April 20, 2024
খেলাধুলা

এখনও শিলটনের চোখে প্রতারক ম্যারাডোনা!

দিয়েগো ম্যারাডোনা এখন এক ইতিহাসের নাম। ২৫ নভেম্বর বিকেলে মৃত্যুর দু’দিন পরই তাকে সমাহিত করা হয় মা-বাবার পাশে। আর্জেন্টাইন এই কিংবদন্তির মৃত্যু যে শোক তৈরি করেছে, তা যেন এখনও বিরাজমান পুরো ফুটবল বিশ্বে। সারা বিশ্বের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ মর্মাহত হয়েছেন ফুটবল ফুটবল রাজপুত্রের বিদায়ে।

তবে ইংল্যান্ডের সাবেক গোলরক্ষক পিটার শিলটন যেন এখনও ক্ষমা করতে পারেননি ম্যারাডোনাকে। তার চোখে মৃত্যুর পরও ম্যারাডোনা একজন প্রতারক। যদিও ম্যারাডোনার গ্রেটনেসকে স্বীকার করে নিয়েছেন তিনি। কাকতালীয় বিষয় ছিল, ওই ম্যাচে আর্জেন্টিনার অধিনায়ক ছিলেন ম্যারাডোনা এবং ইংল্যান্ডের অধিনায়ক ছিলেন পিটার শিলটন।

১৯৮৬ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি ঐতিহাসিক গোল করেছিলেন দিয়েগো ম্যারাডোনা। যার প্রথমটা ছিল হাত দিয়ে করা। যদিও সেটা তখন কেউই বুঝতে পারেননি। ম্যাচ শেষে ম্যারাডোনা নিজেই জানিয়েছিলেন, ‘ওটা ছিল হ্যান্ড অব গড’।

দ্বিতীয় গোলটাকে বলা হয় ‘গোল অব দ্য সেঞ্চুরি’। মাঝ মাঠ থেকে একক প্রচেষ্টায় পুরো ইংলিশ ডিফেন্সকে ভেঙে চুরমার করে গোল করেছিলেন ম্যারাডোনা। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেই ম্যাচে ইংল্যান্ডের পোস্টের নিচে ছিলেন কিংবদন্তি গোলরক্ষক পিটার শিলটন। তাকে ফাঁকি দিয়েই হাত দিয়ে গোল করেছিলেন আর্জেন্টাইন ফুটবল জাদুকর।

ম্যারাডোনার মৃত্যুর পর পিটার শিলটন এ নিয়ে কথা বলেন। ডেইলি মেইলে লেখা একটি কলামে তিনি লেখেন, ‘দিয়েগো ম্যারাডোনার সঙ্গে দীর্ঘ সময়ের জন্য আমার জীবনটা জড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু যেভাবে জড়িয়েছে, সেটাকে আমি পছন্দ করি না। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে, খুব তাড়াতাড়িই তার মৃত্যুর সংবাদটা শুনতে হলো। খুব কম বয়সেই সে চলে গেলো।

কোনো সন্দেহ নেই যে, ম্যারডোনা ছিলেন একজন সর্বকালের সেরা ফুটবলার। আমার ক্যারিয়ারে তার চেয়ে সেরা খেলোয়াড় আমি দেখিনি। তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা থাকলো।

মেক্সিকো সিটিতে ১৯৮৬ সালে খেলা ফুটবল বিশ্বকাপের সেই ম্যাচটিতে যদি ফিরে যাই তাহলে বলবো, আর্জেন্টিনার বিপক্ষে বিশ্বকাপের সেই কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচটি ছিল ইংল্যান্ডের জন্য সর্বকালের অন্যতম সেরা একটি ম্যাচ এবং সে ছিল আমাদের জন্য সবচেয়ে ভয়ঙ্কর একজন খেলোয়াড়।

ম্যারাডোনার জন্য কোনো স্পেশাল প্ল্যান ছিল না আমাদের। কোনো ম্যান মার্কিংও ছিল না। আমরা শুধু চেয়ে দেখছিলাম তার দৌড়, তার খেলা। আর চেষ্টা করছিলাম তাকে থামানোর। কিন্তু তাকে কোনোভাবেই থামানো যায়নি। এক ঘণ্টারও বেশি এই অবস্থার মুখোমুখি হতে হয়েছে আমাদেরকে।

আমরা আসলে কেউই বুঝতে পারছিলাম না, পরের মুহূর্তে কি ঘটবে। আমরা কি করবো, সেটাও বুঝতে পারছিলাম না। সে আমাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিল উচ্চতা নিয়ে, যে সে আমার কাছ থেকে বল নিতে পারবে। কিন্তু সে জানতো কোনোভাবেই হেড করতে মাথায় বল লাগাতে পারবে না। এ কারণেই সে ‘প্রতারণার’ আশ্রয় নেয় এবং হাত দিয়ে বল পাঞ্চ করে জড়িয়ে দেয় জালে। এটা ছিল পরিষ্কার একটি অপরাধ। বড় ধরনের একটি প্রতারণা।

আমি খেয়াল করেছিলাম, যখন সে গোল উদযাপনের জন্য দৌড় দিয়েছিল, তখনও সে দু’বার পেছন ফিরে তাকিয়েছিল। মনে হচ্ছিল রেফারির বাঁশির অপেক্ষা করছিল। কারণ ম্যারাডোনা তো জানতো, সে কি করেছে। সবাই বুঝতেও পেরেছিল। শুধুমাত্র রেফারি এবং দুই লাইন্সম্যান ছাড়া।

মানুষ কি বলবে আমি সে সম্পর্কে কোনো ভ্রুক্ষেপ করি না। আর্জেন্টিনা সেই ম্যাচ জিতেছে সত্য। তার দ্বিতীয় গোলটা ছিল অসাধারণ। কিন্তু আমরা মনে হয় যেন একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম তখন। পুরো ম্যাচে মনে হয় যেন ওই একবারই তাকে আমাদের চেয়ে বেশি দৌড়াতে দিয়েছি এবং সেটা থেকেই গোল এসে গেলো। ওটা ছিল অবশ্যই একটি সেরা গোল। কিন্তু আমরা সবাই নিশ্চিত, ম্যারাডোনা যদি প্রথম গোলটা ওভাবে না করতে পারতো, তাহলে দ্বিতীয় গোলটাও হয়তো এভাবে আসতো না।

এই বিষয়টাই বছরের পর বছর আমার মধ্যে এক ধরনের কষ্ট দিয়ে আসছে। আমি এখনও এ সম্পর্কে ভিন্ন কিছু বলবো না। মানুষ হয়তো এখনো বলে, চাইলে আমি ওই বলটা যেভাবেই হোক ক্লিয়ার করতে পারতাম। কারণ, উচ্চতায় খাটো একজন আমার ওপর জাম্প দিয়ে উঠে গোল করে ফেললো! এসব বাজে কথা। আমার চেয়ে তার গতি ছিল বেশি এবং যে কোনোভাবেই হয়তো সে এটা (গোল) করতো।

ম্যারাডোনা যদি জানতো, হেড করে বলে মাথা লাগাতে পারবে, তাহলে অবশ্যই সে ওই প্রতারণার আশ্রয় কখনো নিতো না। তাহলে কি সে ওটা করতো? (হাত দিয়ে গোল করা)। অবশ্যই না। সুতরাং, এ বিষয়ে আমাকে যত দোষ দেয়া হয়, আমি সেগুলোর কোনোটাতেই দোষি না।

কিন্তু একটা কারণে আমি তাকে কখনোই পছন্দ করতে পারিনি। কারণ, সে কখনোই ওই প্রতারণার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেনি। কোনো পর্যায়েই সে বলেনি যে, সে ওটা প্রতারণা করেছিল। এমনকি কখনো ‘স্যরি’ পর্যন্ত বলেনি। অথচ, সব সময়ই সে বরং গর্ব করে বলেছে, ‘ওটা ছিল হ্যান্ড অব গড।’ যা কখনোই কাম্য ছিল না।

সুতরাং, এটা ঠিক যে তার মধ্যে এই খেলার কারণে গ্রেটনেস ছিল। সর্বকালের একজন সেরা খেলোয়াড় হতে পারে সে, কিন্তু কখনোই তার মধ্যে স্পোর্টসম্যানশিপ মানসিকতা ছিল না।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *