না কমলার দক্ষিণ এশীয় রক্তের কথা। বুধবার ডেমোক্রেটদের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেন তার সহযোগী হিসেবে কমলার নাম ঘোষণার পর নিজের সম্পর্কে বলতে গিয়ে ভারতীয় মায়ের কথা উল্লেখ করেন তিনি। তবে একইসঙ্গে নিজেকে কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান বলে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যের কথাও জানান।

কমলা হ্যারিস যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট হয়ে ইতিহাস গড়বেন কি না সেটা জানা যাবে নভেম্বরে। তবে তার প্রার্থিতার ঘোষণা আসার পরপরই উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠেছেন দক্ষিণ এশীয়রা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে বইছে আনন্দের বন্যা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই টেনে আলোচনা হচ্ছে কমলার ভারতীয় মায়ের চেন্নাই থেকে ক্যালিফোর্নিয়া যাত্রার বিষয়টিকে। ভারতের অন্যতম প্রভাবশালী দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়া শিরোনাম করেছে ‘এ ডটার অব চেন্নাই, কমলা ব্লুমস ইন ইউএস’ অর্থাৎ ‘চেন্নাইয়ের মেয়ে কমলা (পদ্মফুল) ফুটল যুক্তরাষ্ট্রে’।

১৯৭০-এর দশকে ভারত ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছিলেন আলেয়াম্মা কেনি। এখন শিকাগোয় থাকেন অবসরপ্রাপ্ত এ নার্স। কমলা প্রসঙ্গে কেনি বলেন, ‘তিনি আমাদেরই একজন। কমলা হ্যারিস ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ায় মনে হচ্ছে আমার পরিবারেরই কেউ মনোনয়ন পেয়েছে।’

পেশায় আইনজীবী কমলা জানান, তার জীবনে মা শ্যামলা গোপালানের প্রভাব সবচেয়ে বেশি। তিনি ২০০৯ সালে মারা যান। তবে ক্যান্সার গবেষক ও নাগরিক অধিকার কর্মী হিসেবে মায়ের কাজ কমলাকে অনেক বেশি অনুপ্রাণিত করে

শ্যামলা গোপালান ১৯৫৮ সালে ভারত থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যান। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ায় পড়াশোনার সময় তার সঙ্গে পরিচয় হয় জ্যামাইকান অভিবাসী ডোনাল্ড হ্যারিসের। পরে বিয়ে করেন তারা। তাদের বিচ্ছেদের আগে শ্যামলার গর্ভে দুই মেয়ের জন্ম হয়। পরে সন্তানদের নিয়ে ভারতে ফিরে যান তিনি এবং দুই মেয়ের নাম রাখেন ভারতীয়দের অনুকরণে- কমলা দেবি হ্যারিস এবং মায়া লক্ষ্মী হ্যারিস।

কমলার মা এমন সময় যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যান যখন দেশটিতে ভারতীয়দের সংখ্যা ছিল একেবারেই হাতেগোনা। সেখানে পৌঁছে তিনি বুঝতে পারেন, আমেরিকান সমাজ তার দুই মেয়েকে কৃষ্ণাঙ্গ হিসেবেই দেখবে। এ কারণে ভারতীয় মা হয়েও সন্তানদের তিনি ‘আত্মবিশ্বাসী গর্বিত কৃষ্ণাঙ্গ’ হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেন।

হাওয়ার্ড ইউনিভার্সিটি থেকে গ্রাজুয়েশন করা কমলা হ্যারিস পরিষ্কার বলেছেন, তিনি নিজের কৃষ্ণাঙ্গ পরিচয় নিয়ে গর্বিত এবং আত্মবিশ্বাসীও। ২০১৯ সালের মার্চে একটি রেডিওর ইন্টারভিউয়ে কমলা বলেন, ‘আমি কৃষ্ণাঙ্গ এবং আমি গর্বিত যে আমি কৃষ্ণাঙ্গ। আমি কৃষ্ণাঙ্গ হয়ে জন্মেছি, কৃষ্ণাঙ্গ হয়েই মরব। আমি কাউকে অজুহাত দেখাতে যাব না, কারণ তারা বুঝবে না।’

বুধবার বক্তব্যকালে এ ডেমোক্রেট নেতা বলেছেন, ‘জো বাইডেন হচ্ছেন একমাত্র ব্যক্তি যিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কাজ করেছেন, আবার প্রথমবার কৃষ্ণাঙ্গ নারীকে তার সহযাত্রী হিসেবে বেছে নিয়েছেন।’

২০১৬ সালে সিনেটর নির্বাচিত হন কমলা হ্যারিস। একই বছর আরও তিন ইন্দো-আমেরিকান নারী প্রথম মেয়াদে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য হন, তাদেরই একজন প্রমিলা জয়পাল। প্রথম ইন্দো-আমেরিকান কংগ্রেসওম্যান হিসেবে তিনিও এশীয়দের সঙ্গে কমলার প্রার্থিতা উদযাপন করেছেন।

প্রমিলা বলেন, ‘আমরা চাই না তিনি শুধু আমাদের এশিয়ান-আমেরিকান বোন হন। তিনি সত্যিই প্রতিনিধিত্ব করেন। তার দ্বিজাতিগত অংশটি অভিবাসী সম্প্রদায়ের অভিজ্ঞতাগুলোর প্রতিনিধিত্ব করে।’

শিকাগো ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক জাফর বোখারি পাকিস্তানি অভিবাসী। তিনিও ভারতীয় বংশোদ্ভূত কমলা হ্যারিসকে নিজের সন্তানদের জন্য আদর্শ বলে মনে করেন।

ভারতীয় উপমহাদেশের কারও যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়াকে উৎসাহদায়ক জানিয়ে জাফর বলেন, ‘এটি অনেক বড় অর্জন। তিনি নিজেকে যেভাবে উপস্থাপন করেছেন আমি সত্যিই তার প্রশংসা করি। তিনি এই পদ অর্জন করেছেন এবং আমি সেটিকে শ্রদ্ধা করি।’

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *