December 21, 2024
জাতীয়লেটেস্ট

ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী : ‘মুজিববর্ষে কেউ গৃহহীন থাকবে না’

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক

মুজিববর্ষে বাংলাদেশকে ভূমিহীন-গৃহহীন অসহায় মানুষমুক্ত করতে দলের নেতা-কর্মীদের সহযোগিতা চেয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের সব নেতাকর্মীর কাছে এটা আমার একটা আবেদন থাকবে।

গতকাল শনিবার বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ আহ্বান জানান।

স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত মুজিববর্ষ ঘোষণা করেছে সরকার। ১৭ই মার্চ জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে বর্ণাঢ্য আয়োজনে মুজিববর্ষের উদ্বোধন করা হবে।

নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী বা আমাদের অন্যান্য অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের সব নেতাকর্মীর কাছে আমার একটা আবেদন থাকবে… একটা কাজ যদি আপনারা করেন এর থেকে বড় স্বার্থকতা আর হবে না। আমি সেই কাজটাই আপনাদের দিতে চাই।’

‘আমি চাই-মুজিববর্ষ আমরা উদযাপন করছি, এই মুজিববর্ষের ভেতরেই বাংলাদেশে একটা মানুষও গৃহহীন থাকবে না। সেখানে আমি অনুরোধ করবো- আওয়ামী লীগের এত নেতাকর্মী, এত আদর্শের সৈনিক; আপনারা যার যার নিজের গ্রামে, নিজের এলাকায় নিজেরা একটু খোঁজ নেন যে, আপনার এলাকায় কয়টা মানুষ গৃহহীন আছে। কয়টা মানুষ গৃহহারা আছে, ভূমিহীন আছে। আপনারা একটু খুঁজে বের করেন। তাদের আমরা ঘর করে দেবো। আপনারা পয়সা খরচ করতে না পারলে আমি দেবো। কিন্তু তাদের আমরা ঘর দিয়ে যেতে চাই।’

নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আমার এই কথা পৌঁছে দেবেন সারা বাংলাদেশে। আপনাদের কাছে এটা আমরা দাবি। যে খরচ করতে পারবে না সেখানে আমি টাকা দেবো। যেভাবে পারি দেবো। যারা অর্থশালী, সম্পদশালী, বিত্তশালী আছে তারা তো পারবেন। এই বাংলার মাটিতে কোনো মানুষ ভূমিহীন ও গৃহহীন থাকবে না।’

‘আমি সারা বাংলাদেশে মুজিব আদর্শের প্রতিটি নেতাকর্মীর কাছে  এই আহ্বানটাই রাখবো। … বাংলাদেশে একটা মানুষও গৃহহীন থাকবে মুজিববর্ষে এটা হতে পারে না।’

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের জন্য জাতির পিতা সংগ্রাম করেছেন কেন- তিনি বারবার কী বলেছেন, তিনি বলেছেন- ‘আমার জীবনের একমাত্র কামনা বাংলার মানুষ যেন অন্ন পায়, বস্ত্র, উন্নত জীবন পায়। পাশাপাশি তিনি বলেছেন- বাংলাদেশের মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা এই যে মৌলিক চাহিদাগুলো এই মৌলিক চাহিদাগুলো তিনি নিশ্চিত করতে চান।’

‘বঙ্গবন্ধুর সে আকাক্সক্ষা সেটা আমরা পূরণ করতে চাই। আমরা করে যাচ্ছি। তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমরা গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প, আমরা আশ্রায়ন প্রকল্প নিয়েছি। গৃহহীনদের জন্য গৃহায়ন প্রকল্প নিয়েছি। যার জমি আছে তাকে ঘর করে দিচ্ছি, দুর্যোগ মন্ত্রণালয় থেকে দুর্যোগ সহনীয় ঘর করে দিয়েছি। সরকারিভাবে আমরা এসব প্রোগ্রাম নিয়েছি।’

১৯৭৫ সালের পর ইতিহাস বিকৃত করে বঙ্গবন্ধুর নাম ও অবদান মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই বাংলাদেশে এমন একটা সময় ছিল আমাদের বাংলা ভাষা দাবি আদায়ের যে আন্দোলন সেখানে যে তার অবদান ছিল সেটা মুছে ফেলা হয়েছিল। নাই একেবারে অস্বীকার করেছিল।’

‘মহান মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তির সংগ্রামে যে তার অবদান সেটাও মুছে ফেলা হয়েছিল। এমনভাবে বিকৃত ইতিহাস তৈরি করা হলো যে কোনো এক মেজর এক বাঁশির ফুঁ দিলো আর অমনি যুদ্ধ হয়ে গেল, দেশ স্বাধীন হয়ে গেলো। এ রকম বিকৃত ইতিহাস। … তাকেই বানানোর চেষ্টা হয়েছিল ঘোষক হিসেবে,’ যোগ করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আসলে সত্যকে কখনো কেউ মুছে ফেলতে পারে না। আর জাতির পিতা তো তার ৭ ই মার্চের ভাষণে বলেই গেছেন যে ৭ কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবা না। কোনো কিছু দাবায়ে রাখা যায় না আসলে। সত্য উদ্ভাসিত হবেই। সত্য ঠিকই আসবে। আসকে সে সত্যটা মানুষের কাছে পরিষ্কার হয়েছে।’

বঙ্গবন্ধুর ভাষণের স্বীকৃতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেই ৭ ই মার্চের ভাষণ, যে ভাষণ বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ছিল। এখন তা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিশ্ব ঐতিহ্যের প্রামণ্য দলিলে স্থান করে নিয়েছে। ৭ ই মার্চের ভাষণ আড়াই হাজার বছরের যত ভাষণ যত সামরিক অসামরিক নেতারা দিয়েছেন তার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষণ যে ভাষণ জনগণকে উদ্বুদ্ধ করেছে স্বাধীনতার চেতনায়। এই ভাবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এই ভাষণ পেয়েছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা এই ভাষণ মুছে ফেলতে চেয়েছিল, নিষিদ্ধ করে রেখেছিল আমি জানি না তারা লজ্জা পায় কি না। অবশ্য তাদের লাজ লজ্জা আছে বলেও মনে হয় না। থাকলে তো একটা কথা ছিল ওসব নেই। কারণ যদি নির্লজ্জই না হবে ঐ ভাষণ বা তার নাম মুছে ফেলার চেষ্টা করে কেউ, করে না। যে ভাষণ বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছি আজকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সে ভাষণ স্বীকৃতি পেয়ে গেছে।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমু, মতিয়া চৌধুরী, কর্নেল (অব.) ফারুক খান, মাহবুব উল আলম হানিফ, ড. হাছান মাহমুদ, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান  প্রমুখ।

স্বাগত বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কবিতা আবৃত্তি করেন আবৃত্তিকার শিমুল মুস্তফা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ, উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন।

 

 

 

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *