May 18, 2024
জাতীয়

এখন ভালোবাসা তিরোহিত : ফখরুল

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক

বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে মামলার পরিসংখ্যান তুলে ধরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, গ্রামের ‘দুষ্ট মোড়লদের’ মতো মামলা দিয়ে বিরোধী রাজনীতিকদের ঘায়েল করা হচ্ছে। ক্ষমতাসীনদের এই কৌশলের কারণে এখন দেশ থেকে ভালোবাসা, মানুষের প্রতি মানুষের মমত্ব তিরোহিত হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

গতকাল বৃহস্পতিবার নয়া পল্টনে দলীয় এক বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল আগের দিন সংসদে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য নাকচ করে সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধীদের বিলীন করে দেওয়ার পরিকল্পনা হাতে নেওয়ার অভিযোগ করেন।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী সংসদে বলেছেন যে, আওয়ামী লীগ প্রতিহিংসার রাজনীতি করে না, করলে বিএনপির অস্তিত্ব থাকত না। এই কথাটা বলতে উনি (প্রধানমন্ত্রী) কী এটাই বুঝাতে চেয়েছেন যে, আসলে তারা অস্তিত্ব না রক্ষা করবার জন্যই কাজ করে যাচ্ছেন। শুধু বিএনপি নয়, বাংলাদেশে যাতে বিরোধী দল না থাকে, ভিন্নমত না থাকে, বিলীন হয়ে যায় তারই জন্য অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে কাজ করছেন।

এ প্রসঙ্গে ইতিহাসের স্মরণ নেন সত্তরোর্ধ্ব ফখরুল: যারা আমরা বয়স্ক মানুষ এদেশের ইতিহাস প্রথম থেকে দেখে এসেছি যে, ১৯৭৫ সালে একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। একইভাবে আজকে ভিন্ন কায়দায় একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হচ্ছে, প্রতিষ্ঠা করা হয়ে যাচ্ছে।

খালেদা জিয়ার জামিন না হওয়ার জন্য সরকারকে দায়ী করে বিএনপি মহাসচিব অন্যান্য বিভাগের মতো বিচার বিভাগের ওপরও সরকারি হস্তক্ষেপের অভিযোগ করেন।

তিনি বলেন, এখানে রাষ্ট্রের সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে তারা দলীয়করণ করেছে, করে ফেলা হয়েছে। এই যে আদালতের কথা বলা হচ্ছে- নিম্ন আদালতে কোনো সিদ্ধান্ত হয় না আইন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত ছাড়া। এখন উপরের দিকে আমাদের আস্থা ছিল এভাবে যদি আমরা একটা একটা ঘটনা দেখি জনগণের আস্থা সেখান থেকে আস্তে আস্তে কমে আসছে, আসা শুরু করেছে।

বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে মামলার পরিসংখ্যান তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, দুই মাস আগের একটা পরিসংখ্যান দিচ্ছি- ২৬ লক্ষ আসামি করা হয়েছে, এক লক্ষের উপরে মামলা, ৫০০-এর উপরে নেতা-কর্মী গুম, তার মধ্যে এমপি, কমিশনার থেকে শুরু করে সবাই আছে এবং কয়েক হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে।

আজকে বিএনপির স্থায়ী কমিটি থেকে শুরু করে একজনও নেই যাদের বিরুদ্ধে ৪০-৫০-১০০টা মামলা নেই। আমরা ঠিক বুঝি না- এটাকে কীভাবে আপনি গণতান্ত্রিক স্টেট বলবেন? কোনো সুযোগ নেই কথা বলার। পৃথিবীর ইতিহাসে কী এমন কোনো গণতান্ত্রিক দেশ আছে যেখানে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ৫০-৬০-১০০টা মামলা এবং দলের চেয়ারপারসন তার বিরুদ্ধে ৩৬টা মিথ্যা মামলা।

গ্রামের দুষ্ট মোড়ল থাকে কিছু, যারা কোনো দিনও জনগণের ভোটে চেয়ারম্যান-টেয়ারম্যান নির্বাচিত হতে পারে না, তাদের একটাই কাজ হচ্ছে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করে মিথ্যা মামলা দিয়ে, এতো সুন্দর করে সাজিয়ে টাজিয়ে দেয় যেটাকে উল্টানো খুব কঠিন হয়ে পড়ে। আজকে এখান থেকে শান্তি তিরোহিত হচ্ছে, ভালোবাসা তিরোহিত হচ্ছে, মানুষের প্রতি যে মমত্ববোধ সেটা তিরোহিত হচ্ছে। রাজ নৈতিক বিভাজনের তীব্রতা সামাজিক সম্পর্কেও প্রভাব ফেলছে বলে মনে করেন মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, আমরা ছাত্র জীবনে আমি এক রাজনীতি করেছি আর আমার বাবা আরেক রাজনীতি করেছেন। কখনো সমস্যা হয়নি, না আমার বাবার হয়েছে, না আমার হয়েছে। এখন তো আপনার ছেলে তো বিপদে পড়ে যাবে তার বাবা যদি আওয়ামী লীগ করে থাকেন, আর যদি ছেলে বিএনপি অথবা ছাত্র দল করে থাকে তাহলে বাবার বিপদ হবে।

আজকে গোটা বাংলাদেশ ও সমাজকে বিভক্ত করে ফেলা হয়েছে। ডিভাইডেড সোসাইটি। দেখবেন যে, এমন একটা অবস্থা হয়েছে যে, এখন কেউ কারও বাসায় যেতে চায় না একজন আরেক ভিন্ন দল করলে। ছেলে-মেয়েদের বিয়ে তো দূরের কথা। দাওয়াত-টাওয়াত দিলে যেতে চায় না এবং গেলে ভাবে যে, কী যেন আবার দেখে ফেলবে তার আবার চাকুরি-টাকরি চলে যায় সম্ভাবনা থাকে।

একই ভীতি সরকারি কর্মচারী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে সব জায়গায়। এভাবে একটা রাষ্ট্রকে ভীতি ও ত্রাসের মধ্যে নিয়ে যাওয়া-এটা হচ্ছে ফ্যাসিস্টদের কাজ, এই ফ্যাসিবাদ তারা চালু করেছে।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *