ই-কোয়ালিটি ডাটার ব্যবহার নিশ্চিতে বিশ্বনেতাদের আহ্বান
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে ডিজিটাল সেবা ও সুবিধাবঞ্চিত নাগরিকদের মধ্যে থাকা ব্যবধান কমাতে ই-কোয়ালিটি ডাটা ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনের সাইড-ইভেন্ট হিসেবে অনলাইনে আয়োজিত ‘হার্নেসিং ই-কোয়ালিটি ফর গ্লোবাল প্রসপারিটি’ শীর্ষক এক প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর, জার্মানি ও কেনিয়ার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক এবং সরকারি উদ্যোগের নেতারা এ আহ্বান জানান।
ই-কোয়ালিটিকে ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি বা ডিজিটাল সমতা অর্জনের প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যাতে সামগ্রিকভাবে ন্যায়সঙ্গত উন্নয়নের চূড়ান্ত লক্ষ্য পূরণে অবদান রাখতে পারে। ই-কোয়ালিটি ডাটার ব্যবহারের মাধ্যমেই ভবিষ্যতে সম্ভাব্য ডিজিটাল বিভাজন কমাতে অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল নীতি প্রণয়ন এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে উন্নত সেবা প্রদানে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করা সম্ভব হবে।
জাতিসংঘের ৭৭তম অধিবেশনের সায়েন্স সামিট সেশনে বাংলাদেশ সরকারের এটুআই (একসেস টু ইনফরমেশন প্রোগ্রাম), পিপল সেন্টারড ইন্টারনেট এবং সাউথ-সাউথ নেটওয়ার্ক ফর পাবলিক সার্ভিস ইনোভেশন (এসএসএনফরপিএসআই) যৌথভাবে এর আয়োজন করে। এরই অংশ হিসেবে ‘নেটওয়ার্ক অব রিসাইলেন্ট কমিউনিটিজ : হার্নেসিং ই-কোয়ালিটি ডাটা টু ইমপ্রুভ দ্য প্রোসপারিটি অব গ্লোবাল সিটিজেনস অব দ্য ফিউচার’ শীর্ষক একটি প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম অনলাইনে অনুষ্ঠিত উচ্চপর্যায়ের এ অধিবেশনে উদ্বোধনী ও স্বাগত বক্তব্য দেন এবং সমাপনী বক্তব্য দেন ক্যালিফোর্নিয়ার পিপল সেন্টারড ইন্টারনেটের চেয়ার ও সহপ্রতিষ্ঠাতা মেই লিন ফাং। প্যানেল আলোচনায় ‘ইকোয়ালিটি থ্রো ই-কোয়ালিটি’র ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের বাস্তবায়নাধীন ও ইউএনডিপির সহায়তায় পরিচালিত এটুআইয়ের পলিসি অ্যাডভাইজর আনীর চৌধুরী।
ই-কোয়ালিটি ডাটার ব্যবহারে বৈশ্বিক সহযোগিতা ও অংশীদারিত্বমূলক সম্পর্কের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করে আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম বলেন, ‘ডিজিটাল বিপ্লবের সঙ্গে সঙ্গে আজকের বিশ্বে ডিজিটাল বিভাজন সমাজে বৈষম্য তৈরিতে একটি অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে। তবে সঠিকভাবে পরিচালনা করা হলে ই-কোয়ালিটি নিশ্চিতে ডিজিটাল উন্নয়ন সামগ্রিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করবে।’
তিনি আরও বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ উদ্যোগের সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে বটম-আপ অ্যাপ্রোচে নাগরিকদের সমৃদ্ধি ও সক্ষমতা উন্নয়নে ডিজিটাল প্রযুক্তিকে কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বে নেতৃত্ব দিচ্ছে।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় সাউথ-সাউথ নেটওয়ার্ক ফর পাবলিক সার্ভিস ইনোভেশনের উপদেষ্টা আনীর চৌধুরী ডিজিটাল বিভাজন সম্প্রসারণে প্রভাব রাখতে পারে এমন কিছু বিষয়ে সতর্কতা অনুসরণের পরামর্শ দেন। যার মধ্যে এমন কতগুলো ডিজিটাল সেবা রয়েছে, যেগুলো আগে তেমন গুরুত্ব না পেলেও কোভিড-১৯ এর পরে মানুষের কাছে প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে।
আনীর চৌধুরী আরও বলেন, ডিজিটাল সেবা ও অ্যানালগ সিটিজেনের মধ্যে ব্যবধান কমিয়ে সেতুবন্ধন তৈরির উপর গুরুত্ব দিতে হবে। উপযুক্ত ডিজিটাল অভিগম্যতা নিশ্চিতে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ ও উদ্যোক্তাদের মধ্যে লিঙ্গভিত্তিক সমতা প্রতিষ্ঠা এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
জাতিসংঘের এ বৈশ্বিক ইভেন্টে অংশ নেওয়া প্রধান প্রধান স্টেকহোল্ডার প্রতিষ্ঠান এবং দেশগুলো ডিজিটাল বিভাজনের দূরীকরণের ধারণাটিকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ, পরামর্শক ও উপদেষ্টা গ্রুপের অন্তর্ভুক্তির জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে অংশীদারিত্ব তৈরি, এর সদস্য নির্বাচন ও পরামর্শমূলক সভা আয়োজনে সংশোধিত কৌশল নির্ধারণ এবং সাউথ-সাউথ আউটরীচ ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগের জন্য নেওয়া প্রকল্পগুলোর উপর একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রস্তুত করার বিষয়ে সুপারিশ করেন বক্তারা।
এসময় যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক অ্যাপ্লাইড ফিউচার ল্যাবের প্রযোজনা পরিচালক সিন্ডি কুন প্যানেল আলোচনা সঞ্চালনা করেন। এতে অন্যদের মধ্যে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রের মিশনের প্রতিনিধিরা, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি, সরকারি-বেসরকারি খাত-সংশ্লিষ্ট, একাডেমিয়া, সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন, এটুআই, পিপল সেন্টারড ইন্টারনেট এবং এসএসএনফরপিএসআইয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অনলাইনে যুক্ত ছিলেন।