ঈদের আগেই খুলনার বিনোদন কেন্দ্র খুলে দেওয়ার দাবি
দ. প্রতিবেদক : চার মাস ধরে বাসায় থাকতে থাকতে আমার ছোট মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। করোনার ভয়াল থাবায় মেয়েকে নিয়ে কঠিন সময় পাড় করছি। বাসার মধ্যে কাটছে তার বদ্ধ জীবন। শিশুদের মানসিক বিকাশের জন্য তাদেরকে হাসি খুশিতে রাখা, অন্য শিশুদের সাথে মিশতে দেয়া এবং খেলাধুলা করতে দেয়ার কোন বিকল্প নেই। করোনার কারণে দীর্ঘদিন ধরে সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত শিশুরা।
এ অবস্থা পার্কসহ বিনোদন কেন্দ্রগুলো স্বাস্থ্য বিধি মেনে খুলে দেওয়া উচিত বলে মনে করছেন খুলনা মহানগরীর খালিশপুরের বাসিন্দা মেরাজ হোসেন।
তিনি বলেন, যেহেতু সব কিছুই খুলে দিয়েছে সরকার। সেহেতু পার্কগুলো বন্ধ না রেখে খুলে দিলে শিশুরা মোবাইল ও টিভিতে কার্টুন দেখা থেকে মুক্তি পেতো।
মেরাজের মতো অনেক অভিভাবকই স্কুল বন্ধ থাকা গৃহবন্দী শিশুদের জন্য পার্কসহ বিনোদন কেন্দ্রগুলো খুলে দেওয়ার দাবি জানান।
পার্ক কর্মকর্তারা জানান, অনেক অভিভাবক শিশুর আবদার রাখার জন্য গাড়িতে করে পার্কে এসে সান্ত্বনা স্বরূপ বন্ধ গেট দেখিয়ে নিয়ে যান।
শিশুদের পাশাপাশি করোনা জয় করে সুস্থ হওয়া অনেকেই একটু মানসিক প্রফুল্লতার জন্য পার্ক বা রিসোর্টে যেতে চাচ্ছেন।
এদিকে করোনা সংকটে দীর্ঘ ৪ মাস ধরে বন্ধ থাকা পার্ক ও বিনোদন কেন্দ্রের সাথে জড়িত কর্মকর্তা কর্মচারিরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তাই ঈদুল আযহার আগে পার্ক ও বিনোদন কেন্দ্র খুলে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন এর সাথে সংশ্লিষ্ট সবাই।
পার্ক খুলে দেওয়ার দাবিকে অনেকে খুলনা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছেন। আবার কেউ কেউ খুলনা সিটে মেয়রের কাছে দাবি জানিয়ে স্মারকলিপি দিয়েছেন।
করোনা সতর্কতায় গত ২০ মার্চ থেকে খুলনার পার্কসহ সকল বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীকে লকডাউন, শহরকে রেডজোন ঘোষণা করে সকল ধরনের দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ ঘোষণা করা হয়। শহরের অন্যান্য দোকানপাট, মার্কেট খুলে দেওয়া হলেও এখনও খুলে দেওয়া হয়নি বিনোদন কেন্দ্রগুলো। এর ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত মালিক-শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছে। তাদের জীবিকা রক্ষায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে হলেও ঈদের আগে পার্কগুলো খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
অনেকেই বলছেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন- আমাদের করোনার মধ্যে বসবাস করতে হবে, আবার অর্থনীতির গতিও সচল রাখতে হবে। এ জন্য ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ব্যাংক, বীমা, অফিস-আদালত, গণ পরিবহনসহ সব কিছু স্বাস্থ্যবিধি অনুসারে খুলে দেয়া হয়েছে। তাই আমাদের দাবি ঈদের আগে পার্কগুলো খুলে দেওয়া হউক।
খুলনার বটিয়াঘাটার রানা রিসোর্ট এন্ড এমিউজমেন্ট পার্কের (ওয়ান্ডারফুল কিংডম) প্রধান ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) রনজিৎ রায় বলেন, এমিউজমেন্ট পার্কটিতে রয়েছে ক্যারোসেল, অক্টোপাস রাইড, নাগরদোলা, বাম্পার কার, সেল্ফ কন্ট্রোল্ড প্লেন, ট্রেন, ফ্লাইং কার, জাম্পিং ফ্রগ, লেডি বাগ, মটর রাইড, কেবল কার, সুনামি পুল, ওয়াটার স্লাইড রাইন্ড। দীর্ঘ চার মাস বন্ধ থাকায় এসব রাইডসহ মূল্যবান যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
খুলনা মহানগরীর ওয়ান্ডারল্যান্ড আধুনিক শিশু পার্কের জেনারেল ম্যানেজার মো. গোলাম মোস্তফা কামাল বলেন, ২০ মার্চ হতে শিশু পার্কটি বন্ধ রয়েছে। এর ফলে আমাদের প্রায়৪৫-৫০ জন কর্মচারী মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এ পর্যন্ত আমরা কোন সহযোগীতা বা আর্থিক প্রোণদনাও পাইনি। সরকার বর্তমানে অনেক প্রতিষ্ঠান খুঁলে দিয়েছে। আমরা চাই পার্কগুলো ঈদের আগে খুলে দেওয়া হোক।
তিনি জানান, এ দাবি নিয়ে সম্প্রতি সময়ে দুই বার সিটি মেয়রের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।
খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলেন, পার্ক বা বিনোদন কেন্দ্র খুলে দেওয়ার ব্যাপারে এখনও কোন সরকারি নির্দেশনা আসেনি। নির্দেশনা এলে খুলে দেওয়া হবে।
দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিন/ এম জে এফ