এবার ব্যাংকের মালিকানায় যুক্ত হচ্ছেন সাকিব ও তার মা
ক্রিকেটের বাইরে সাকিব আল হাসান নানা সময়ে নানান ব্যবসার সঙ্গে নিজেকে জড়িয়েছেন। এবার আরও একটি ক্ষেত্রে নিজেকে জড়িয়ে নিচ্ছেন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার। করপোরেট জগতে নিজের অবস্থান শক্তিশালী করতে সাকিব আল হাসান হচ্ছেন ব্যাংকের মালিক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লাইসেন্স প্রাপ্তির অপেক্ষায় রয়েছে পিপলস ব্যাংক নামের একটি ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান। এই ব্যাংকেরই দুটি পরিচালক পদের মালিক হচ্ছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের আইকন সাকিবের হাতে। শুধু তিনিই নন, সাকিবের মা শিরিন আক্তারও ব্যাংকটির পরিচালক হচ্ছেন বলে জানা গেছে। এ সংক্রান্ত নথিপত্র বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠিয়েছে পিপলস ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশের একটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা গেছে এ তথ্য।
এর আগে সর্বশেষ ব্রোকারেজ হাউজ এবং স্বর্ণ আমদানি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নিয়েছিলেন সাকিব। স্বর্ণ আমদানির প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নেয়ার পর সাকিব নিজেই তার ফেসবুক পেজে এসে এ সম্পর্কে ভক্তদের জানিয়েছেন। এবার ব্যাংকের মত আর্থিক গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরেও বিনিয়োগ করতে যাচ্ছেন সময়ের সেরা এই ক্রিকেটার।
বাংলাদেশে বাণিজ্য বিষয়ক দৈনিক বণিক বার্তায় প্রকাশিত খবরে বলা হচ্ছে, ‘দেশের সব ব্যাংকের প্রতি মূলধন ৫০০ কোটি টাকায় উন্নীত করতে নির্দেশনা রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। সে হিসেবে বর্তমানে দেশে নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স পেতে হলে সমপরিমাণ অর্থই মূলধন হিসেবে জমা রাখতে হবে। উদ্যোক্তা হিসেবে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হতে হলে প্রয়োজন হয় সর্বনিম্ন ২ শতাংশ শেয়ার ধারণের। সে হিসেবে পিপলস ব্যাংকের প্রতিটি পরিচালক পদের জন্য সর্বনিম্ন ১০ কোটি টাকা মূলধন জোগান দিতে হবে সাকিব আল হাসানকে। তবে ব্যাংকটির মালিকানায় আসতে তিনি ২৫ কোটি টাকারও বেশি মূলধন জোগান দিচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।’
পিপলস ব্যাংকের প্রধান উদ্যোক্তা এমএ কাশেমও সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমটিকে সাকিব আল হাসানের ব্যাংকের মালিকানায় সম্পৃক্ত হওয়ার খবরটি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘পিপলস ব্যাংকের মালিকানায় সাকিব আল হাসান ও তার মা যুক্ত হচ্ছেন। এরই মধ্যে আমরা তাদের ফাইল বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দিয়েছি। সাকিবের মতো একজন তারকাকে উদ্যোক্তা হিসেবে পাওয়া আমাদের জন্য গৌরবের। এখনই আমরা এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে চাই না। পিপলস ব্যাংকের লাইসেন্সের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধন আমরা সংগ্রহ করতে পেরেছি। আশা করছি, ডিসেম্বরের মধ্যেই বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে আমরা চূড়ান্ত লাইসেন্স পাব।’
২০১৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি পরিচালনা পর্ষদের সভায় বেঙ্গল কমার্শিয়াল, সিটিজেনস ও পিপলস নামে নতুন তিনটি ব্যাংকের নীতিগত অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক চলতি বছরের মার্চে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করেছে। আর চূড়ান্ত লাইসেন্স পাওয়ার পর কার্যক্রম শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছে সিটিজেনস ব্যাংক। কিন্তু লেটার অব ইনটেন্ট (এলওআই) পাওয়ার পর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও পিপলস ব্যাংক এখনো লাইসেন্স নিতে পারেনি। চূড়ান্ত লাইসেন্স পেলে এটি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় বিনিয়োগের মাধ্যমে ব্যবসায়ী হিসেবে হাতেখড়ি সাকিব আল হাসানের। এরপর দ্রুতই নিজের ব্যবসার বিস্তৃতি ঘটিয়েছেন তিনি। স্বর্ণ আমদানি ও বিপণন, শেয়ারবাজার, বিদ্যুৎকেন্দ্র, প্রসাধনী, ট্রাভেল এজেন্সি, হোটেল, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, কাঁকড়া ও কুঁচের খামারসহ বিভিন্ন ব্যবসায় বিনিয়োগ রয়েছে তার। দেশের বাইরে যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে বড় অংকের বিনিয়োগ করেছেন তিনি।
তবে সবকিছুকে ছাড়িয়ে বছর দুয়েক ধরে দেশের পুঁজিবাজারের বড় প্রভাবক হয়ে উঠেছেন সাকিব। বড় অংকের অর্থ লগ্নি করেছেন তিনি। পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) শুভেচ্ছাদূত সাকিব আল হাসান চলতি বছরের মে মাসে একটি ব্রোকারেজ হাউজের অনুমোদনও পেয়েছেন।
দেশে বৈধভাবে স্বর্ণবার ও স্বর্ণালংকার আমদানি এবং বিক্রির জন্য ‘বুরাক কমোডিটিজ এক্সচেঞ্জ কোং’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সও নিয়েছেন তিনি। সব মিলিয়ে ক্রিকেটের মাঠ ছাপিয়ে করপোরেট জগতের বড় উদ্যোক্তা হয়ে উঠেছেন সাকিব আল হাসান।