এরশাদ সিকদারের সহযোগী মামুনের প্রতারণা করে ’২৭ বিয়ে’
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
সাহাদৎ হোসেন মামুন। একসময় ছিলেন খুলনা অঞ্চলের আলোচিত সন্ত্রাসী এরশাদ সিকদারের সহযোগী। তার নামে রয়েছে অসংখ্য মামলা। প্রতারণার মাধ্যমে বিয়ে করেছেন ২৭টি। যৌতুক এবং সহায়-সম্পত্তি হাতিয়ে নিতেই ছিল বিয়ে কৌশল। এই তালিকায় ছিল নার্সিং পেশার সঙ্গে জড়িত নারী এবং হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও স্বজনরা। করোনা মহামারিতে সরকারি হাসপাতাল থেকে অখ্যাত বেসরকারি হাসপাতালে রোগীদের এনে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেয়া দালাল চক্রের মূলহোতাদের একজন ছিলেন এই মামুন।
মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টায় তাকে (মামুন) তিন সহযোগীসহ আটক করেছে র্যাব। দালাল চক্রের অন্য সদস্যরা হলেন ন্যাশনাল হেলথ কেয়ার হাসপাতালের স্টাফ মো. মহিন উদ্দিন মামুন, মো. রহমত উল্লাহ ও মো. আকরাম হোসেন। বুধবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এসব তথ্য জানান র্যাব-২ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল খন্দকার সাইফুল আলম।
র্যাব জানায়, করোনা মহামারির সুযোগে দালাল চক্র রাজধানীর কিছু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে সরকারি হাসপাতাল থেকে বেসরকারি হাসপাতালে এনে মোটা অংকের কমিশনের মাধ্যমে রোগীদের হেনস্তা করে আসছিল। এমন তথ্যে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ন্যাশনাল হেলথ কেয়ার জেনারেল হাসপাতালে অভিযান চালানো হয়। এ সময় হাসপাতাল ও অ্যাম্বুলেন্স দালাল চক্রের মূল হোতাসহ চারজনকে আটক করা হয়। উদ্ধার হয়েছে সাড়ে তিন লাখ জাল টাকা ও ৫৫০ পিস ইয়াবা।
ঈদে দালালদের কোরবানির গরু দেয়ার প্রলোভনে সরকারি হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে আনা হচ্ছে জানিয়ে র্যাব-২ এর অধিনায়ক জানান, করোনাভাইরাসের প্রকোপে দেশের বিভিন্ন জেলার হাসপাতালে রোগীর চাপ বেড়েছে। আর এই সুযোগে ঢাকার অখ্যাত হাসপাতালগুলো দালাল চক্রের মাধ্যমে ফাঁদ পেতেছে। উন্নত চিকিৎসার প্রলোভনে সেসব হাসপাতালে দীর্ঘদিন আটকে রেখে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে। অখ্যাত হাসপাতালে রোগী আনার নামে আগেই শুরু হয় দামাদামি। লাখ টাকার রোগী আনতে পারলে দালালদের ২০ হাজার টাকা বা আসন্ন ঈদে কোরবানির গরু দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হচ্ছে। ঢাকা ও বিভিন্ন জেলার দালালদের সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্স দালাল চক্রেরও যোগসাজশ রয়েছে।
লে. কর্নেল খন্দকার সাইফুল আলম বলেন, ‘করোনা মহামারির সুযোগে এক শ্রেণির দালাল চক্র রাজধানীর কিছু অখ্যাত হাসপাতালের যোগসাজশে সরকারি হাসপাতাল ও জেলার হাসপাতাল থেকে রোগী নিয়ে আসে। এই চক্রের মোটা অংকের কমিশনের লেনদেনে হেনস্তার শিকার হচ্ছেন অসহায় রোগীরা। অনেক ক্ষেত্রে অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটও এই চক্রের সঙ্গে জড়িত। তারা কমিশনের বিনিময়ে উচ্চ ভাড়ায় ঢাকার বাইরের রোগীদের নির্ধারিত সেসব হাসপাতালে নিয়ে আসে।’
এসব তথ্যের ভিত্তিতে সাহাদৎ হোসেন মামুনকে আটক করা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘চক্রটি দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে রোগী নিয়ে আসে। এরপর রোগীদের অনর্থক আইসিইউ-সিসিউতে রেখে কিংবা অযথা বিভিন্ন টেস্টের মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিতো। বিভিন্ন জেলার স্থানীয় সিন্ডিকেটকে লাখ টাকার রোগী আনলে ২০ হাজার টাকা বা কোরবারির গরু কমিশনের অফার দেয়া হতো। স্থানীয় ওই সিন্ডিকেটের সঙ্গে ঢাকার হাপাতালের সিন্ডিকেট ও অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটও জড়িত।’
সাহাদৎ হোসেন মামুনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মামুন খুলনা অঞ্চলের বহুল আলোচিত সস্ত্রাসী এরশাদ সিকদারের সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন বলে জানা গেছে। পরবর্তী সময়ে এরশাদ সিকদারের ফাঁসির পর মামুন ঢাকায় এসে নানা ধরনের প্রতারণার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। বর্তমানে করোনা মহামারির সুযোগে হাসপাতালকেন্দ্রিক এই দালালি শুরু করেন। এছাড়া জাল টাকা-মাদক ব্যবসাসহ অন্য প্রতারণা চালিয়ে আসছিলেন তিনি। মামুন প্রতারণার মাধ্যমে ২৭টি বিয়ে করে যৌতুক ও ব্ল্যাকমেলিংয়ের মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেন। মূলত বিভিন্ন হাসপাতালের নারী স্টাফ ও হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসা সাধারণ রোগীর স্বজনদের তিনি এই ফাঁদে ফেলে অর্থ হাতিয়ে নিতেন।’
দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিন/ জে এফ জয়