April 26, 2024
আঞ্চলিক

একুশ আমার অহংকার

দ: প্রতিবেদক

আজ ৯ই ফেব্রুয়ারি। মহান ভাষা আন্দোলনের মাস ফেব্রুয়ারির নবম দিন। আর মাত্র ১২দিন পর শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করবে বাঙালী জাতি। সারা বিশ্বের বাঙালীরা স্বগৌরবে দিনটি উদযাপন করবে। ১৯৪৭ সাল থেকেই পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের অধিবেশনে এবং পাকিস্তান গণপরিষদের বাংলা বর্ণমালার আরবিকরণ প্রয়াস নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের একটি রূপ ছিল বাংলা ভাষায় আরফি হরফ প্রবর্তনের চেষ্টা। এর প্রধান প্রবক্তা ছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ফজলুর রহমান। নানা বক্তৃতা, বিবৃতি, সভা-সমিতির মাধ্যমে তিনি বাংলা ভাষায় প্রবর্তনের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করে ক্রমাগত এ কথা প্রচার করতে থাকেন যে, পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় সংহতি এবং দুই অংশের জনগনের মধ্যে অর্থপূর্ণ ঐক্য গড়ে তোলা ও সুদৃঢ় করার জন্য পাকিস্তানের সকল ভাষার অক্ষর এক রকম হওয়া উচিত। হরফ পরিবর্তনের এই চক্রান্ত ভালোভাবে দানা বাঁধে ১৯৪৯ সালে। এরপর ১৯৫০ সালের ১৮ই এপ্রিল থেকে কেন্দ্রীয় শিক্ষা দফতরের উদ্যোগে পূর্ববাংলার বিভিন্ন জেলায় ২০টি কেন্দ্রে আরবি হরফে বাংলা ভাষার মাধ্যমে প্রাপ্তবয়স্কদেরকে প্রাথমিক শিক্ষা দেওয়ার কাজ শুরু হয়। একটি সরকারি সূত্র থেকে বলা যায় যে, প্রত্যেক শিক্ষাকেন্দ্রে ২৫ থেকে ৩০জন ছাত্র ঐভাবে শিক্ষাগ্রহণ করতে শুরু করেছে এবং ছয়মাস কাল তারা ঐ কেন্দ্রগুলোতে শিক্ষা লাভে নিযুক্ত থাকবে।

আরবি হরফে বাংলা ভাষা শিক্ষাদানের এই প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে পূর্ববাংলা ভাষা সংস্কার কমিটির ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ১৯৫০ সালের ৪ অক্টোবর একটি বিবৃতি প্রদান করেন। এর আগেই সেপ্টেম্বর মাসে মাওলানা আকরম খাঁর সভাপতিত্বে গঠিত বাংলা ভাষা কমিটি তার এক রিপোর্টে বাংলা ভাষায় আরবি হরফ প্রচলন অন্তত কুড়ি বছর স্থগিত রাখার জন্য সুস্পষ্টভাবে সুপারিশ করেন। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ তাঁর বিবৃতিতে এই সুপারিশের প্রতিও সরকার ও জনসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। কিন্তু এসব সত্তে¡ও বাংলা হরফ পরিবর্তন সম্পর্কিত পাকিস্তান সরকারের চক্রান্ত আরো কিছুদিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। শুধু বাংলা ভাষায় আরবি হরফ প্রবর্তনের মধ্যেই এই ধরনের চক্রান্ত সীমাবদ্ধ থাকে নি। পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা আরবি করার জন্য কোনো কোনো মহলে প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানেও এই প্রস্তাবের পক্ষে বিশেষ কোনো সাড়া না পাওয়ায় না বেশিদূর অগ্রসর হতে পারে নি। কিন্তু এই দাবি ইসলামি সংস্কৃতি বিকাশের প্রশ্নের সাথে জড়িত থাকায় তা পরোক্ষভাবে রাষ্ট্রভাষা উর্দু এবং বাংলা ভাষা আরবি হরফ প্রবর্তনের দাবিকে কতকগুলো মহল জোরদার করে।- (তথ্যসূত্র: বদরউদ্দীন ওমর, ভাষা আন্দোলন, সিরাজুর ইসলাম সম্পাদিত বাংলাদেশের ইতিহাস প্রথম খন্ড)

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *